Amar Sangbad
ঢাকা রবিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫,

সাংবাদিকসহ আহত অর্ধশত

চরম বিশৃঙ্খলা আর হট্টগোলের মধ্য দিয়ে বরিশালের ট্রফি প্রদর্শনী

আরিফ হোসেন, বরিশাল ব্যুরো

আরিফ হোসেন, বরিশাল ব্যুরো

ফেব্রুয়ারি ৯, ২০২৫, ০৯:৩৮ পিএম


চরম বিশৃঙ্খলা আর হট্টগোলের মধ্য দিয়ে বরিশালের ট্রফি প্রদর্শনী

চরম বিশৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে বরিশাল বেলর্স পার্কে অনুষ্ঠিত হয়েছে বিপিএল চ্যাম্পিয়ান দল ফরচুন বরিশালের ট্রফি প্রদর্শন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কম উপস্থিতি থাকায় নিরাপত্তা বেষ্টনী ভেঙ্গে ফেলা হয়। বিশৃঙ্খলকারীরা নারী দর্শকদের হেনস্তার পাশাপাশি সাংবাদিকদের ট্রাইপট ও বিভিন্ন সরঞ্জামের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আহত হন বেশ কয়েকজন গণমাধ্যম কর্মী সহ অর্ধশত দর্শক। তবে বিশৃঙ্খলার মধ্যেও বিপিএল ট্রফি ও খেলোয়াড়দের দেখতে পেরে খুশি ক্রিকেট প্রেমীরা। দাবী তোলেন আগামীতে বিপিএল খেলা যেন বরিশালের ষ্টোডিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়।

নিরাপত্তা বেষ্টনী ভেঙে উল্লাসের দৃশ্য দেখা গেছে বরিশাল বেলর্স পার্কের বিপিএল চ্যাম্পিয়ান দল ফরচুন বরিশালের ট্রফি প্রদর্শনী অনুষ্ঠানে। চরম বিশৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে পরপর জয়ী ২টি ট্রফিই প্রথমবারের মতো পুরো দল সহ প্রদর্শিত হলো বরিশালে।

কথা ছিল দুপুর আড়াইটায় আসবেন ট্রফি নিয়ে বেলস্ পার্কে। কিন্তু মঞ্চে ট্রফি নিয়ে খোলোয়াররা আসেন তখন ঘড়ির কাটায় চারটা চল্লিশ। প্রিয় খেলোয়াদের দেখার জন্য তরুণদের মধ্যে বেশ উন্মাদনা ছিল। তাই তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসনের সদস্যদের উপস্থিতির মধ্যেই নিরাপত্তা বেষ্টনী ভেঙ্গে মঞ্চের কাছাকাছি চলে আছে দর্শকরা। মুসফিক, তামিম ইকবাল, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ সহ খেলোয়াড়েরা মঞ্চে ওঠার সাথে সাথেই শুরু হয় বিশৃঙ্খলা।

এ সময় বিশৃঙ্খলকারীরা নারী দর্শকদের হেনস্তার পাশাপাশি সাংবাদিকদের ট্রাইপট ও বিভিন্ন সরঞ্জামের ক্ষয়ক্ষতি করে। আহত হন বেশ কয়েকজন গণমাধ্যম কর্মী সহ  অর্ধশত  দর্শক। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দ্রুত মঞ্চ ত্যাগ করেন খেলোয়ার সহ অতিথিরা।

দেখা গেছে, উৎসুক জনতার ভীড়ে কারনে ট্রফি নিয়ে মঞ্চে উঠতে দেরি হওয়ায় ও চ্যাম্পিয়ন ট্রফি নিয়ে ফরচুন বরিশালের অধিনায়ক তামিম ইকবাল মঞ্চে কম সময় দিয়ে মঞ্চ থেকে গাড়িতে উঠার যাওয়ার কারনেই দর্শনার্থীদের মধ্যে হট্টোগোল শুরু হয়। এসময় কিছু উশৃংখলরা চেয়ার ভাংচুর করে মঞ্চে ইট পাটকেল নিক্ষেপ করে। অপরদিকে বাম দিক থেকে মঞ্চের দিকে জুতা ও পানি বোতল ছুড়ে মারেন উৎসুক জনতা। এতে অনেকেই আহত হন।

মঞ্চের অতিথিরা জানান, মঞ্চের সামনের বাসের সীমানা প্রাচীরের সামনে পুলিশের প্রহরা থাকলে এমন ঘটনা ঘটতো না। মিস ম্যানেজমেন্ট কে দায়ী করেন অনেকে।

মাই টিভির বরিশাল ব্যুরো প্রধান পারভেজ রাসেল বলেন, আমার কটলেস বুম ছিনতাই হয়েছে ও ট্রাইপট ভেঙ্গে গেছে। বেশ কয়েকজন নারী দর্শককে বাঁচাতে গিয়ে আমি মারধরের শিকার হই। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে এখন বাসায় আছি। নিরাপত্তা ছাড়া এমন অনুষ্ঠান এর আগে বরিশালে দেখিনি।

বিজয় টিভির প্রতিনিধি আরিফ হোসেন বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কম উপস্থিতি এবং ম্যানেজমেন্টের আয়োজনে ভুল থাকার কারণে বিশৃঙ্খলা হয়েছে। ধাক্কা ধাক্কাকে আমি পায়ে অনেক ব্যথা পেয়েছি। শুধু তাই নয় আমার পাশে থাকা ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের বরিশাল অফিসের রিপোর্টার আমিন জুয়েল ভাই সহ  অনেক শিশু ও গণমাধ্যমকর্মীরা আহত হয়েছি। তবে আল্লাহর রহমতে আমি জীবিত অবস্থায় ফিরে আসতে পেরে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানাই। এছাড়াও বিশৃঙ্খলাকারী যুবকদের কারণে আমার ট্রাইপট সহ অনেক সাংবাদিকদের ট্রাইপট ও বিভিন্ন সরঞ্জামের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

এখন টেলিভিশনের চিত্র সাংবাদিক আমিনুল ইসলাম বলেন, আমার ট্রাইপট ভেঙ্গে গেছে। আমি ও রিপোর্টার অমিত হাসান কোনোমতে নিজেদের রক্ষা করতে পেরেছি। জানি না হয়তো আর একটু হলে মৃত্যু নিশ্চিত ছিলো।

এখন টেলিভিশনের রিপোর্টার অমিত হাসান বলেন, আমি গুরুতর পায়ে ও হাতে আঘাত পেয়েছি। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে এখন বাসায় বিশ্রাম নিচ্ছি। এতো বড় অনুষ্ঠানে এমন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি দুঃখজনক।

দেশ টিভির চিত্র সাংবাদিক শাহীন সুমন বলেন, কোনোমতে জীবন নিয়ে ফিরেছি। আর একটু হলে হাত ভেঙ্গে যেত। নিরাপত্তার বিষয়টি লক্ষ রাখা জরুরি ছিল।

যমুনা টেলিভিশনের বরিশাল ব্যুরো প্রধান কাওছার হোসেন বলেন, আমার ট্রাইপড ও ক্যামেরা সেইভ করতে গিয়ে আমি পড়ে যাই। একটুর জন্য গুরুতর আহত হইনি। নিরাপত্তার বিষয়টি জোরদার করা উচিত ছিল। তবে বিশৃঙ্খলাকারীদের কারনে বুকে অনেক ব্যথা পেয়েছি।

চ্যানেল ২৪ এর ব্যুরো প্রধান কাওছার হোসেন রানা বলেন, আমার ট্রাইপড ভেঙেছে। ক্যামেরা সেইভ করতে গিয়ে আহত হয়েছি। এতো বড় অনুষ্ঠানে নিরাপত্তার বিষয়টি জোরদার করা উচিত ছিল।

তবে বিশৃঙ্খলা ও সমস্যার মধ্যেও বিপিএল ট্রফি ও খেলোয়াড়দের দেখতে পেরে খুশি বরিশালের ক্রিকেট প্রেমীরা। দাবী তোলেন আগামীতে বিপিএল খেলা যেন বরিশালের ষ্টোডিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়।

সাব্বির নামে এক দর্শক জানান, বড় অনুষ্ঠানে কিছুটা বিশৃঙ্খলা হয়েছে। নারী দর্শকদের হেনস্তা করা হয়েছে। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আরও কঠোর হওয়া উচিত ছিলো।

তারেক নামে কে নারী দর্শক জানান, যা হয়েছে সেটা দুঃখজনক। তবে আগামীতে বিপিএল খেলা যেন বরিশালের ষ্টোডিয়ামে অনুষ্ঠিত হয় সেটা দাবি থাকবে।

ফরচুর বরিশাল টিম এর স্বত্বাধিকারী মিজানুর রহমান জানান, জাতীয় টিম,বিদেশী খেলোয়াড় সহ ২২ জন এবং টিম ম্যানেজার,কোচ সহ আরো ৪০ জনের একটি দল বরিশালে আসেন। তবে বিশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা ঘাটতির বিষয়ে জানতে চাইলে ফোন কেটে দেন তিনি। পরে আবারও ফোন দিলে ফোন ধরেননি তিনি।

প্রদর্শনী অনুষ্ঠানে বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার রায়হান কাউসার, জেলা প্রশাসক, ডি আইজি সহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতনা কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে অনুষ্ঠান পণ্ড হয়ে যাওয়ার কারণে পূর্ব নির্ধারিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও বাদ দেয়া হয়।

এতে মাঠে থাকা ভক্তরা চরম ক্ষোভ প্রকাশ করে বাড়ি ফিরে যান।

আরএস

Link copied!