বরিশাল ব্যুরো
ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০২৫, ০৩:১২ পিএম
বরিশাল ব্যুরো
ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০২৫, ০৩:১২ পিএম
বাড়ছে জলাতঙ্ক রোগীর সংখ্যা
বরিশালে এক বছরে আক্রান্ত ২০,২৭৮
কুকুরের কামড়ে ৩,৯০৩
বিড়ালসহ অন্যান্য ১৬,৬৬৫
বরিশালে উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে জলাতঙ্ক রোগীর সংখ্যা। ফলে গোটা দক্ষিণাঞ্চল জুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। যদিও চিকিৎসকদের মতে আতঙ্কিত হওয়ার কোন কারণ নেই। জলাতঙ্ক রোগের চিকিৎসা এখন সরকারিভাবেই হচ্ছে।
চাহিদা অনুযায়ী ভ্যাকসিন না পাওয়ায় বেসরকারিভাবে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে অধিকাংশ রোগীদের। এতে অতিরিক্ত অর্থ ও হয়রানির শিকার হচ্ছেন সাধারণ রোগীরা। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, চাহিদা অনুযায়ী জলাতঙ্ক রোগীর ভ্যাকসিন পাওয়া যাচ্ছে না। আবার পাওয়া গেলেও তা সংরক্ষণ করা দুরূহ হয়ে পড়ছে।
সরকারিভাবে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভাগের ছয়টি জেলা শহর ও ৪২টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জলাতঙ্ক রোগীর চিকিৎসা দেয়া হয়। এছাড়া সিভিল সার্জন অফিসসহ বেসরকারি পর্যায়েও চিকিৎসা নিচ্ছেন জলাতঙ্ক রোগে আক্রান্তরা।
বরিশাল সদর জেনারেল হাসপাতালের তথ্য অনুযায়ী ২০২৪ সালে ২০,১৭৮ জন জলাতঙ্ক রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। ওই বছর প্রতিদিন গড়ে ৫৯ জন রোগী জলাতঙ্ক রোগের ভ্যাকসিন নিয়েছেন।
পরিসংখ্যান বলছে, জলাতঙ্ক রোগে আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে অধিকাংশ বিড়ালের কামড় কিংবা আঁচড়ে আহত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। এমন রোগীদের সংখ্যা ১৬,৬৬৫ জন। সে হিসাবে প্রতিদিন গড়ে ৪৯ জন বিড়ালের কামড়, আঁচড় কিংবা অন্যান্য প্রাণীর কামড়ে আহত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। যদিও চিকিৎসকরা বলছেন, আহতদের মধ্যে ইদুর, চিকা, বাদুর, শিয়ালের কামড়ে আহত রোগীদের সংখ্যা খুবই কম। বিড়ালের কামড়ে কিংবা আঁচড়ে আহতের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।
অপরদিকে, কুকুরের কামড় কিংবা আঁচড়ে আক্রান্ত হয়ে ওই বছর ৩,৯০৩ রোগী জলাতঙ্কের ভ্যাকসিন নিয়েছেন। সেই হিসাবে প্রতিদিন গড়ে ১১ জন কুকুরের কামড় কিংবা আঁচড়ে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন।
চিকিৎসকদের মতে, কুকুর এবং বিড়াল পোষ্য প্রাণী হওয়ায় এর কামড় কিংবা আঁচড়ে আক্রান্ত হচ্ছে অধিকাংশ রোগী। পাশাপাশি জনসাধারণ জলাতঙ্ক রোগ নিয়ে অনেক বেশি সচেতন হওয়ায় সামান্য আচরেও আহত হয়েও নিচ্ছেন ভ্যাকসিন। তাছাড়া এখানে রোগের লক্ষণ ও নমুনা দেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। চিকিৎসাবিদদের মতে, জলাতঙ্ক রোগ নির্ণয়ের সঠিক কোন পদ্ধতি বাংলাদেশে নেই। রোগের লক্ষণ ও নমুনা দেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
পরিসংখ্যান আরও বলছে, জলাতঙ্ক রোগে আক্রান্ত রোগীদের তিনডোজ ভ্যাকসিনের মধ্যে প্রথম ডোজ সকল রোগী নিলেও দ্বিতীয় এবং তৃতীয় ডোজ নেয়ার সংখ্যা তুলনামূলকভাবে অনেক কম। ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসের তথ্য অনুযায়ী, এ মাসে জলাতঙ্ক রোগে আক্রান্ত মোট রোগী ছিল ২,১৭৪ জন। এর মধ্যে ২,১৭৪ জনই প্রথম ডোজ ভ্যাকসিন নিয়েছেন। দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন ১,৭৫৪ জন। আর তৃতীয় ডোজ নিয়েছেন ১,৫২৮ জন। একইভাবে ফেব্রুয়ারি মাসে মোট ১,৭৯৫ জন জলাতঙ্ক রোগীর মধ্যে সকলে প্রথম ডোজ ভ্যাকসিন নিলেও দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন ১,৭৪০ জন। আর তৃতীয় ডোজ নিয়েছেন ১,৫৬৯ জন। এভাবে প্রতি মাসে জলাতঙ্ক রোগে আক্রান্ত এক তৃতীয়াংশ রোগী দ্বিতীয় ও তৃতীয় ডোজ নিচ্ছেন না।
বরিশাল সদর জেনারেল হাসপাতালের আরএমও ডাক্তার মলয় কৃষ্ণ বড়াল বলেন, দিন দিন মানুষ সচেতন হচ্ছেন। তাই পোষ্য প্রাণীর সামান্য আচরেও নিচ্ছেন জলাতঙ্কের ভ্যাকসিন। বরিশালে ২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৪ সালের রোগীর সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ। ভ্যাকসিনের সংকট নেই। তবে সংরক্ষণের যথাযথ ব্যবস্থা না থাকায় সরবরাহ ও বিতরণে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে।
জলাতঙ্কের সবচেয়ে অস্বস্তিকর লক্ষণগুলো অসুস্থতার দুই থেকে তিন দিনব্যাপী তীব্র পর্যায়ে থাকে। রোগীরা বাতাস ও পানিকে ভয় পেয়ে কোনো কাজ করতে পারে না। এই লক্ষণ ‘এরোফোবিয়া’ ও ‘হাইড্রোফোবিয়া’ নামে পরিচিত। আক্রান্ত ব্যক্তিরা আসলে এসব উপাদানকে ভয় পায় না বরং তাঁদের মস্তিষ্ক একটি ভ্রম সৃষ্টি করে বলে জানা গেছে।
ইএইচ