গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী) প্রতিনিধি
মার্চ ৫, ২০২৫, ০৫:৩৯ পিএম
গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী) প্রতিনিধি
মার্চ ৫, ২০২৫, ০৫:৩৯ পিএম
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার বিভিন্ন চরাঞ্চলে দিনদিন বেড়ে চলেছে তামাক চাষ। অধিক মুনাফার আশায় কৃষকরা ঝুঁকছেন এই তামাক চাষে, যার ফলে প্রতিবছর তামাক চাষের পরিমাণ বেড়েই চলেছে। কৃষকরা দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্যঝুঁকি সত্ত্বেও বহুজাতিক কোম্পানির অর্থায়ন ও প্রলোভনে তামাক চাষে যুক্ত হচ্ছেন।
তামাক চাষে ব্যবহৃত বিভিন্ন ক্ষতিকর সার ও রাসায়নিক পদার্থের কারণে চাষিদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে এবং জমির উর্বরতা কমে যাচ্ছে। এর ফলে গোয়ালন্দে শাকসবজি, ধান, ভুট্টা, গমসহ অন্যান্য ফসলের আবাদ কমে যাচ্ছে।
গোয়ালন্দ উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সূত্রে জানা যায়, গোয়ালন্দ উপজেলার একটি পৌরসভা ও চারটি ইউনিয়নে ২০২২-২৩ অর্থবছরে ২ হেক্টর, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৩ হেক্টর এবং ২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রায় ৩ হেক্টর আবাদি জমিতে বিষাক্ত তামাক চাষ করা হয়েছে। অর্থাৎ প্রতি বছরই তামাক চাষের পরিমাণ বেড়েই চলেছে। বিশেষ করে উজানচর ইউনিয়নের চর কর্ণেশন এলাকায় সবচেয়ে বেশি জমিতে তামাক চাষ হচ্ছে। এছাড়া উপজেলার বিভিন্ন চর এলাকায়ও কৃষকরা তামাক চাষে ঝুঁকছেন।
জানা যায়, জাপান টোব্যাকো কোম্পানি লিমিটেড, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো কোম্পানি লিমিটেড, আবুল খায়ের টোব্যাকো কোম্পানি এবং অন্যান্য বিড়ি, সিগারেট ও জর্দা তৈরির প্রতিষ্ঠানগুলো নিজস্ব প্রতিনিধির মাধ্যমে কৃষকদের তামাক চাষে উদ্বুদ্ধ করছে। অভিযোগ রয়েছে, সরকারি তদারকি না থাকায় কৃষকরা সহজেই এসব কোম্পানির প্রলোভনে পড়ে তামাক চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।
স্থানীয় তামাক চাষি আবুল শেখ বলেন, “জমিতে খাদ্যশস্য, মুড়িকাঁটা, পেয়াঁজ, টমেটো ও শাকসবজি রোপণ করে লাভবান হতে পারিনি। তাই ক্ষতিকর জেনেও লোকসান কমাতে তামাক চাষ করছি।”
আরেক চাষি বাদশা মোল্লা জানান, “কোম্পানি থেকে আমাদের বীজ, সার, কীটনাশক, ত্রিপলসহ উৎপাদনের যাবতীয় সামগ্রী সরবরাহ করা হয়। তারা তামাক পাতা কিনে নেয়, এতে আমাদের বিনিয়োগ কম হলেও লাভ বেশি।”
গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মো. শরিফ ইসলাম বলেন, "দীর্ঘদিন তামাক চাষে যুক্ত থাকলে শরীরে নিউরো-টক্সিক প্রভাব পড়ে। এছাড়া অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ (COPD), যার মধ্যে এমফাইসিমা ও ক্রনিক ব্রংকাইটিস অন্তর্ভুক্ত, এবং ক্যান্সারের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়ে তোলে। তামাক উচ্চ রক্তচাপ ও প্রান্তীয় রক্তনালীর রোগের কারণও হতে পারে। তাই তামাক চাষ রোধে কঠোর আইন প্রয়োগ জরুরি।"
গোয়ালন্দ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. খোকন উজ্জামান জানান, “তামাক চাষের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে কৃষকদের সচেতন করতে মাঠ পর্যায়ে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। তামাকের ক্ষতিকর দিক নিয়ে কৃষি উপসহকারীরা নিয়মিত মাঠে কাজ করছে।”
ইএইচ