অভয়নগর (যশোর) প্রতিনিধি
মার্চ ১, ২০২৫, ০৯:৫০ পিএম
অভয়নগর (যশোর) প্রতিনিধি
মার্চ ১, ২০২৫, ০৯:৫০ পিএম
যশোরের অভয়নগর উপজেলার নওয়াপাড়া নৌবন্দর নাব্যতা সংকট, সরু চ্যানেল এবং অন্যান্য নানা কারণে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। দেশের দক্ষিণাঞ্চলের সবচেয়ে বড় ও ব্যস্ততম এ নদীবন্দরে গেল দেড় বছরে ১৫টিরও বেশি পণ্যবাহী জাহাজ ডুবে গেছে। নওয়াপাড়া নৌবন্দরের দৈর্ঘ্য মুজতখালী থেকে আফরাঘাট পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার।
পণ্যবাহী জাহাজের মালিক, শ্রমিক এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানায়, নিয়মিত খনন না করার কারণে নৌবন্দরের ভৈরব নদে নাব্যতা সংকট দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। নদী দখলের কারণে ভৈরব নদ সরু হয়ে গেছে। অদক্ষ মাস্টাররা অনেক সময় মূল চ্যানেলের বাইরে এসে নদের কিনারায় জাহাজ নোঙর করেন। অতিরিক্ত ওজনের চাপ সহ্য করতে না পেরে পুরোনো জাহাজের তলা ফেটে পানিতে তলিয়ে যায়।
গত ৯ ফেব্রুয়ারি শুভরাড়া এলাকায় ৮৫০ টন ইউরিয়া সারবোঝাই এমভি সেভেন সিজ-৪ নামের একটি কার্গো জাহাজ তলা ফেটে ডুবে যায়। জাহাজের মাস্টার জুয়েল হোসেন বলেন, "জাহাজ থেকে ইউরিয়া নামানোর সময় ভাটায় জাহাজের তলদেশের সঙ্গে মাটিতে থাকা পাথর কিংবা শক্ত কোনো বস্তুর সজোরে আঘাত লাগে। এতে তলদেশ ফেটে জোয়ারের সময় জাহাজটি ধীরে ধীরে তলিয়ে যায়।"
এর আগে ২৫ জানুয়ারি সিদ্দিপাশায় গমবোঝাই এমভি ওয়েস্টার্ন-২ কার্গো জাহাজ কাত হয়ে ডুবে যায়, যেখানে প্রায় ৭০০ টন গম ছিল। এছাড়া, গত ১৫ ডিসেম্বর ৮২০ টন কয়লা নিয়ে এমভি আর রাজ্জাক, ১৩ এপ্রিল ৬৮৫ টন কয়লা নিয়ে এমভি সাকিব বিভা-২, ১৫ জানুয়ারি প্রায় ৮০০ টন কয়লাবাহী এমভি পূর্বাঞ্চল-৭ এবং ১৩ জানুয়ারি ৭০০ টন কয়লা নিয়ে এমভি মৌমনি-১ কার্গো জাহাজ তলা ফেটে ডুবে যায়।
জাহাজের শ্রমিক রহমান মোল্যা জানান, ভৈরব নদে আগের তুলনায় জাহাজের সংখ্যা বাড়লেও নোঙর করার জায়গা কমে গেছে। পানি কম থাকায় দুর্ভোগে পড়তে হয়। নওয়াপাড়া নদীবন্দর সচল এবং নিরাপদ রাখতে নিয়মিত নদী খনন এবং নিরাপদ জেটি নির্মাণের দাবি তারা দীর্ঘদিন ধরে জানিয়ে আসছেন।
বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের নওয়াপাড়া শাখার সদস্যসচিব নিয়ামুল ইসলাম রিকো বলেন, "নওয়াপাড়ায় ভৈরব নদের নাব্যতা সংকট প্রকট। নদী দখল হয়ে যাওয়ার কারণে এটি সরু হয়ে গেছে। খননকাজ সুষমভাবে বা ধারাবাহিকভাবে করা হয় না, যার ফলে ঘন ঘন জাহাজ ডুবছে।"
এ বিষয়ে নওয়াপাড়া নদীবন্দরের উপপরিচালক মো. মাসুদ পারভেজ বলেন, "সব নদ-নদীতে নাব্যতা সংকট রয়েছে এবং ভৈরব নদে ড্রেজিং কাজ চলছে। মূলত অদক্ষ মাস্টাররা নিয়ম না মেনে জাহাজগুলো মূল চ্যানেলের বাইরে এসে নদের কিনারায় নোঙর করেন। এ ছাড়া পুরোনো জাহাজের তলদেশ নিয়মিত ডকিং বা মেরামত না করায় অতিরিক্ত পণ্যের চাপে এসব জাহাজ দুর্ঘটনায় পড়ছে।"
ইএইচ