এম এ রহমান, যশোর
এপ্রিল ১৫, ২০২৫, ০৭:৩৯ পিএম
এম এ রহমান, যশোর
এপ্রিল ১৫, ২০২৫, ০৭:৩৯ পিএম
আদালতের নির্দেশ অমান্য করে যশোরের চৌগাছায় পশু হাট থেকে অবৈধভাবে খাজনা আদায় চলছে। সর্বোচ্চ দরদাতাকে হাট না দিয়ে মোটা অংকের উৎকোচের বিনিময়ে হাটটি ফ্যাস্টিট আওয়ামী দোসরদের দেওয়ার পায়তারা চালাচ্ছে। দীর্ঘ ৭ বছর একটি চক্র অবৈধভাবে খাজনা আদায় করে আসছিলো। তারা এ বছরও খাজনা আদায়ের জন্য নানা চক্রান্ত চালাচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চলতি ১৪৩২ সালের জন্য বিভিন্ন হাট-বাজার খাজনা আদায়ের জন্য দরপত্র আহবান (ইজারা) করে চৌগাছা পৌরসভা। ২৫ ফেব্রুয়ারি দরপত্র জমা দানের শেষ দিন ধার্য ছিলো। শুধু মাত্র পশু হাটটি ছাড়া।
সূত্র জানায়, ঝিনাইদহের আবিদুর রহমান লালু চৌগাছা পশু হাটটি ইজারা নেওয়ার জন্য আদালতের স্মরণাপন্ন হন। তিনি চলতি বছরের ৩০ জানুয়ারি আদালতে একটি রিট পিটিশন দায়ের করেন। হাইকোর্ট ২৫ ফেব্রুয়ারি এই রিট পিটিশনটি নিস্পোত্তির জন্য আদালত দুই মাসের (আট) সপ্তাহের জন্য স্থগিতাদেশ দেন। ইতিমধ্যে পৌর কর্তৃপক্ষ (ইজারা কমিটি) সিদ্ধান্ত নেন গত বছরের তুলনায় এ বছর যারা বেশি মূল্য দেবে তাদেরকে হাটটি ইজারা দেওয়া হবে। গত বছর হাটটি ইজারা মূল্য ছিলো ৬২ লাখ টাকা। এ বছর (১৪৩২ সন) তিনটি প্রতিষ্ঠান ইজারায় অংশ নেন। এরমধ্যে মেসার্স শয়ন ট্রেডার্স গত বছরের তুলনায় এ বছর ৩৮ শতাংশ বাড়িয়ে হাটটি ইজারা নেওয়ার জন্য ৮৫ লাখ ৫৬ হাজার টাকা দাম নির্ধারণ করেন। মেসার্স মশিয়ার রহমান ৩০ শতাংশ দাম বাড়িয়ে ৮০ লাখ ৬০ হাজার টাকা দাম নির্ধারণ করেন। মেসার্স আলিফ এন্টারপ্রাইজ ৩৫ শতাংশ দাম বাড়িয়ে হাটটি ইজারা নেওয়ার জন্য মূল্য নির্ধারণ করেন। কিন্তু পৌর কর্তৃপক্ষ এদের কাউকে হাটটি ইজারা না দিয়ে আবিদুর রহমান লালু নামে হাইকোর্টে রিটপিটিশন দায়েরকারী ব্যক্তিকে হাটটি ইজারা দিয়েছেন। অভিযোগ পৌর কর্তৃপক্ষ (ইজারা কমিটি) ও প্রশাসক মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে ঝিনাইদহের আবিদুর রহমান লালুকে ১০ শতাংশ বাড়িয়ে হাটটির ইজারা দেন। ইজারায় অংশ নেওয়া মেসার্স শয়ন ট্রেডার্স সংক্ষুব্ধ হয়ে আদালতের স্মরণাপন্ন হন। আদালত (জজ ইন চেম্বার) ইজারার ওপর স্থগিতাদেশ দেন। একই সাথে ২৫ ফেব্রুয়ারি আদালত (হাইকোর্ট) রিটপিশন নম্বর ২২৫৫ ডাইরেক্টশনের রুল বেঞ্চ ছুটির পরে পুনরায় খোলার তারিখ থেকে ৭ দিনের মধ্যে দ্রুত রুল নিষ্পত্তির আদেশ দেন।
সংক্ষুব্ধ আতিকুর রহমান লেন্টু বলেন, আমি সর্বোচ্চ দর দিতে চেয়েছি। গত বছরের তুলনায় ৩৮ শতাংশ বেশি দিয়ে হাট ইজারা নেওয়ার আবেদন করেছি। তারপরও আমাকে হাটের ইজারা দেওয়া হয়নি। পৌর কর্তৃপক্ষ যোগসাজস করে পশু হাটটি ঝিনাইদহের ব্যাপারী পাড়ার আবিদুর রহমান লালুকে ১০ শতাংশ বাড়িয়ে এ বছর ১৪৩২ সালে দিয়েছে।
তিনি বলেন, চৌগাছার পৌরসভার প্রশাসক সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোছা: তাসমিন জাহান আদালতের নির্দেশকে অমান্য করে গত সোমবার (১৪ এপ্রিল) আবিদুর রহমান লালুকে দিয়ে ইজারার খাজনা আদায় করেছেন। আর এর সব কিছু তদারকি করেছেন পৌরসভায় কতিপয় দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।
তিনি আরো বলেন, ৩০ জানুয়ারির রিট পিটিশনটি নিস্পোত্তি না করেই তার আগেই হাটটি আবিদুর রহমান লালুকে দিয়েছেন। হাটটি আদালত আবিদুর রহমান লালুকে দেওয়ার কোন নির্দেশনা দেয়নি। কিন্তু তারপরও পশু হাটটি তাকে দেওয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে চৌগাছার পৌরসভার প্রশাসক সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোছা: তাসমিন জাহান বলেন, আদালতের সিদ্ধান্তের আগেই হাটটি আবিদুর রহমান লালুকে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। হাট ইজারা কমিটি সিদ্ধন্ত নিয়ে তাকে দিয়েছে। এরপর আতিকুর রহমান লেন্টু আদালতে গিয়েছে। আদালত স্থগিতাদেশ দেয়। এরপর আবিদুর রহমান ডেপুটি এটানি জেনারেলকে দিয়ে একটি নোটিশ পাঠিয়েছে তাকে হাটের ইজারা দেওয়ার জন্য। আমরা দুই পক্ষকে ডেকে বসতে বলেছি। কিন্তু আতিকুর রহমান লেন্টু হাজির হলেও আবিদুর হমান লালু হাজির হন না।
সূত্র জানায়, আবিদুর রহমান লালু একজন ধুরন্ধর লোক। সে একক সময় এক রুপ ধারণ করে ঝিনাইদহ থেকে এসে চৌগাছার মানুষকে বোকা বানিয়ে কোটি কোটি টাকা লুটে নিয়ে যাচ্ছে। তার বিরুদ্ধে চৌগাছার বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা ফুঁসে উঠেছে।
খাজনা আদায় সম্পর্কে জানতে চাইলে আবিদুর রহমান লালু বলেন, পৌর কর্তৃপক্ষ হাটটি আমাকে ইজারা দিয়েছে। আদালতের কাছ থেকে আদেশ নিয়ে আমি খাজনা আদায় করছি।
সূত্র জানায়, গত কয়েক বছর ধরে হাটটি ইজারা দেওয়া হলেও ইজারাদারা সম্পন্ন টাকা পরিশোধ করেননি। ফ্যাস্টিট আওয়ামী দোসরা চৌগাছা পশু হাটটি নিজেদের বাপ-দাদার পৈতিক সম্পদে পরিণত করে। গত বছর বংলা ১৪৩১ সালের হাটটি ইজারা নেন মিজানুর রহমান। ভ্যাটসহ বাজারের মূল্য নির্ধারণ করা হয় ৮০ লাখ ১৫ হাজার টাকা। তিনি এখনো পর্যন্ত ৯ লাখ ৫৮ হাজার ৭৫০ টাকা দেননি। বাংলা ১৪৩০ সালে হাটটি ইজারা নেন আসিফ ইকবাল ভুট্টো। সেসময় হাটের ইজারা মূল্য ধরা হয় ৫৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা। তিনিও ৩৩ লাখ ৩৮ হাজার টাকা বকেয়া রেখেছেন। যে টাকা আজ পর্যন্ত পরিশোধ করা হয়নি। বাংলা ১৪২৯ সালে হাটটি ইজারা নেন শামীম রেজা। পশু হাটটির ইজারা মূল্য ধরা হয় ৫৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা। তিনি এখনো পর্যন্ত ৫৫ লাখ ১২ হাজার টাকা পরিশোধ করেননি। ১৪২৮ সালে পশুহাটটি ইজারা নেন ইয়ামূল অর রশিদ টিটো। হাটটি ইজারা মূল্য ছিলো ৫৬ লাখ ২৮ হাজার ৫০০ টাকা। তার কাছে এখনো পর্যন্ত বকেয়া রয়েছে ২৬ লাখ ৪ হাজার ২০০ টাকা। আর এভাবেই চৌগাছা পশু হাটটি লুটপাট করে খাচ্ছে আওয়ামী দোসর ও তাদের সাঙ্গপাঙ্গরা। ভয়ে এলাকার কোন মানুষ এদের বিরুদ্ধে কোন কথা বলতে পারেনি।
আরএস