Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫,

ডায়নামিক বন্দর চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান

জুলাই বিপ্লব পরবর্তী জার্নি: চ্যালেঞ্জ ও সফলতা

মামুনুর রশিদ, চট্টগ্রাম ব্যুরো

মামুনুর রশিদ, চট্টগ্রাম ব্যুরো

ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০২৫, ০৪:৪৩ পিএম


জুলাই বিপ্লব পরবর্তী জার্নি: চ্যালেঞ্জ ও সফলতা

২০২৪ সালের ১১ আগস্ট থেকে ২০২৫ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি প্রায় ৬ মাস ২০ দিন দায়িত্ব পালনের তিক্ত জার্নির অভিজ্ঞতা জানালেন চট্টগ্রাম বন্দরের যাবৎকালের সেরা ডায়নামিক চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামান।

এই সফল বন্দর চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামানের জুলাই বিপ্লব পরবর্তী স্টোরির যদি কোন বই লিখা হয় তার নামকরণ দেয়া দরকার চ্যালেঞ্জিং। দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে তাকে প্রতি মুহূর্তে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হয়েছে। এক ঘুটঘুটে অন্ধকার পরিবেশের মধ্যে দায়িত্বে নিয়েছিলেন। সেই ঘুটঘুটে অন্ধকার থেকে ফকফকা আলোতে চট্টগ্রাম বন্দরকে নিয়ে আসেন।

পবিত্র রমজানে পণ্য পরিবহণ ব্যবস্থা ও বন্দরের সার্বিক কার্যক্রম বিষয়ক সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় সভায় বৃহস্পতিবার বেলা ১২টায় চট্টগ্রাম বন্দরের শহিদ ফজলুর রহমান মুন্সি অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিতব্য মতবিনিময় সভায় বন্দর চেয়ারম্যানের লিখিত বক্তব্যে তিক্ত অভিজ্ঞতার চ্যালেঞ্জিংয়ের কথা উঠে আসে।

তার বক্তব্যে শুরুতে জুলাই আন্দোলন ও গণ-অভ্যুত্থানের বীর শহিদদের গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন। কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে পঙ্গুত্ব বরণকারী এবং সকল অংশগ্রহণকারীদের প্রতি।

জেন-জিদের দেশপ্রেম, সাহস, আত্মত্যাগ ও দূরদর্শিতার জন্য সালাম জানান। তার জার্নিটা মোটেই মসৃণ নয়। তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর ইন্টারনেট অব্যাহতভাবে সচল ছিল না। বিপ্লব চলাকালীন সময়ে ইন্টারনেট সচল না থাকা সত্ত্বেও চট্টগ্রাম বন্দর ২৪ সালে সালে রেকর্ড পরিমাণ ৩২ লাখ ৭৫ হাজার ৬২৭ টিইইউএস কন্টেইনার হ্যান্ডলিং করেন। অস্থির পরিস্থিতি ও ভেঙে পড়া সব সিস্টেমের মুহূর্তে ১১ আগস্ট চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যান হিসেবে তাকে দায়িত্ব দেয় সরকার।

এরকম একটি অস্থির সময়ে দায়িত্ব নিয়েই তাকে দুটো বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়। যা মোকাবিলা করা মোটেই সহজ সাধ্য ছিল না। তা হলো অপারেশন ও বন্দরের নিরাপত্তা। কারণ সে সময় দেশে কার্যত পুলিশ বাহিনী ছিল না। বন্দরে পর্যাপ্ত শ্রমিক ছিল না। বন্দর পাহারায় যেসব আনসার ছিল, পরবর্তী সময়ে অন্যান্য আনসারদের সাথে তারাও বিদ্রোহ করেছে। সবকিছু সুষ্ঠুভাবে ম্যানেজ করে বন্দরের অভ্যন্তরে নাশকতা ও চুরি ঠেকানোর চেষ্টা করেন। এক্ষেত্রে নৌবাহিনী, সেনাবাহিনী, কোস্টগার্ড, গোয়েন্দা সংস্থা, বিজিবিসহ যৌথবাহিনীর সদস্যদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা ছিল যা প্রণিধানযোগ্য।

দ্বিতীয় চ্যালেঞ্জ ছিল বন্দরের অপারেশন সচল রাখা। জুলাইয়ের গণ-আন্দোলন, ইন্টারনেট সংক্রান্ত সমস্যা এবং বন্যা পরিস্থিতির কারণে বন্দরের অপারেশন বাধাগ্রস্ত হয়েছিল। এ সময় কার্যত কোনো পণ্য পরিবহণ হয়নি। তা ছাড়া জাহাজের ওয়েটিং টাইম বেড়ে যায় এবং পণ্য খালাস করতে দেরি হয়। চট্টগ্রাম ও ঢাকায় প্রায় পঞ্চাশ হাজার কনটেইনার জমা হয়ে যায়। বন্দরের স্বাভাবিক অপারেশন এবং তার সঙ্গে বাড়তি কনটেইনার হ্যান্ডেল করে স্বাভাবিক পর্যায় নিয়ে আসা কঠিন হয়ে পড়ে। তখন মনে হচ্ছিল এই জট ছাড়িয়ে বন্দরের কার্যক্রমের গতি স্বাভাবিক করতে হয়তো বছর পার হয়ে যাবে। কিছু ক্রিয়েটিভ কাজের মাধ্যমে সেই দীর্ঘজট ছাড়িয়ে মাত্র দুই-তিন মাসের মধ্যে বন্দরের কার্যক্রম স্বাভাবিক গতিতে নিয়ে আসতে পারাটা বড় রকমের অর্জন। এই অর্জনের পেছনে এনবিআর, জেলা প্রশাসন, রেলওয়ে আর বিশেষ করে চট্টগ্রাম বন্দরের সকল স্তরের কর্মকর্তা, কর্মচারী, শ্রমিকসহ সবাই নিজ নিজ অবস্থান থেকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

সম্মিলিত শক্তিটা কাজে লাগানো সম্ভব হয়েছে বলেই অল্প সময়ে সফলতা এসেছে।

আগে জাহাজ বন্দরে আসতে প্রায় আটদিন অপেক্ষা করতে হতো। এখন সরাসরি চলে আসে। বিদেশ থেকে আসা জাহাজকে এখন আর আগের মত বহিঃনোঙ্গরে অপেক্ষা করতে হয় না। বর্তমানে পিয়ারলেস এবং গিয়ার ও ভেসেল সমন্বয় করে শতভাগ ছোট বা বার্গ ব্যবহার করা হচ্ছে যাতে যে কোনো জাহাজ এলে সহজে ভিড়তে পারে। আগে তুলনামূলকভাবে ছোট জাহাজ আসত। একটা জাহাজে ৮শ-১২শ কনটেইনার বহন করত। এখন আমরা আমদানীকারকদেরকে সিসি অ্যাগ্রিমেন্টের মাধ্যমে ম্যাক্সিমাম ক্যাপাসিটির জাহাজ আনতে উদ্বুদ্ধ করি। ফলে বড় জাহাজে অনেক বেশি কার্গো আসে। এজন্য জাহাজের সংখ্যা কমছে, ক্যাপাসিটি বেড়েছে। খরচ কমেছে, ব্যবস্থাপনায় পেয়েছে গতি।

প্রায় শতভাগ শৃঙ্খলা ফিরে পেয়েছে। ভেতরে অনেক কনটেইনার দীর্ঘদিন যাবৎ পড়ে ছিল, সেগুলো অপসারণ করা হয়েছে। চারটি ট্যাংকারে মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ কেমিক্যাল দাহ্য পদার্থ আইনি জটিলতায় দীর্ঘদিন পড়ে ছিল, যেগুলো যে কোনো সময় বিস্ফোরণ হতে পারত। এটা দ্রুততম সময়ে সরিয়ে ফেলি। অল্প সময়ে এটা অকশনের মাধ্যমে সরকার রাজস্ব পায়।

বন্দর এখন বিপদজ্জনক কার্গো থেকে ঝুঁকিমুক্ত। ১২০টি রিফার কনটেইনার (শিপিং কনটেইনার) প্রায় ৯ মাস ধরে প্রাগ-ইন ছিল। এগুলোর মাধ্যমে মাংস এবং ফলমূল বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়েছিল। দীর্ঘদিন পড়ে থাকার ফলে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। এগুলো ডিসপোজ করা কঠিন ছিল।

পাশাপাশি পরিবেশের ছাড়পত্রের ব্যাপার ছিল। জেলা প্রশাসনের সহায়তায় সেগুলো ডিসপোজ করি। এজন্য বিদেশে মেইন লাইন অপারেটররা আমাদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন। এ ধরনের কাজ বিগত ১০-১৫ বছরে হয়নি। সেটা ৩-৪ মাসের মধ্যে করতে পেরেছি। যা আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে প্রশংসিত হয়েছে।

কন্টেইনার অপসারণের ফলে বন্দরের ভেতরে জায়গা বেড়েছে। আগে জায়গায় সংকুলান হতো না। তাই এফিসিয়েন্সিঅনেক কমে যেত। এখন সমন্বয়ের ফলে শৃঙ্খলা ফিরেছে, হ্যান্ডলিং ফার্স্ট হয়েছে। বন্দরের কার্যক্রম নিয়ে ফুল অটোমেশনে যাব, এবং মেরিটাইম পোর্ট সিঙ্গেল উইন্ডো ঢালু প্রক্রিয়াধীন আছে। এগুলো করার ফলে কাস্টমসে কন্টেইনার হ্যান্ডেলিংয়ে আগে যেখানে লাগত ছয়-সাত দিন এখন তা তিন-চার দিনে হয়ে যাচ্ছে। কনটেইনার হ্যান্ডেলিং স্পিড এসেছে। জেনারেল কার্গোর অতীতের রেকর্ড ভাঙতে সক্ষম হয়েছি। প্রায় ১২৯ মিলিয়ন মেট্রিক টন জেনারেল কার্গো হ্যান্ডেলিং করেছি।

গত সরকারের আমলে বন্দর নানা সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি ছিল। সিন্ডিকেট ভাঙতে সফল হন। যার ফলে খরচ উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। ২৪ সালে চট্টগ্রাম বন্দর অতীতের সকল রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ সংখ্যক কন্টেইনার, কার্গো হ্যান্ডলিং করতে সক্ষম হয়েছে।

২০২৪ সালে (১ জানুয়ারি ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত) চট্টগ্রাম বন্দরে ৩.২৭ মিলিয়নটিইইউএস (৩২,৭৫,৬২৭ টিইইউস) কন্টেইনার, ১২৩ মিলিয়ন মেট্রিক টন (১২,৩৯,৮৬,০১৪ মে. টন) কার্গো ও ৩৮৬৭টি জাহাজহ্যান্ডলিং হয়েছে। ২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে কন্টেইনার হ্যান্ডলিং এ ৭.৪২% ও কার্গো হ্যান্ডলিং এ ৩.১১% প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। বে-টার্মিনাল চট্টগ্রাম বন্দরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের হ্যান্ডলিংক্ষমতা প্রায় ৩ গুণ বৃদ্ধি পাবে এবং চট্টগ্রাম শহর যানজট মুক্ত হবে। প্রকল্পটি মোট ৫টি অংশ রয়েছে।

অংশগুলো যথাক্রমে- কন্টেইনার টার্মিনাল-১, কন্টেইনার টার্মিনাল-২, মাল্টি পারপাস টার্মিনাল, ব্রেক ওয়াটার ও অ্যাকসেস চ্যানেল নির্মাণ, অন্যান্য (আনুষঙ্গিক স্থাপনা, রাস্তা, ড্রেইনেজ, সার্ভিস জেটি ইত্যাদি নির্মাণ। এগুলোর মধ্যে ব্রেক ওয়াটার, অ্যাকসেস চ্যানেল এবং‍‍`আনুষাংগিক কাজগুলো সম্বলিত একটি ডিপিপি ইতোমধ্যে অনুমোদনের জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে। অনুমোদিত হলে বিশ্বব্যাংকের সাথে লোন চুক্তিকনার টার্মিনাল-১ ও ২ এর সম্ভাব্য অপারেটরদের নিকট আরএফপি প্রেরণের জন্য ট্রানজেকশন অ্যাডভাইজার কাজ করছে।

মাতারবাড়ী প্রকল্পটি ৩টি প্যাকেজে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।  প্রকল্পের অতিগুরত্বপূর্ণ Package-1(Civil Works) এর CCGP এর অনুমোদনের অপেক্ষায় ছিল। বন্দরের বর্তমান ব্যবস্থাপনার উদ্যোগে গত ১৫ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি  তারিখে তা CCGP তে অনুমোদিত হয়েছে।আশা করা করা যায় ঠিকাদারের সাথে চুক্তি সম্পাদন পূর্বক সহসা নির্মাণ কার্যক্রম শুরু হবে। হেডী লিফট জেটি ও বন্দর ব্যবহারকারীগণের দীর্ঘদিনের চাহিদার প্রেক্ষিতে হেডী লিফট জেটি নির্মাণের জন্য প্রণীত ডিপিপি গত ২২ সালের ৪ অক্টোবর তারিখে অনুমোদিত হয়। প্রকল্পটির বাস্তবায়ন করার জন্য লালদিয়া-৫ এলাকাকে বেডি লিফট জেটির জন্য নির্ধারণ করা হয়। প্রকল্পের স্থান পরিবর্তন হওয়ায় ডিপিপি সংশোধন হয়েছে সহসা এটি মন্ত্রণালয় কর্তৃক অনুমোদিত হলে জেটি নির্মাণ কাজ শুরু হবে।অফডক ও ডেডিকেটেড শেড নির্মাণ এলাকায় পরিপূর্ণ অফডক নির্মাণের কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে। এছাড়া এফ শেড এবং পার্শ্ববর্তী এলাকা সম্পূর্ণ রিনোভেট করে কেইপিজেডকে তাদের তৈরীকৃত পণ্য রপ্তানীকরণ প্রক্রিয়াকরণের জন্য হস্তান্তরের প্রক্রিয়া গ্রহণ করা হয়েছে।কেমিকেল শেড চট্টগ্রাম বন্দরে আগত কেমিক্যালস আইএমডিজি কোড অনুযায়ী সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে বন্দর জেটি১ নং গেইট সংলগ্ন জায়গায় ২৩ হাজার বর্গফুট ফ্লোর এরিয়া বিশিষ্ট দ্বিতল আধুনিক কেমিক্যালকে নির্মাণ করা হয়।

শেডটিতে আধুনিক ফায়ার ফাইটিং সিস্টেম সহ তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে কেমিক্যাল ক্লাসিফিকেশন অনুযায়ী আলাদা ভাবে কেমিক্যাল সংরক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে।

অকশন প্রক্রিয়া দ্রুতকরণে কাস্টমসের সহায়তায় বন্দরের অভ্যন্তরে রক্ষিত অনেক দিনের পুরোনো গাড়ির অকশন দ্রুত সম্পন্ন করা হচ্ছে। এছাড়া কাস্টমস গোলায় রক্ষিত দীর্ঘ দিনের পুরোনো স্ক্র্যাপ ডেলিভারি দেওয়া বা অকশনকরা সম্ভব হচ্ছে। এতে বন্দরের গুরুত্বপূর্ণ স্পেস খালি হয়ে যাওয়ায় বন্দরের রাজস্ব আদায়ের পথ সুগম হয়েছে।

যাবতীয় অকশন কার্যক্রম দ্রুততার সহিত সম্পন্ন করার জন্য নৌ পরিবহণ উপদেষ্টা মহোদয় ও এনবিআর চেয়ারম্যানের নির্দেশ মোতাবেক ইতিমধ্যে প্রায় ১শ জন কাস্টমস কর্মকর্তাকে মালামাল ইনভেন্ট্রি ও ডেলিভারি কাজে নিয়োগ করা হয়েছে। আরএসজিটির অপারেশনাল কার্যক্রম শুরুকরণে অনেক সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও আরএসজিটি, অপারেশন কার্যক্রম শুরু করেছে। বর্তমানে শুধুমাত্র এক্সপোর্ট হ্যান্ডলিং করা হচ্ছে।

স্ক্যানার বসানোর কার্যক্রম সম্পন্ন হলে আমদানি কার্যক্রম শুরু হবে। পোর্ট সিঙ্গেল উইনডো। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ও শুল্ক কর্তৃপক্ষের সমন্বয়ে পোর্ট সিঙ্গেল উইনডো চালু হচ্ছে। এতে স্টেক হোল্ডারদের সেবা প্রাপ্তি সহজতর হবে।

ফাইভ জি চালুকরণে বন্দরের অটোমেশন কার্যক্রম দ্রুততার সাথে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে দ্রুতগতি সম্পন্ন ইন্টারনেটের প্রয়োজন। এ লক্ষ্যে বন্দরে ফাইভ জি কার্যক্রম চালুর ব্যাপারে সার্ভে করা হচ্ছে। সহসাই ফাইভজি কার্যক্রম চালু হবে।

ই-পেমেন্টের এইসবিসি ও ইবিএল ব্যাংকের মাধ্যমে পেমেন্ট সিস্টেম অনলাইন করার কার্যক্রম চালু করার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন আছে।

পানগাঁও আইসিটি আধুনিকায়ন ও ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে নদীপথে পণ্য পরিবহণ যৌক্তিকীকরণ করার কার্যক্রম অব্যাহত আছে। এতে রোড ও রেল এর উপর চাপ কমবে। নৌপথে পণ্যপরিবহন এর ফলে সাশ্রয়ী মূল্যে পণ্য আমদানি রপ্তানির পথ সুগম হবে।

ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণ: লালদিয়াতে ১টি ও বে-টার্মিনালে ৪টি ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণ করা হচ্ছে। টার্মিনাল চালু হলে প্রায় পাঁচ সহস্রাধিক ট্রাক পার্কিং করা সম্ভব হবে, এতে রাস্তার যানজট উল্লেখযোগ্য হারে কমে আসবে।

বিদ্যমান অফডক কমিটি নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। নতুন অফডক সৃষ্টির জন্য উৎসাহিত করা হচ্ছে। সব ধরনের আমদানিপণ্য ডেলিভারির লক্ষ্যে অফডকে প্রেরণের অনুমতি প্রদানের জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে প্রস্তাব প্রেরণকরা হয়েছে।স্টোর রেন্ট যৌক্তিকীকরণ করা হচ্ছে যাতে আমদানিকারকগণ মালামাল বন্দর এফেলে না রাখে।

এ ব্যাপারে মন্ত্রণালয়ে রেন্ট যৌক্তিকীকরণ এর বিষয়ে সুপারিশ প্রেরণ করা হয়েছে। বন্দরের আইন ও বিধিবিধান সমূহ যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে যথাযথ কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে। চবক আইন ২২ প্রণীত হয়েছে। এই আইনের আলোকে চবক কর্মচারী প্রবিধানমালা হালনাগাদ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।এরই প্রেক্ষিতে চবক কর্মচারী প্রবিধানমালা হালনাগাদ

সংশোধনের জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে কমিটির কয়েকটি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। তফশিল সংশোধনের লক্ষ্যে চবক এর বিভাগীয় প্রধান হতে মতামত চাওয়া হয়েছে। তাদের বিভাগ সম্পর্কিত মতামত সমূহ পর্যালোচনা করা হবে এবং চূড়ান্ত সংশোধন করতে সম্পাদন করা হবে।

বাংলাদেশের প্রকৃত আমদানি রপ্তানির উপর ভিত্তি করে ভবিষ্যৎ কার্গো ও কন্টেইনারহ্যান্ডলিং এর প্রক্ষেপণ করার মাধ্যমে বন্দর ও ও টার্মিনালের প্রয়োজনীয়তা নির্ধারণ করার লক্ষ্যে সরকার কর্তৃক ন্যাশনাল পোর্ট স্ট্রেইজি প্রণয়ন করা হচ্ছে। ওয়ান স্টপ সার্ভিস দ্রুততম সময়ে ডকুমেন্টেশন কার্যক্রম সম্পন্ন করার জন্য আগামী জুন ২৫ নাগাদ চালু হবে।ওয়ান স্টপ সার্ভিস।

লালদিয়া টার্মিনাল নির্মাণে লালদিয়া-১ এ  এপিএম টার্মিনালস কর্তৃক পিপিপি-জিটুজি তে বাস্তবায়নাধীন কন্টেইনার টার্মিনাল প্রকল্পটির ট্রান্জিকশন অ্যাডভাইজার আইএফসি ইতোমধ্যে ইনসপেকশন রিপোর্ট দাখিল করা হয়েছে। রিপোর্টের টাইম লাইন অনুযায়ী আগামী অক্টোবর নাগাদ সমস্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে এপিএম টার্মিনালস এর সাথে চুক্তি সাক্ষর করা সম্ভব হবে।রাজস্ব ও ট্যারিফ হালনাগাদ পুনঃনির্ধারণে চট্টগ্রাম বন্দরের রাজস্ব আয়ের প্রায় ৮৫ শতাংশ আয় হয় জাহাজ এবং মালামাল হ্যান্ডলিং খাত হতে।দক্ষ প্রশিক্ষিত জনবল তৈরীকরণে বন্দর পরিচালনার জন্য বিদেশি অপারেটর আগ্রহ প্রকাশ করেছে। বিদেশি অপারেটর নিয়োগের পর পর্যাপ্ত ট্রেনিং এর ব্যবস্থা করার জন্য একটি আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন ট্রেনিং সেন্টার নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়নে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।

চট্টগ্রাম নগরের বাসিন্দাদের দুর্ভোগ লাঘবে জলাবদ্ধতা নিরসনের লক্ষ্যে কর্ণফুলী নদীতে যে সকল খালসমূহ পতিত হয়েছে সে সকল খালের নদী সংযোগস্থলে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ কর্তৃক ড্রেজিং কার্যক্রম পুরোদমে চলমান রয়েছে। নগরবাসী অচিরেই জলাবদ্ধতার হাত থেকে মুক্তি পাবে।ইতোমধ্যেই কর্ণফুলী তৃতীয় সেতু সংলগ্ন নবসৃষ্ট বিশাল চর চবক কর্তৃক ডেজিংয়ের ফলে মাটি অপসারণের মাধ্যমে নদীর নাব্যতা ফিরে পেয়েছে। কর্ণফুলী নদীর সদরঘাট হতে বাকলিয়ার চর পর্যন্ত বর্জ্য অপসারণ এবং ডেক্সিং এর মাধ্যমে নাব্যতা বৃদ্ধি শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ইতোমধ্যে ৪৭ লক্ষ ঘনমিটার ক্যাপিটাল ড্রেজিং সম্পন্ন হয়েছে।বর্তমানে সংরক্ষণ ড্রেজিং কার্যক্রম চলমান রয়েছে এবং প্রায় ৮.৫ লক্ষ ঘনমিটার সংরক্ষণ ড্রেজিং সম্পন্ন হয়ছে। প্রকল্পটি আগামী জুন, ২০২৫এ সমাপ্ত হবে। ১১ আগস্ট পরবর্তী হতে ৭৮ ক্যাটাগরিতে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষে মোট ৬২৪টি শূন্যপদে পদোন্নতি প্রদান করা হয়েছে। তন্মধ্যে ২০ ক্যাটাগরির পদে ৩২ জন কর্মকর্তা এবং ৫৮ ক্যাটাগরির মোট ৫৯২টিশূন্য পদে কর্মচারীকে পদোন্নতি প্রদান করা হয়েছে। একই সাথে এত বিপুল সংখ্যক কর্মকর্তা/ কর্মচারীকে পদোন্নতি প্রদানে এটা রেকর্ড।চট্টগ্রাম বন্দরের কর্মকর্তা ও  কর্মচারীদের সুবিধার্থে সুইমিং কমপ্লেক্স নীতিমালা অনুমোদন করা হয়েছে। বন্দর কর্মকর্তা কর্মচারীরা ও তাঁদের পোষ্যগণ সুইমিং কমপ্লেক্স ব্যবহার করে সাঁতার প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে পারবে যা শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য বিকাশে সহায়ক হবে| চট্টগ্রাম বন্দরের কর্মকর্তাও কর্মচারীদের গৃহ নির্মাণ করার জন্য গৃহ নির্মাণ ঋণনীতিমালা মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে। যা প্রক্রিয়াধীন আছে এবং ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলচালু করার লক্ষ্যে টেন্ডার প্রক্রিয়া চলমান আছে।এছাড়া

খেলাধুলার মাঠ তৈরি, সংস্কার ও টার্ফ তৈরি হচ্ছে। যা কোমলমতি শিশু, কিশোর, শিশু, বৃদ্ধদের শারীরিক ও মানসিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে। শ্রমিক কল্যাণের জন্য ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে ৯ হাজার টাকা করে বিশেষ উৎসাহ বোনাস প্রদান করা হয়েছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের ১৫ হাজার টাকা করে আর্থিক সাহায্য প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।

সেপ্টেম্বর ২০২৪ মাসে অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিকদের ওয়ারিশগণের মধ্যে থেকে যাচাইবাছাই করে ৪৪৩ জনকে শ্রমিক হিসেবে নিয়োগ প্রদান করা হয়ছে।

এছাড়াও চট্টগ্রাম বন্দরে কর্মরত শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি প্রাপ্তি, চিকিৎসা সেবা প্রদান, পর্যাপ্ত নিরাপত্তা সামগ্রী প্রদান সহ শ্রমিকদের অন্যান্য সকল মৌলিক সুযোগ সুবিধা প্রাপ্তি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নিয়মিতভাবে মনিটরিং করা হচ্ছে। নিয়মিতভাবে মনিটরিং এর কারণে চবক জেটিতে শ্রমদূর্ঘটনা হ্রাস পেয়ে প্রায় শূণ্যের কোঠায় নেমে এসেছে।

শ্রমিকদের কল্যাণমূলক কার্যক্রম ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে এবং শ্রমিকদের যাবতীয় সুযোগে সুবিধা প্রাপ্তি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ডিজিটাল ডেটাবেইজ প্রণয়ণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার দিক-নির্দেশনায়, মাননীয় নৌপরিবহণ উপদেষ্টার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে এবং নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয়ের সার্বিক সমন্বয়ের মাধ্যমে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশের সমুদ্র পথে বহিঃবাণিজ্য সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা চট্টগ্রাম বন্দরকে জবাবদিহিমূলক, কল্যাণমূলক এবং অধিকতর ব্যবহারবান্ধব করার লক্ষ্যে সকল কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছি। এপ্রেক্ষিতে যেসকল ক্ষেত্রে সংস্কার প্রয়োজন সেসকল ক্ষেত্রে আমরা সংস্কার কার্যক্রম গ্রহণ করছি।সভায় চট্টগ্রাম বন্দর মেম্বার ও বন্দর মুখপাত্র সচিব ওমর ফারুকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।

ইএইচ

Link copied!