মামুনুর রশিদ, চট্টগ্রাম ব্যুরো
মার্চ ২০, ২০২৫, ০৮:১৬ পিএম
মামুনুর রশিদ, চট্টগ্রাম ব্যুরো
মার্চ ২০, ২০২৫, ০৮:১৬ পিএম
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক জনসংযোগ কর্মকর্তা (পিআরও) ও বাংলাদেশ বেতার চট্টগ্রাম কেন্দ্রের বর্তমান উপ-আঞ্চলিক পরিচালক মো. শরীফ মাহমুদকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার দুপুর ২টার দিকে চট্টগ্রামের ডবলমুরিং থানার আগ্রাবাদ শেখ মুজিব সড়কের বাংলাদেশ বেতার ভবনে নিজ কার্যালয়ে তাকে অবরুদ্ধ করেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে জড়িত শিক্ষার্থীরা। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তাকে হেফাজতে নেয়।
ডবলমুরিং থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কাজী রফিকুল ইসলাম বলেন, "বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশ বেতার চট্টগ্রাম কেন্দ্রের উপ-আঞ্চলিক পরিচালককে আটকে রেখেছে বলে জানতে পারি। খবর পেয়ে আমরা সেখানে পুলিশ পাঠাই। যেহেতু তিনি একজন সরকারি কর্মকর্তা, এ বিষয়ে বাংলাদেশ বেতার কর্তৃপক্ষ জেলা প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করছে।"
শিক্ষার্থীদের দাবি, গত বছরের ৪ আগস্ট তার স্বাক্ষরিত একটি চিঠির মাধ্যমে দেশে কারফিউ জারি করা হয়েছিল। এ কারণেই তারা তাকে আটক করতে চায়।
তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা রয়েছে কি না জানতে চাইলে ওসি বলেন, "দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তার বিরুদ্ধে একটি মামলা করেছে। আমরা দুদকের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তদন্ত চলমান থাকায় তাকে আটক দেখানো হবে কি না, সে বিষয়ে তারা সিদ্ধান্ত নেবে। আপাতত তাকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে এবং ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনার অপেক্ষায় আছি।"
চলতি বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) মো. শরীফ মাহমুদের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করে। মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, তিনি ৫৮ লাখ ৯৯ হাজার ৯৯৭ টাকা জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন। দুদকের অনুসন্ধানে এ তথ্য পাওয়ায় তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ও দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের সংশ্লিষ্ট ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধের অভিযোগ আনা হয়।
অভিযোগ রয়েছে, তিনি সরকারি দায়িত্ব পালনকালে অবৈধ উপায়ে বিপুল সম্পদ গড়ে তুলেছেন। রাজধানীর বসুন্ধরা, উত্তরা ও গুলশানে তার একাধিক দোকান ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। পাশাপাশি ব্যাংককের পাতায়ায় একটি রেস্টুরেন্ট গড়ে তোলারও তথ্য পাওয়া গেছে। তার ও তার স্ত্রীর নামে ব্যাংক হিসাবে বিপুল পরিমাণ অর্থের লেনদেনের অভিযোগ রয়েছে।
আরও অভিযোগ রয়েছে, পুলিশের এসপি, ওসি ও এসআই পদে বদলি করিয়ে দেওয়া এবং ব্যবসায়ীদের অস্ত্রের লাইসেন্স পাইয়ে দেওয়ার বিনিময়ে মোটা অঙ্কের অর্থ গ্রহণ করেছেন তিনি। এর মধ্যে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের জন্য ১৫-২০ লাখ টাকা পর্যন্ত নেওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। এসব লেনদেনের একটি বড় অংশ মন্ত্রীর পরিবারের সদস্যদের কাছে পৌঁছানো হতো বলেও অভিযোগ রয়েছে।
এ বিষয়ে মো. শরীফ মাহমুদ অপু বলেন, "আমি তো স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর জনসংযোগ কর্মকর্তা ছিলাম না, আমি ছিলাম স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা। মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব অনুযায়ী কাজ করেছি। যে-ই সেখানে থাকত, তাকেই এ দায়িত্ব পালন করতে হতো।"
উল্লেখ্য, মো. শরীফ মাহমুদ অপু কুমিল্লা জেলার বুড়িচং উপজেলার পূর্ণমতি গ্রামের ইঞ্জিনিয়ার জয়নাল আবেদিনের ছেলে। তার বাবা কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও বুড়িচং সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান। তিনি দীর্ঘ এক দশক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করেছেন।
ইএইচ