Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৮ মার্চ, ২০২৫,

‘রাজনৈতিক সংস্কারহীন গতানুগতিক নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না’

চট্টগ্রাম ব্যুরো

চট্টগ্রাম ব্যুরো

ফেব্রুয়ারি ৬, ২০২৫, ০৮:৪৫ পিএম


‘রাজনৈতিক সংস্কারহীন গতানুগতিক নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না’

বাংলাদেশের মতো রাজনৈতিকভাবে বিভাজিত সমাজে সংস্কারের বিষয়ে সকল পক্ষকে জাতীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। জুলাই বিপ্লবের পর যে গণ আকাঙ্ক্ষার জন্ম হয়েছে, তাতে রাজনৈতিক সংস্কারহীন গতানুগতিক নির্বাচন দেশে বা বিদেশে গ্রহণযোগ্য হবে না।

বৃহস্পতিবার ‍‍`সংস্কার, নির্বাচন, সমন্বয়: জাতীয় ঐকমত্যের সন্ধানে‍‍` বিষয়ক আঞ্চলিক সংলাপে বক্তারা এসব কথা বলেন। চট্টগ্রাম সেন্টার ফর রিজিওন্যাল স্টাডিজ, বাংলাদেশ (সিসিআরএসবিডি) ও আইন বিভাগের উদ্যোগে এই সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়।

সাউদার্ন ইউনিভার্সিটির স্থায়ী ক্যাম্পাস বায়েজিদ আরেফিন নগরে আয়োজিত সংলাপে সভাপতিত্ব  করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি ও  সিসিআরএসবিডি‍‍`র নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড. মাহফুজ পারভেজ।

প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থনীতি বিষয়ক শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির সদস্য ও ইউসিএসআই ইউনিভার্সিটির ডেপুটি ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. এ কে এনামুল হক।

গেস্ট অব অনার ছিলেন সাউদার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী চৌধুরী। প্রধান আলোচক ছিলেন সাউদার্ন ইউনিভার্সিটির উপাচার্য (ভারপ্রাপ্ত) ড. শরীফ আশরাফউজ্জামান। বিশেষ অতিথি ছিলেন সাউদার্ন ইউনিভার্সিটির উদ্যোক্তা—প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক সরওয়ার জাহান, বিশেষ আলোচক চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ডিন অধ্যাপক এস এম নছরুল কদির এবং রিসোর্স পারসন ও মডারেটর চবির লোক প্রশাসন বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আমির মুহাম্মদ নসরুল্লাহ।

সংলাপে অধ্যাপক ড. এ কে এনামুল হক বলেন, ঐকমত্যের জন্য একটি প্রক্রিয়ায় যেতে হবে। যেনতেনভাবে সংস্কার করলে হবে না, সংস্কার করতে হবে সাবধানে। এই ব্যাপারে সরকারের উচিত সচেতনতা তৈরি করা। সংস্কারের চিন্তাটা শুধু দেশকে নিয়ে হতে হবে যেখানে দালিলিক প্রমাণের উপর ভিত্তি করে বিতর্ক হবে। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো সবার সাথে সমন্বয় করে তবেই নিবার্চনের আয়োজন  করা। বিগত পতিত সরকারের ২০১৩ ই পর্যন্ত দুর্নীতি কিছুটা কম ছিল তবে ২০১৪ সাল থেকে তা জ্যামিতিক হারে বেড়ে যায়। দুর্নীতি বাড়ার কারণ ছিল অগণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ক্ষমতা গ্রহণ ও জবাবদিহিতা না থাকা। জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে না পারলে সুশাসন কখনো আসবে না। একটি সুন্দর দেশ গঠনে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রয়োজন, তাড়াহুড়া করে স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনা করে টেকসই ও সমতা ভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণ করা সম্ভব নয়।

অধ্যাপক ড. মাহফুজ পারভেজ বলেন, দেশে জুলাই বিপ্লবের পর যে গণআকাঙ্ক্ষার জন্ম হয়েছে, তাতে রাজনৈতিক সংস্কারহীন গতানুগতিক নির্বাচন দেশে বা বিদেশে গ্রহণযোগ্য হবে না। বর্তমানে দেশ ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। রাজনৈতিক দলগুলোর বোঝা উচিত ছাত্রজনতা কি চায়, যদি সংস্কার না করে তাড়াহুড়া করে নির্বাচন আয়োজন করা হয় তাহলে অতীতের মতো স্বৈরতান্ত্রিক সরকারের পুনরাবির্ভাব হবে।

ড. শরীফ আশরাফউজ্জামান বলেন, শুধুমাত্র রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের দিক সংরক্ষণ করতে যেয়ে অপরের স্বার্থ যেন ক্ষুণ্ন না হয় তা খেয়াল রাখতে হবে। সহনশীলতার মাধ্যমে গণতন্ত্র উত্তরণের ভবিষ্যৎ উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাওয়ার এই সুযোগ যেন কোনোমতেই জলাঞ্জলি না হয়। সকল রাজনৈতিক দল ও আন্দোলনে উদ্যোগী সমন্বয়কদের নেতৃত্বে ছাত্র জনতার এই অর্জন যেন বৃথা না যায়। পারস্পরিক বিভেদ ভুলে আন্তরিকভাবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সর্বাত্মক সহযোগিতার মাধ্যমে সঠিক সংস্কারের মাধ্যমে পরিবর্তন পূর্বক ঐকমত্যের ভিত্তিতে নির্বাচনের মাধ্যমে একটি গণতান্ত্রিক সরকার উপহার দিতে পারি।

অধ্যাপক সরওয়ার জাহান বলেন, ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়। ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০২৯ সালে হওয়ার কথা। জুলাই গণ অভ্যুত্থান আমাদের জাতীয় জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য নতুন অধ্যায়। ছাত্র জনতার সম্মিলিত আন্দোলনের মাধ্যমে স্বৈরশাসক ব্যবস্থার কবল থেকে এই দেশ ও প্রায় হাতছাড়া হতে যাওয়া সার্বভৌমত্ব কে ফিরিয়ে আনা জাতি হিসাবে আমাদের এযাবৎ কালের শ্রেষ্ঠ অর্জন। জুলাই ২৪—এ শিক্ষার্থী—জনতার অভ্যুত্থান রাষ্ট্র কাঠামো পুনর্গঠন করার জন্য এক বিরল সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছে।  আশা করি এর মাধ্যমে দেশে রাজনৈতিক, প্রশাসনিক ও প্রাতিষ্ঠানিক অব্যবস্থা ও দুঃশাসন থেকে মুক্ত হয়ে গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার, সহনশীলতা ও বৈষম্যহীনতার পথে এগিয়ে যেতে পারবে।

অধ্যাপক ড. আমির মুহাম্মদ নসরুল্লাহ বলেন, জবাবদিহিতা এবং অধিকার সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য শক্তিশালী গণতন্ত্র অপরিহার্য। সুশাসন, কার্যকর পরিষেবা প্রদান এবং আইনের ন্যায্য প্রয়োগের শর্ত তৈরি করে, যা মানবাধিকার সুরক্ষিত করতে সহায়তা করে। একটি দেশে যেখানে এই নীতিগুলি বহাল থাকে, সেখানে টেকসই উন্নয়ন, স্থিতিশীলতা এবং সমৃদ্ধি আসার সম্ভাবনা বেশি।

ইএইচ

Link copied!