Amar Sangbad
ঢাকা বুধবার, ২৬ মার্চ, ২০২৫,

চট্টগ্রাম ফিশারি ঘাট

আওয়ামী লীগ নেতা আলী কুলি থেকে কোটিপতি

মামুনুর রশিদ, চট্টগ্রাম

মামুনুর রশিদ, চট্টগ্রাম

মার্চ ২৫, ২০২৫, ০৪:৫৯ পিএম


আওয়ামী লীগ নেতা আলী কুলি থেকে কোটিপতি

চট্টগ্রামের অবৈধ মাছ বাজার উচ্ছেদ প্রসঙ্গে স্থানীয়দের দাবি ও গণমাধ্যমে ফলাও প্রচার হওয়ার পরেও দৃশ্যমান কোন পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না। এই অবৈধ ফিশারি ঘাট দখলে রেখেছেন আওয়ামী লীগের একটি সিন্ডিকেট।

এটির নেতৃত্বে রয়েছে মোহাম্মদ আলী। এই আ.লীগ নেতা কুলি থেকে কোটিপতি হয়েছেন। তার কোটিপতির নেপথ্যে অবৈধ পথ রয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সে টাকা দিয়ে রাজনৈতিক নেতা থেকে প্রশাসন ও সাংবাদিক ঘায়েল করার চেষ্টায় থাকেন। এবার তার বিরুদ্ধে অভিযোগ পড়েছে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক)।

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, মাছ ব্যবসায়ীদের সংগঠন সোনালি যান্ত্রিক মৎস্য শিল্প সমবায় সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ আলী। আওয়ামী স্বৈরাচারী সরকারের পতনের আগে তিনি ছিলেন আওয়ামী মৎস্যজীবী লীগ নেতা। চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিনের সাথে ছিল তার বিশেষ সখ্যতা। আওয়ামী লীগের দলীয় প্রভাব কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন অপকর্মের সাথে জড়িত ছিলেন তিনি। এরমধ্যে রয়েছে ফিশারি ঘাটে যেসব বোট ভিড়ত, সে সব বোটের চালকদের থেকে আদায় করতেন চাঁদা। চাঁদা না দিলে বোট থেকে থেকে মাছ নামাতে দিতেন না।

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দোসররা পালিয়ে গেলেও রহস্যজনক কারণে এখনো ফিশারি ঘাট মাছ বাজারের নিয়ন্ত্রণ করছেন মোহাম্মদ আলী। উল্টো আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পরদিন অর্থাৎ ৬ আগস্ট নতুন রূপে হাজির হয়েছেন এই মোহাম্মদ আলী।

স্থানীয় বিএনপি নেতাদের টাকা দিয়ে ম্যানেজ করে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি এবং চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের বর্তমান মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেনের সাথে একাধিকবার সাক্ষাৎ করে বিএনপি সাজার চেষ্টা করেছেন। একইসাথে মাছ বাজারে তিনি বৈষম্যের শিকার হয়েছেন এমন মুখরোচক গল্পও সাজান। 

এছাড়াও এই ফিশারি ঘাটে তার একটি টর্চার সেল রয়েছে। কোনো দূরদূরান্ত থেকে পাইকারী মাছ ব্যবসায়ীরা তার কাছ থেকে ২০ মণ মাছ কিনতে আসলে তাকে জোর করে ১০০ মণ মাছ দিয়ে দেয়। যদি কোনো ব্যবসায়ী লোকসানের কারণে টাকা দিতে না পারে, তবে তাকে ডেকে এনে টর্চার সেলে মারধর করতেন। এমনকি একসাথে ২০-২৫ জন পাইকারকে ডেকে এনে তিনি তাদের মারধর করেছেন।

এই মোহাম্মদ আলীর পুরো জীবনটাই প্রতারণাময়। এক সময় চট্টগ্রাম রেলস্টেশন থেকে রিয়াজুদ্দিন বাজার পর্যন্ত পানের কুলির কাজ করতেন। পরবর্তীতে পার্টনারে দেন পানের দোকান। পানের দোকানে পার্টনারের টাকা মারার পর কিছুদিন আত্মগোপনে চলে যান।

পরবর্তীতে নগরীর রিয়াজুদ্দিন বাজারে যোগেশ বাবু নামের একজনের মাছের আড়তে কর্মচারী হিসেবে চাকরি নেন। সেখানে টাকা মেরে প্রতারণার মাধ্যমেপুরো মাছের আড়ত নিজের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেন।

এছাড়া এক সময় এরশাদ সরকারের আমলে করতেন নিষিদ্ধ ব্যাঙের ব্যবসা। সেই সময় তাকে সবাই ব্যাঙ মোহাম্মদ আলী নামে ডাকতো। ব্যাঙের ব্যবসাতেও পার্টির সাথে করতেন প্রতারণা। ভারত থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে ব্যাঙ আনার পথে ব্যাঙ পুলিশ ধরেছে তাই সব ব্যাঙ পানিতে ফেলে দিয়েছে এমন নাটক সাজাতো। অথচ সব ব্যাঙ বিক্রি মোটা অঙ্কের অর্থ আত্মসাৎ করতেন তিনি।

পরবর্তীতে ফিশারি ঘাটে শুরু করেন মাছের ব্যবসা। এখানেও শুরু করেন প্রতারণা। মায়ানমার থেকে এক মহিলার কাছ থেকে মাছ কিনতেন মোহাম্মদ আলী। এক সময় মহিলার কাছে প্রচুর পরিমাণ টাকা বকেয়া হয়ে যায়। পরে ফাঁদে ফেলে ওই মহিলাকে চট্টগ্রামে এনে বিয়েও করে তিনি। অবশ্যই এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। ছাড়াছাড়ির পরে ব্যবসার পাওনা টাকা সংক্রান্ত মামলা করেন ওই মহিলা। 

এরমধ্যে মায়ানমারের মহিলার কাজের মেয়েকে বিয়ে করেন মোহাম্মদ আলী। ওই মহিলাকে বর্তমানে নগরীর আমবাগান এলাকায় দুই তলা বিল্ডিং নির্মাণ করে রেখেছেন। এই মোহাম্মদ আলী জীবনে অসংখ্য প্রতারণার মাধ্যমে গড়ে তুলেছেন কোটি কোটি টাকার সম্পদ।

চট্টগ্রাম শহরে তার নামে রয়েছে ১২টি বহুতল ভবন, মার্কেট এবং নামে বেনামে জমি। এরমধ্যে ডবলমুরিং থানার পাঠানটুলি মতিয়ারপুরে ৭৬৮ নম্বর হোল্ডিয়ের আহসান উল্লাহ বাড়ির নবম তলা ভবনে তিনি বসবাস করছেন। ব্যবহার করছেন বিলাসবহুল জিপ গাড়ি।

সামান্য একজন পানের কুলি দিয়ে জীবন শুরু করা মোহাম্মদ আলির কোটি কোটি অর্থ সম্পদ বনে যাওয়াটা আলাদীনের চেরাগ পাওয়ার মতো বিষয়। তাই তার ও তার পরিবারের সদস্যদের আয় ব্যয়ের সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ সম্পদ অর্জনের তদন্ত হওয়া জরুরি।

ইএইচ

Link copied!