জাহিদ হাসান, মাদারীপুর
এপ্রিল ১৫, ২০২৫, ০৭:১৬ পিএম
জাহিদ হাসান, মাদারীপুর
এপ্রিল ১৫, ২০২৫, ০৭:১৬ পিএম
ওঠো দাদা, দাদা একটু কথা কও, আমার কাছে আসো। ৮০ বছরের বৃদ্ধের এই আর্তনাদে কাঁদছে পুরে গ্রাম। সবাই তাকিয়ে আছে মাটিতে শোয়ানো আড়াই বছরের শিশু ইমতিয়াজের নিথর দেহের দিকে। পাগলপ্রায় বৃদ্ধ দাদাকে সান্ত্বনা দেয়ার ভাষাও যেন সবাই হারিয়ে ফেলেছে। হাসি খুশি চঞ্চল শিশু ইমতিয়াজকে নিয়ে পরকীয়া প্রেমিকের সাথে দুই মাস আগে পালিয়ে যায় মা শারমিন আক্তার। দুই মাস পর ইমতিয়াজের নিথর দেহ নিয়ে শ্বশুর বাড়ি আসে শারমিন। ইমতিয়াজের মৃত দেহ দেখে এমনই এক হৃদয় বিদারক পরিবেশের সৃষ্টি হয় মাদারীপুর সদর উপজেলার খোয়াজপুর ইউনিয়নের বেপারীকান্দি গ্রামে।
পুলিশ ও পরিবার সূত্রে জানা যায়, জেলার সদর উপজেলার খোয়াজপুরের বেপারীকান্দি গ্রামের বাসিন্দা দবির ব্যাপারী। বিয়ে করেছেন একই ইউনিয়নের মঠের বাজার চৌকিদার বাড়ির সিরাজ চৌকিদারের মেয়ে শারমিন আক্তারকে। ৫ বছরের ছামি ও আড়াই বছরের ইমতিয়াজ দুই ছেলেকে নিয়ে ভালই চলছিল তাদের সংসার। দুই বছর আগে সন্তানদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে ও স্ত্রী সন্তানকে সচ্ছল রাখার জন্য পাড়ি দেন মালয়েশিয়া। কঠোর পরিশ্রম করে বাড়িতে স্ত্রী সন্তান ও বাবা মায়ের জন্য প্রতি মাসে টাকা পাঠাতেন। তা দিয়ে ভালই চলছিল শারমিনের সংসার। ৬/৮ মাস আগে শারমিনের ভাইকে বিদেশ পাঠানোর জন্য স্থানীয় দালাল আমির বেপারীর সাথে যোগাযোগ করেন। তাকে ভাইর পাসপোর্ট ও বেশ কিছু টাকা দেয় শারমিন। আমির সম্পর্কে শারমিনের চাচা শ্বশুর হয়। ভাইয়ের বিষয়ে কথা বলতে বলতে বিবাহিত আমিরের সাথে পরকীয়ায় জড়িয়ে পরে শারমিন। শ্বশুর বাড়ির পরিবারের লোকেরা বাধা দিলে তিনি ভাইকে বিদেশে পাঠানোর জন্য আমিরের সাথে কথা বলেন এবং এ ব্যাপারে কোন কথা বলতে নিষেধ করে দেয়। ধীরে ধীরে বেপরোয়াভাবে আমিরের সাথে মাদারীপুর ঘুরে বেড়ায়। এমনকি মাঝে মাঝে ডাক্তার দেখানোর কথা বলে ঢাকা গিয়ে দু’একদিনে কাটিয়ে আসতেন। গত ২ মাস আগে দুই ছেলেকে নিয়ে শারমিন শরীয়তপুর খালার বাড়ি যায়। সেখানে বড় ছেলে ছামিকে রেখে আড়াই বছরের ইমতিয়াজকে নিয়ে আমিরের সাথে চলে যায়।
বিষয়টি শ্বশুর বাড়ির লোকজন জানতে পারলে শারমিনের খালার বাড়ি থেকে বড় ছেলে ছামিকে নিয়ে আসে। ১৪ এপ্রিল বিকেলে ঢাকা থেকে ফোন করে জানায় ইমতিয়াজ মারা গেছে। এরপর রাত ২টার দিকে মৃত ছেলেকে নিয়ে শশুরবাড়ি হাজির হয় শারমিন। সেখানে ইমতিয়াজের মারা যাওয়ার বিষয়ে একেক সময় একেক কথা বলতে থাকে। কখনও বলে জ্বর হয়েছিল আবার কখনও বলছে ডায়রিয়া হয়েছিল। আবার কখনও বলেছে বাথরুমে পড়ে গেছে। তখন এলাকার লোকের সন্দেহ হলে মাদারীপুর থানায় জানায়। মাদারীপুর সদর থানার পুলিশ ইমতিয়াজের লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য মাদারীপুর ২৫০ বেড হাসপাতালে পাঠায়। এদিকে আমির ও শারমিনের পরিবারের লোকজন বাড়িতে তালা দিয়ে সবাই পালিয়ে যায়।
শারমিনের বড় ছেলে ছামি জানায়, দুই ছেলেকে নিয়ে আমিরের সাথে যখন শারমিন ঢাকায় যেত তখন বাচ্চাদের হাতে মোবাইল দিয়ে হোটেলের বাথরুমে দুই ছেলেকে ঘন্টার পর ঘন্টা আটকে রাখতো। ছেলে সামির দাবি তার মা’ই ছোট ভাইকে মেরে ফেলেছে।
বাড়িতে উপস্থিত স্থানীয় সবারই দাবি আমির ও শারমিনের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক।
মৃত ইমতিয়াজের চাচি সালমা বলেন, শারমিন আমিরের সাথে পালিয়ে যাওয়ার পর আমরা ছামিকে ওর খালার বাড়ি থেকে আমাদের বাড়িতে নিয়ে আসি। পরে শারমিনের কাছ থেকে ইমতিয়াজকেও আনার চেষ্টা করি। কিন্তু সবাই বলেছে ইমতিয়াজ ছোট হওয়ায় মায়ের কাছ থেকে তাকে আনার কোন আইন নাই। তাই আমরা আনতে পারি নাই। যদি আমাদের কাছে আনতে পারতাম তাহলে ইমতিয়াজকে এভাবে মরতে হতো না। আমরা আমির ও শারমিনের ফাঁসি চাই।
মাদারীপুর সদর ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আদিল হোসেন বলেন, স্থানীয়রা খবর দিলে পুলিশ গিয়ে শিশুটির লাশ উদ্ধার করে। ময়না তদন্তের জন্য মাদারীপুর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। শিশুটির মা শারমিন আক্তারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে এসেছি। যেহেতু ঘটনাটা কেরানীগঞ্জে তাই মামলা কেরানীগঞ্জে হবে। আমরা আইনগত প্রক্রিয়া এরই মধ্যে শুরু করে দিয়েছি।
আরএস