Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ০১ মার্চ, ২০২৫,

দারিদ্র্য বিমোচনে চর বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দাবি

সাইফুল ইসলাম, কুড়িগ্রাম

সাইফুল ইসলাম, কুড়িগ্রাম

মার্চ ১, ২০২৫, ০৩:৩৬ পিএম


দারিদ্র্য বিমোচনে চর বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দাবি

উত্তর জনপদের জেলা কুড়িগ্রামের মানুষ দীর্ঘদিন ধরে আর্থ-সামাজিক বৈষম্যের শিকার। ফলে দেশের সবচেয়ে দারিদ্র্যপীড়িত জেলার তকমা পেয়েছে কুড়িগ্রাম। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যমতে, জেলায় দারিদ্র্যের হার ৭০ দশমিক ৮ শতাংশ।

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) বলছে, জেলায় অতিদরিদ্রদের হার ৫৩ দশমিক ২ শতাংশ। এর অন্যতম কারণ হলো নদীভাঙন এবং চরে বসবাসকারী মানুষের অনিশ্চিত জীবনযাপন। এ পরিপ্রেক্ষিতে এসডিজির (টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য) বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে উন্নয়নবঞ্চিত চরাঞ্চলের জন্য পৃথক চর বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দাবি উঠেছে তৃণমূল পর্যায় থেকে। সম্প্রতি কুড়িগ্রামে অনুষ্ঠিত এক নাগরিক সংলাপে জোরালোভাবে এ দাবি জানানো হয়েছে, যা আয়োজন করে কুড়িগ্রাম জেলা চর উন্নয়ন কমিটি।

চর উন্নয়ন কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক শফিকুল ইসলাম বেবু বলেন, কুড়িগ্রামের জনসংখ্যা প্রায় ২৪ লাখ। জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তিস্তা, দুধকুমার, ফুলকুমারসহ ১৬টি নদ-নদী। এগুলোর অববাহিকায় সাড়ে চার শতাধিক চর রয়েছে, যেখানে প্রায় সাড়ে ৮০০ বর্গকিলোমিটার এলাকায় সাড়ে ৫ লাখ মানুষ বসবাস করে। এসব চরের মানুষের প্রধান আয়ের উৎস কৃষি।

ভৌগোলিকভাবে নদী ও চরবেষ্টিত জেলা হওয়ায় অন্যান্য জেলার তুলনায় কুড়িগ্রামের সমস্যা অনেকটা ভিন্ন। স্বাধীনতার পর থেকে চরের উন্নয়নে অনেক এনজিও কাজ করলেও টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত হয়নি। যাতায়াত, স্বাস্থ্য, শিক্ষা—সব দিক থেকেই তারা পিছিয়ে।

বাল্যবিবাহ, অপুষ্টি ও প্রতিবন্ধিতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে জেলায় ৯১ হাজার ৬৭২ জন প্রতিবন্ধী রয়েছে। দরিদ্র সূচকে দেশের সর্বোচ্চ অবস্থানে থাকা এই জেলার জন্য পৃথক মন্ত্রণালয় গঠনের বিকল্প নেই। পাহাড়িদের জন্য আলাদা মন্ত্রণালয় থাকতে পারলে দেশের পশ্চাৎপদ চরাঞ্চলের মানুষের জন্য কেন নয়?
নদীভাঙন ও বন্যার ভয়াবহতা

সূত্র জানায়, কুড়িগ্রামের মধ্য দিয়ে ভারতের প্রায় ১৪টি নদী বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে, এছাড়াও দুটি আন্তঃসীমান্ত নদী রয়েছে। বাংলাদেশের ৭০ শতাংশ পানি বহনকারী ব্রহ্মপুত্র নদও কুড়িগ্রাম হয়ে প্রবেশ করেছে।

নদী দিয়ে বেষ্টিত হওয়ায় জেলার প্রায় সব উপজেলায় প্রতি বছর ৩-৪ বার বন্যা হয়। এ বছর জেলার ৪১টি ইউনিয়নের দুই শতাধিক গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়েছিল, দুর্যোগকবলিত মানুষের সংখ্যা ছিল প্রায় ৬৫ হাজার। কিন্তু ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যক্রম প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।

নদীভাঙন কুড়িগ্রামের আরেকটি ভয়াবহ সমস্যা। প্রতি বছর ব্রহ্মপুত্র ও তিস্তার তীরবর্তী এলাকায় তীব্র ভাঙনের ফলে শত শত মানুষ ভূমিহীন হয়ে পড়ে। সম্প্রতি ৯টি উপজেলার প্রায় ২ হাজার পরিবার নদীভাঙনের শিকার হয়েছে। একটি স্বচ্ছল পরিবারও এক রাতের মধ্যে সহায়-সম্বলহীন হয়ে পড়ে।

শিক্ষা ও সামাজিক সমস্যা

ইউনিসেফের তথ্য অনুযায়ী, দেশে ১৮ বছরের কম বয়সী মেয়েদের বিয়ের হার ৬৬ শতাংশ। কিন্তু কুড়িগ্রামে এই হার ৭৮ শতাংশ। পরিবারের আর্থসামাজিক দুরবস্থাই এর প্রধান কারণ।

জেলায় মোট প্রতিবন্ধীর সংখ্যা ৯১ হাজার ৬৭২ জন। প্রতিবন্ধিতার হার ৩ দশমিক ৯৩ শতাংশ, যা জাতীয় গড় ২ দশমিক ১৪ শতাংশের চেয়ে বেশি। বাল্যবিবাহ, পুষ্টিহীনতা, প্রসবকালীন চিকিৎসার অভাব, চরাঞ্চলের অপ্রতুল স্বাস্থ্যসেবা—এসব কারণ প্রতিবন্ধিতার হার বাড়িয়ে তুলছে।

কুড়িগ্রামের ১ হাজার ২৪০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ১৬৯টি চরাঞ্চলে অবস্থিত। কিন্তু চরাঞ্চলে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা অত্যন্ত কম। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান না থাকায় সবচেয়ে বেশি শিক্ষাবঞ্চিত শিশুর সংখ্যা ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার দুর্গম চরাঞ্চলে।

চরাঞ্চলের ৫০ শতাংশ শিক্ষার্থী প্রাথমিক বিদ্যালয় শেষ করতে পারে না। প্রতিটি চরে অন্তত একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্থাপন প্রয়োজন।
প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া

কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক নুসরাত সুলতানা বলেন, "চরের মানুষের জীবনমান উন্নয়নে সরকার বদ্ধপরিকর। পৃথক চর বিষয়ক মন্ত্রণালয় গঠনের বিষয়ে ইতোমধ্যে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।"

ইএইচ

Link copied!