Amar Sangbad
ঢাকা মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ, ২০২৫,

নাগরপুরে কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে গরু দিয়ে হালচাষ

নাগরপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি

নাগরপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি

মার্চ ১৭, ২০২৫, ০২:২১ পিএম


নাগরপুরে কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে গরু দিয়ে হালচাষ

কালের পরিবর্তনের সাথে সাথে টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলার গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী গরু দিয়ে হালচাষ দ্রুত বিলীন হয়ে যাচ্ছে।

কোকিল ডাকা ভোরে কৃষকরা লাঙ্গল-জোয়াল কাঁধে, মুখে পল্লীগীতি-ভাটিয়ালা গেয়ে মাঠে বেরিয়ে যেতেন জমি চাষ করতে। ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত জমিতে লাঙ্গল দিয়ে হালচাষ, ভাটিয়ালি-পল্লীগীতি গানের মধুর সুর মাঠ, হাট ও ঘাটকে মুখরিত করে রাখত।

কৃষাণীরা সকালের নাস্তা হিসেবে পান্তাভাত, আলুবর্তা, ডাল, পিঁয়াজ ও কাঁচা মরিচ নিয়ে যেতেন এবং দুপুরে গরম ভাত খেতেন। এমনই ছিল গ্রামের চিরচেনা দৃশ্য, যা এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে।

সময়ের পরিবর্তনের সাথে মানুষের জীবনধারা ও প্রযুক্তির অগ্রগতির কারণে এ ঐতিহ্যও হারিয়ে যেতে বসেছে। এখন কৃষিতে আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার বেড়ে গেছে, ফলে গরু দিয়ে হালচাষ করার দৃশ্য আর চোখে পড়ে না। কৃষকরা এখন ট্রাক্টর বা পাওয়ার টিলার দিয়ে অল্প সময়ে জমি চাষ করেন।

নাগরপুর উপজেলার গয়হাটা ইউনিয়নের কলিয়া গ্রামে কৃষক হালিম মিয়া (৪০) এখনও গরু দিয়ে হালচাষ করেন।

তিনি বলেন, "বাপ-দাদারাও গরু দিয়ে হালচাষ করতেন, তাদের দেখেই আমি তা অনুসরণ করছি। গরু দিয়ে হালচাষ করলে ফলন ভালো হয়, পোকা আক্রমণ করে না এবং ধানও বেশি হয়। গরুর গোবর জমিতে পড়লে তা জৈব সার হিসেবে কাজ করে। গত বছর গরু দিয়ে হালচাষ করেছিলাম, ফলন ভালো হয়েছিল। এবছর ট্রাক্টর দিয়ে সরিষা আবাদ করেছিলাম, কিন্তু পোকায় তা নষ্ট হয়ে গেছে। আমাদের জন্য গরু দিয়ে হালচাষই উত্তম।"

একই এলাকার কৃষক জয়েন উদ্দীন বলেন, "২৫ বছর ধরে গরু দিয়ে হালচাষ করছি। গরু দিয়ে হালচাষ করলে ধানের ফলন ভালো হয়, ধান বড় হয় এবং চিটা পড়ে না। প্রতি শতাংশ জমি চাষ করতে আমি ১৫ টাকা নিই।"

এ বিষয়ে বেশ কয়েকজন প্রবীণ কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গরুর লাঙ্গল দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ৪৪ শতাংশ জমি চাষ করা সম্ভব। আধুনিক যন্ত্রপাতির তুলনায় গরুর লাঙ্গল জমিকে গভীরভাবে চাষ করতে সক্ষম এবং জমির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি হয়। এতে সার ও কীটনাশকের খরচও কমে যায়। যদিও এটি কষ্টসাধ্য, তবে গরু দিয়ে হালচাষ করার সময় কৃষকদের মধ্যে এক ধরনের সন্তুষ্টি ও ঐতিহ্যের অনুভূতি ছিল। এখন মনে পড়ে, সেই পুরনো দিনগুলোর কথা, যা ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে।

এভাবে, সময়ের সাথে সাথে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যও অক্ষুণ্ণ থাকতে পারছে না।

ইএইচ

Link copied!