Amar Sangbad
ঢাকা রবিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫,

সাংবাদিকদের উপর হামলা: চারদিন পেরলেও গ্রেপ্তার হয়নি কোন আসামি

আশিকুর রহমান হৃদয়, শরীয়তপুর

আশিকুর রহমান হৃদয়, শরীয়তপুর

ফেব্রুয়ারি ৭, ২০২৫, ০৪:৪৬ পিএম


সাংবাদিকদের উপর হামলা: চারদিন পেরলেও গ্রেপ্তার হয়নি কোন আসামি

শরীয়তপুরের চার সাংবাদিকের উপর হামলার ঘটনায় ৯৬ ঘণ্টা পার হলেও কোন হামলাকারীকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।

এ ঘটনায় প্রশ্ন উঠেছে জেলার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে। আর বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জেলার সচেতন মহল ও গণমাধ্যম কর্মীরা।

ভুক্তভোগী ও পুলিশ সূত্র জানায়, সদর হাসপাতালের এক সংবাদ প্রকাশের জেরে গত সোমবার দুপুরে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে হামলার শিকার হয় দৈনিক সমকাল পত্রিকার সাংবাদিক সোহাগ খান সুজন। হামলাকারীরা হাতুড়ি ও দেশীয় অস্ত্র দিয়ে সুজনকে গুরুতর আহত। এ সময় তাকে বাঁচাতে এলে নিউজ টুয়েন্টিফোর টেলিভিশন ও জাগো নিউজের প্রতিনিধি বিধান মজুমদার অনি, দেশ টিভির সাইফুল ইসলাম আকাশ ও বাংলা টিভির নয়ন দাসের উপর করে চালায় তারা।

পরে সুজনকে গুরুতর আহত অবস্থায় শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। 
থানা সূত্রে জানা যায়, হামলার ঘটনায় সোমবার রাতে ভুক্তভোগী সাংবাদিক সুজন বাদী হয়ে স্থানীয় ক্লিনিক ব্যবসায়ী ও সাংবাদিক পরিচয়দানকারী নুরুজ্জামান শেখ (৪৫), শামিম শেখ (৪০), ইব্রাহিম মোল্লাসহ (৪০) ৭ জনের নাম উল্লেখসহ আরও ৮ থেকে ১০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে পালং মডেল থানায় একটি হত্যাচেষ্টা মামলা দায়ের করেছেন।

হামলার প্রতিবাদ জানিয়ে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারের দাবিতে মঙ্গলবার জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ও বুধবার নড়িয়া উপজেলার সামনে মানববন্ধন করে জেলার সাংবাদিক সংগঠনের নেতা ও কর্মরত সাংবাদিকরা।

হামলার ৪ দিন পার হলেও অভিযুক্তরা এখনো রয়েছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, পুলিশ কার্যকরী পদক্ষেপ না নেওয়ায় এখন পর্যন্ত কোন হামলাকারী গ্রেপ্তার হয়নি। এতে অনেকটাই আশঙ্কায় রয়েছে হামলার শিকার গণমাধ্যমকর্মীরা।

ভুক্তভোগী সমকালের সাংবাদিক সোহাগ খান সুজন বলেন, মামলার পর থেকে অভিযুক্তরা কৌশলে হুমকি ধামকি দিয়ে চলছেন ও বিভিন্ন জায়গায় অপপ্রচার চালাচ্ছেন। তবে দুঃখের বিষয় এখন পর্যন্ত কোনো অপরাধীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করতে পারেনি। আমি আমার পরিবার নিয়ে আশঙ্কায় রয়েছি। অপরাধীরা গ্রেপ্তার না হলে তারা যে কোনো মুহূর্তে আমার ক্ষতি করতে পারে। পুলিশের কাছে একটাই দাবি, দ্রুত অপরাধীদের গ্রেপ্তার করা হোক।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলার আহ্বায়ক ইমরান আল নাজির বলেন, দিনের আলোতে হাতুড়ি দিয়ে যেভাবে সাংবাদিকদের উপর হামলা হয়েছে এটি একটি মব ক্রিয়েটের চেষ্টা। হয়তো হামলায় ওই সাংবাদিক মারাও যেতে পারতেন। আমরা এ ধরনের মবকে সমর্থন করি না। যারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের প্রতি নিন্দা জানাই। আমরা চাই আসামিদের দ্রুততম সময়ের মধ্যে গ্রেপ্তার করা হোক।

বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে জেলার ইলেকট্রনিক মিডিয়া জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন সদস্য সচিব নুরুল আমিন রবিন বলেন, সাংবাদিকদের উপর প্রকাশ্য দিবালোকে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে হাতুড়ি ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা করা হয়। যার ভিডিও ফুটেজ ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বাংলাদেশের প্রায় সব গণমাধ্যমে প্রচার হয়েছে। কিন্তু এ ঘটনায় পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারছে না। অদৃশ্য কোন কারণে তাদের গাফিলতি আছে বলে আমরা মনে করি। আমাদের দাবি আসামিদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনতে হবে নয়তো আমরা জেলার সাংবাদিকরা বড় ধরনের কর্মসূচি দেবো।

এ ব্যাপারে শরীয়তপুর প্রেস ক্লাবের প্রতিষ্ঠাকালীন সম্পাদক মজিবুর রহমান বলেন, শরীয়তপুরের সাংবাদিকদের উপর ঘটে যাওয়া ঘটনায় আমরা উদ্বেগ ও দুঃখ প্রকাশ করছি। বিষয়টি নিয়ে আমাদের পক্ষ থেকে হামলার প্রকৃত কারণ ও ঘটনার বিবরণ জানতে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। আগামী ১০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে তদন্ত কমিটি তাদের প্রতিবেদন জমা দিবে।

জানতে চাইলে পালং মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হেলাল উদ্দিন বলেন, আমরা যথেষ্ট চেষ্টা চালাচ্ছি। আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। আসামির গা ঢাকা দেয়ায় তাদের ধরতে একটু সময় লাগছে।

ইএইচ

Link copied!