Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৮ মার্চ, ২০২৫,

মাদারীপুরে অবৈধ ইটভাটাগুলো প্রকাশ্যে কাঠ পুড়িয়ে তৈরি হচ্ছে ইট

জাহিদ হাসান, মাদারীপুর

জাহিদ হাসান, মাদারীপুর

মার্চ ২২, ২০২৫, ০৫:১২ পিএম


মাদারীপুরে অবৈধ ইটভাটাগুলো প্রকাশ্যে কাঠ পুড়িয়ে তৈরি হচ্ছে ইট

সারা দেশে সব অবৈধ ইটভাটা চার সপ্তাহের মধ্যে গুঁড়িয়ে দিতে বিভাগীয় কমিশনার ও ডিসিদের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ ২৪ ফেব্রুয়ারি সোমবার এ আদেশ দেন।

আদেশে বলা হয়, ড্রাম চিমনি ও ফিক্সড চিমনি এবং ইটভাটার বর্তমান মেয়াদ পর্যন্ত লাইসেন্স এবং পরিবেশ ছাড়পত্র না থাকলে তা অবৈধ হিসেবে বিবেচিত হবে। আদালত আরো উল্লেখ করেন, যে পদ্ধতিতে ইটভাটা পরিচালনা করা হোক না কেন, লাইসেন্স না থাকলেই সেটা অবৈধ। আদেশে অপসারণ ও ধ্বংস করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

এই নির্দেশ পাওয়ার পর দেশের বিভিন্ন জেলায় অবৈধ ইটভাটা মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে গুড়িয়ে দেয় জেলা প্রশাসন। কিন্তু মাদারীপুর জেলার চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন।

পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, এই জেলার ৭৬টি ইটভাটা রয়েছে, এর মধ্যে অর্ধেক পরিমাণ ইটভাটাই অবৈধ। এই অবৈধ ইটভাটাগুলো বহাল তবিয়তে প্রকাশ্যে কাঠ পুড়িয়ে ইট তৈরি করছে। মোটা অর্থের বিনিময়ে প্রশাসনকে ম্যানেজ করে এই ইটভাটাগুলো চলছে বলে জেলাজুড়ে গুঞ্জন রয়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, জেলার বিভিন্ন এলাকায় অধিকাংশ ইটভাটায় কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। কোন রাগঢাক না করে ইটভাটায় অবৈধ স্ব-মিল বসিয়ে বড় বড় গাছ কেটে কাঠ করা হচ্ছে এবং সেই কাঠ পুড়িয়ে তৈরি হচ্ছে ইট। জেলার অধিকাংশ ইটভাটা অবৈধ হলেও কোথাও ইটভাটা গুড়িয়ে দেয়ার বা বন্ধ করে দেয়ার দৃশ্য চোখে পড়েনি। সদর উপজেলার রূপরাইয়া এলাকায় অবস্থিত চৌধুরী ব্রিকসের মতো কিছু ভাটায় কাঠ পোড়ানোর সুযোগ নেই। কয়লার পরিবর্তে প্লাস্টিক ও টায়ারের গুড়া পুড়িয়ে ইট তৈরি করা হচ্ছে, যা পরিবেশের উপর মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে।

মাদারীপুর জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক এস এম শরিফুল ইসলাম জানান, মাদারীপুরে তাদের নতুন অফিস রয়েছে এবং তারা নিয়মিত অবৈধ ইটভাটায় অভিযান পরিচালনা করছেন। এ পর্যন্ত প্রায় ২০টি ইটভাটাকে ৩৫ লাখ টাকার মতো জরিমানা করা হয়েছে। তবে ইটভাটায় প্লাস্টিক ও টায়ারের গুড়া পোড়ানোর বিষয়টি তাদের নজরে আসেনি।

ইটভাটাগুলোর আশেপাশের অনেক বাসিন্দা জানান, তারা ভাটা মালিকদের ভয়ে কথা বলতে সাহস পান না। অনেক বাসিন্দা বলেন, ইটভাটাগুলো ফসলি জমির মাটি কেটে নিচ্ছে এবং তাদের জমিতে ফসল ভাল হচ্ছে না। এমনকি তারা বিভিন্ন অসুখ-বিসুখেও ভুগছেন। কেউ যদি ইটভাটার বিরুদ্ধে কিছু বলতে যান, তাহলে তাদের বিভিন্ন ক্ষতি করার চেষ্টা করা হয়।

সিনিয়র আইনজীবী আবুল হাসান সোহেল বলেন, আদালতের নির্দেশ যথাযথভাবে পালন করতে হয়। যদি কোন নাগরিক বা প্রতিষ্ঠান আদালতের নির্দেশ না মানে, তবে সেটা আদালত অবমাননার শামিল হবে। উচ্চ আদালত জেলা প্রশাসক মহোদয়দের অবৈধ ইটভাটা বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছেন, এবং তারা সে নির্দেশ মোতাবেক কাজ করবেন।

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মোছা. ইয়াসমিন আক্তারের কাছে জানতে চাইলে, তিনি প্রথমে কিছু ইটভাটা বন্ধ করার কথা বলেন, তবে কোন কোন ইটভাটা বন্ধ হয়েছে জানতে চাইলে তিনি তা বলতে পারেননি। তিনি জানান, কিছু ইটভাটায় পানি দিয়ে ভিজিয়ে বন্ধ করা হয়েছে, কিন্তু ইটভাটা বন্ধ বা গুড়িয়ে না দেওয়া প্রশ্নে তিনি এড়িয়ে যান।

অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট শাহ্ মো. সজীব বলেন, আমরা কয়েকটি ইটভাটা পানি দিয়ে বন্ধ করেছি, তবে সেগুলো আবার চালু করেছে কিনা, সে বিষয়ে তারা ফলোআপ করেননি। ইটভাটা বন্ধ বা গুড়িয়ে দেয়ার জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির অভাব রয়েছে এবং এই প্রতিবন্ধকতা সম্পর্কিত প্রতিবেদন বিভাগীয় কমিশনারের কাছে পাঠানো হয়েছে।

ইএইচ

Link copied!