কনৌজ ব্যানার্জী, আজমিরীগঞ্জ (হবিগঞ্জ)
ফেব্রুয়ারি ১০, ২০২৫, ০৬:০৪ পিএম
কনৌজ ব্যানার্জী, আজমিরীগঞ্জ (হবিগঞ্জ)
ফেব্রুয়ারি ১০, ২০২৫, ০৬:০৪ পিএম
হবিগঞ্জ জেলার আজমিরীগঞ্জ উপজেলার জলসূখা আড়াইশ বছরের পুরোনো ১৩ জন জমিদারের বাড়ি একটি আকর্ষণীয় পর্যটন স্পষ্ট হতে পারে। ঐতিহ্যবাহী জলসুখার ১৩ জমিদারের আড়াইশ বছরের পুরোনো একটি জমিদার বাড়ি, বৈঠকখানা ও ঘেটু নাট মন্দির অযত্ন-অবহেলায়, পূর্ণ সংস্কার হলে হতে পারে পর্যটন স্পষ্ট হতে পারে। অযত্নে অবহেলায় পরে থাকার কারণে এখন মাদক সেবি ও জুয়াড়িদের অভয় আরণ্য।
আজমিরীগঞ্জ উপজেলার কুশিয়ারা নদীর উপশাখা কুশিয়ারার কুদালিয়ার নদীর তীরে অবস্থিত। হাওর নদী নালা বেষ্টিত এই গ্রামের প্রাকৃতিক রূপ অপূর্ব সৌন্দর্যে ঘেরা। পূর্ব থেকেই নদী বেষ্টিত এই ছোট গ্রাম ঐতিহ্যবাহী। ১৩ জন জমিদারের গ্রাম জলসুখা। এই গ্রামের জমিদার বাড়ি ও জমিদারদের নিয়ে বাংলাদেশের সুনাম ধন্য লেখক হুমায়ুন আহমেদ গেটোপুত্র কমলা টেলিফিল্মের মাধ্যমে কাহিনি ও চিত্রধারণ করেছে।
বর্তমানে জলসুখার আড়াইশ বছরের পুরোনো ১৩ টি জমিদার বাড়ি বর্তমানে অযত্ন-অবহেলায় পড়ে আছে।
এর মধ্যে কয়েক টি বাড়ি স্থানীয় প্রভাবশালীদের দখল নিয়ে জমিদারদের বংশধরে কাছ থেকে ক্রয় করেছে শুনা যায় । আর বেশ কয়েকটি জমিদারদের বংশধরেরা বিক্রি করেছ দখলদারদের কাছে এবং নতুন ভাবে সংস্কার করে ব্যবহার করছে । এ ছাড়া বাকি বাড়িগুলোর অবস্থা একেবারেই জরাজীর্ণ হওয়ায় এগুলো পরিণত হয়েছে মাদকসেবী ও হবিগঞ্জ জেলার আজমিরীগঞ্জ উপজেলার জলুসখা গ্রামে ছিল ১৩ জন জমিদারের বাস। তাদের মধ্যে ১২ জন জমিদার ছিলেন সনাতন ধর্মাবলম্বী এবং বাকি একজন মুসলিম। ১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষ দ্বিখণ্ডিত হওয়ার পর অধিকাংশ জমিদারই চলে যান ভারতে। তাদের উত্তরসূরিরা ভারত এবং কেউ কেউ বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে বাস করছেন। জলসুখা গ্রামের মুরব্বিদের কাছ থেকে জানা যায় সংরক্ষিত তালিকা অনুযায়ী, জমিদাররা হলেন চন্দ্র কুমার রায়, কৃষ্ণ কুমার রায়, সূর্যমনি রায়, বৈকুণ্ঠ নাথ রায়, শরৎ চন্দ্র রায়, ভারত চন্দ্র রায়, নন্দলাল রায়, গোবিন চন্দ্র রায়, সতীশ কুমার রায়, লক্ষ্ণীকান্ত রায়, ক্ষেত্রনাথ রায়, মাধব চন্দ্র রায়, রমা বলস্নব হালদার ও রমজান আলী চৌধুরী ওরফে বুছা মিয়া চৌধুরী। তারা একেকজন ছিলেন একেক তালস্নুক বা চৌহদ্দির খাজনা আদায়ের দায়িত্বে। সূত্রে আরও জানা যায়
, অধিকাংশ জমিদারই ছিলেন শিক্ষানুরাগী। তাদের মধ্যে জমিদার চন্দ্র কুমার রায় ১৮৭৬ সালে ‘কৃষ্ণ গোবিন্দ উচ্চবিদ্যালয়’ নামে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। যা এর সুনাম এখন ও রয়েছে ।
জলসুখা গ্রামের দক্ষিণ আটপাড়ায় সরজমিনে দেখা যায়, ১৩ জমিদারের মধ্যে বেশি ক্ষমতাধর গোবিন্দ্র চন্দ্র রায়ের বাড়ির জরাজীর্ণ একটি ভবন। আটচালা নামে বৈঠক খানা ও ঘেটু নাট মন্দির।
ভবনটি বর্তমানে একেবারেই অরক্ষিত। সন্ধ্যার পরপরই সেখানে জুয়াড় আসর বসে বলে জানান স্থানীয়রা। তবে বর্তমানে এই বাড়িটির একটি কক্ষে রয়েছে সরকারি ভূমি অফিস। আরেকটি কক্ষে জরাজীর্ণ ভাবে জলসুখার পোস্ট অফিস এটি ও জোয়ারিদের দখলে। এবং বখাটে ছেলেদের আড্ডার আশ্রয় স্থান, আশে পশের নারীরা চলা ফেরা করতে ইবটেজিংয়ের শিকার হয়।
জলসুখা ইউনিয়ন স্থানীয় মুরব্বিরা জানান, জমিদাররা ভারতে চলে যাওয়ার পর কিছু অসাধু লোকের মদদে অনেকেই ভুয়া ওয়ারিশান সদনপত্র তৈরি করে জমি জমার কাগজ নিজের নামে করিয়ে নিয়েছেন। স্থানীয়রা আরও জানান অনেকদিন আগে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এই জমিদার বাড়ি দেখতে ভিড় করতেন পর্যটকরা। কিন্তু কয়েক বছর ধরে এগুলো একেবারেই অরক্ষিত হয়ে গেছে। তাই বাড়িগুলো দেখতে আর কেউ আসেন না। সরকারের পক্ষ থেকে এই জমিদার বাড়িগুলোকে সংরক্ষণ করা হলে আবারও ফিরে পাবে পুরোনো আকর্ষণ। জমিদারদের ব্যবহৃত এই ভবনগুলোকে সংরক্ষণের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় সচেতন মহল ও বিশিষ্টজনেরা মনে করেন জমিদার বাড়ি গুলো সংস্কার করলে আজমিরীগঞ্জের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্রের তালিকায় স্থান পাবে। বিভিন্ন এলাকা লোকজন এসে জলসুখার ঐতিহ্যবাহী জমিদার বাড়ি পরিদর্শন করেন এবং ছবি তোলে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ও দেখা যায়। এই নিয়ে আজমিরীগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা নিবিড় রঞ্জন তালুকদার সঙ্গে মুঠোফোন ফোনে আলাপ করলে তিনি জানান এই বিষয় খোঁজ নিয়ে বলতে হবে।
আরএস