Amar Sangbad
ঢাকা বুধবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৫,

অপরাধে জড়াচ্ছেন বরিশালের কিশোররা

আরিফ হোসেন ,বরিশাল ব্যুরো

আরিফ হোসেন ,বরিশাল ব্যুরো

এপ্রিল ১৫, ২০২৫, ০৮:৩৪ পিএম


অপরাধে জড়াচ্ছেন বরিশালের কিশোররা
  • প্রকাশ্যে জড়াচ্ছে সংঘর্ষে, মাদক সেবন, ইভটিজিং, ছিনতাই’র ঘটনায়
  • সন্ধ্যার পর রূপ নেয় ভয়ংকর, বিক্রি বেচা-কেনা হয় মাদক
  • এদের নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের
  • আরো সক্রিয় হওয়ার দাবি নগরবাসীর

অল্প বয়সী সন্তানরা জড়িয়ে পড়ছে অপরাধী চক্রে। স্কুলের গণ্ডি পেরোনোর আগেই অনেকে ঘটাচ্ছে ভয়ংকর সব অপরাধ। ইভটিজিং কিংবা মহল্লাভিত্তিক বখাটেপনা নয়, কিশোররা গ্রুপ করে পরিকল্পিত ভাবে অংশ নিচ্ছে অপরাধ কর্মকাণ্ডে। ধর্ষণ ঘটনায় জড়াচ্ছে তাদের নাম।

অপরাধ বিশ্লেষক ও সতেচন মহল বলছেন, শুধু আইনের প্রয়োগ ও কঠোরতায় এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ ঘটবে না। কিশোর অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করতে প্রয়োজন সামাজিক, পারিবারিক শাসন ও সচেতনতা।

বরিশাল নগরীর একটি বিনোদন কেন্দ্রে এমনই এক ঘটনার আলোড়ন সৃষ্টি করছিলেন দুটি গ্রুপের কিশোররা। গত ১৪ এপ্রিল সন্ধ্যায় বরিশাল বের্লেস পার্ক মাঠে প্রেমিকা নিয়ে কিছু কিশোরদের মাঝে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।

পরে বিষয়টি মাঠে থাকা দর্শনার্থীরা দেখে ভিড় করেন। এবং আইনশৃঙ্খালা বাহিনীর সদস্যদের দেখতে পেয়ে মাঠ থেকে সটকে পড়ে উভয় পক্ষের কিশোর যুবকেরা। এর আগে গত রোববার ১৩ এপ্রিল ঘড়ির কাটায় বাজে ঠিক বেলা ১২ টা। দেখা যায় নগরীর আমতলা মোড় সংলগ্ন স্বাধীনতা পার্কে মধ্যে কিশোরদের দু’গ্রুপের সংঘর্ষ হচ্ছে। পার্কের বাহিরে রাস্তার পাশে উৎসুক জনতার ভিড়।

তখন দাঁড়িয়ে বিষয়টি জানতে গিয়ে জানা গেলো ঘটনাস্থলের পার্শ্ববর্তী একটি বালিকা বিদ্যালয়ের ছাত্রীদের উত্ত্যক্ত করা নিয়ে তরুণদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় জড়ায় তারা। তরুণদের দু’পক্ষের সংঘর্ষে দুই কিশোর রক্তাক্ত হলে স্থানীয়রা তাদেরকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করেন।

স্থানীয়দের সূত্রে জানা গেছে, এর কিছুদিন আগেও একই স্থানে বখাটেদের আক্রমণের শিকার হন শেরে-বাংলা মেডিকেলে কর্মরত এক নারী। ঐ সময় নারী ও তার সাথে থাকা এক যুবকের মোবাইল ফোন ও টাকা পয়সা ছিনিয়ে নিয়ে যায় বখাটেরা। এমন ঘটনা হর হামেশাই ঘটছে নগরীর অন্যতম বিনোদন কেন্দ্র স্বাধীনতা পার্কটিতে বলে অভিযোগ করেন স্থানীয়রা।

আগের মত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের নিয়মিত আনাগোনা না থাকায় পরিস্থিতি বিগত কয়েক মাস ধরে নিয়ন্ত্রণের বাইরে বলে জানায় তারা। এমন অবস্থা নগরীর প্রায় প্রতিটি বিনোদন কেন্দ্রের।

হঠাৎ করেই বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে বেশ বেপরোয়া হয়ে উঠেছে উঠতি বয়সি কিশোর তরুণরা। প্রতিনিয়তই দলগত সংঘর্ষে জড়ানো, প্রকাশ্যে মাদক সেবন, ইভটিজিং এমনকি কোন কোন স্থানে ছিনতাই এর মত অপকর্মে জড়িয়ে পড়ছে তারা।

এমন পরিস্থিতিতে তাৎক্ষণিক অভিযোগ না মেলায় নিয়ন্ত্রণে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হচ্ছেনা বলে জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। সীমিত সংখ্যক পুলিশ সদস্যদের একই সময়ে খবর না পেলে সব স্থানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা অনেকটাই কষ্টসাধ্য বিষয় বলে তাদের বক্তব্য।

নগরীর অন্যতম বিনোদন কেন্দ্রগুলোর মধ্যে রয়েছে বেলস্ পার্ক, মুক্তিযোদ্ধা পার্ক, ত্রিশ গোডাউন, স্বাধীনতা পার্ক, কাঞ্চন পার্ক, সুকান্ত শিশু পার্ক, বেলতলা ভেরিবাধ এলাকা।

নগরীর সাধারণ বাসিন্দারা ছুটির দিনে এসকল স্থানে পরিবার নিয়ে অবসর যাপনে যাচ্ছেন। বিগত ২/৩ মাস থেকে এই স্থানগুলোতে কিশোর বখাটেদের উৎপাতে নানা ধরনের হয়রানির শিকার হওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এছাড়া পূর্বে কিছুটা নিয়ন্ত্রণে থাকলেও এখন প্রতিনিয়ত তাদের করা নানা ধরনের অপকর্মে স্থানগুলোতে পরিবার নিয়ে আসা বন্ধ করে দিচ্ছে সাধারণ বাসিন্দারা। এমাসের শুরুতে বেলস পার্কে পরিবার নিয়ে এসে তুচ্ছ কারণে বখাটেদের হামলার শিকার হন কালাম শেখ নামের ব্যক্তি।

তিনি জানান, মাঠের মধ্যে পরিবার নিয়ে আড্ডা দিচ্ছিলেন। এমন সময় দৌড়ে এসে তাদের ওপর হুমড়ি খেয়ে পরে দুই কিশোর। প্রতিবাদ করলে হাতাহাতি শুরু হয়। পাশের লোকজন এসে প্রতিবাদ করলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। এই ঘটনার পর থেকে লজ্জায় আর বেলস পার্ক যাননি বলে জানান।

এ ছাড়াও বেলস পার্কে কেডিসি বস্তি এলাকার বখাটেরা এসে মাদক সেবন সহ বিক্রি করছে বলেও অভিযোগ রয়েছে একাধিক। মুক্তিযোদ্ধা পার্কে এখন আর ভদ্র সমাজের লোকজন আসেনা বলে অভিযোগ করেছে একাধিক ব্যক্তি। ভাটারখাল বস্তি এবং কেডিসি বস্তির কিছু বখাটেদের দখলে এখানে চলে সব ধরনের অপকর্ম। সন্ধ্যার পর পরিস্থিতি বেশ ভয়ংকর হয়ে ওঠে, তবে দিনের বেলাতেও এই পার্কে আসা দর্শনার্থীরা নিরাপদ নয় বলে জানা গেছে।

দুই বস্তি থেকে মাদক কিনে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে এই পার্কটি ব্যবহার করেই আসা যাওয়া করে অপরাধীরা।

ত্রিশ গোডাউনে নিয়মিত আসা দর্শনার্থী সজিব বলেন, অফিসের কাজ শেষে প্রায়ই আড্ডা দিতে বন্ধুরা মিলে এখানে আসা হয়। নগরীর ছেলে তাই ছোট বেলা থেকেই এই স্থানটি পছন্দের। কিন্তু কিছুদিন আগেও যে নিরাপত্তা ছিল তা এখন আর দেখা যায় না ত্রিশ গোডাউন এলাকায়। কিশোর বয়সীদের উৎপাত বেড়েছে ভয়ংকর আকারে। তারা প্রকাশ্যে মাদক সেবন সহ সব ধরনের অপকর্ম করছে এখানে এসে। বিকেল হলেই ত্রিশ গোডাউনের নদীর পাড় থাকে গ্রুপ ভিত্তিক কিশোর বাহিনীর দখলে। কেউ কিছু বললে তাদের হামলার শিকার হতে হয়। তাই কেউ প্রতিবাদও করেনা।

তিনি আরো বলেন, বর্তমানে গোডাউনের নদীর পার এলাকার সাইলো জেটির পার্শ্ববর্তী স্থানটিতে সন্ধ্যা হলেই গাজার আসর বসে। পুলিশের উপস্থিতি একেবারেই নেই বললেই চলে তাই এমন অবস্থা বলে অভিযোগ করেন এই ব্যক্তি। এমন অবস্থা নিয়ন্ত্রণে না আনলে এসকল স্থানে ভদ্রলোকের আনাগোনা কমে যাবে বলে মন্তব্য করেন সজিব।

ভয়ংকর অবস্থা বিএম স্কুল সংলগ্ন কাঞ্চন পার্কটির। এখানে প্রতিদিন হাঁটতে স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, একেবারেই অল্প বয়সি কিশোররা কোন অপরাধ করলেও কেউ কিছু বলতে পারেনা তাদের। তাই কিছু বলতে গেলেও পারছেনা। তবে এদের নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আরও সক্রিয় হওয়া প্রয়োজন বলে দাবি তার।

এ বিষয়ে কোতয়ালী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, ঘটনাগুলো ঘটছে ঠিকই, তবে তারা তাৎক্ষণিক খবর না পেলে কিভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। এছাড়া থানায় যে সংখ্যক পুলিশ সদস্য রয়েছে তাতে সর্বদা সব স্থানের নিরাপত্তা দেয়া কিছুটা কঠিন হয়ে পড়ে। তবে অভিযোগ পেলে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, যেহেতু এখন স্থানীয়রা এই বিষয়গুলো প্রত্যক্ষ করছেন তাই তাদের উচিত কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে সাথে সাথে পুলিশকে অবহিত করা।

এছাড়া বিগড়ে যাওয়া কিশোর তরুণদের অভিভাবকদেরও উচিৎ তাদের সন্তানদের নিয়ন্ত্রণ করা। সন্তান কোথায় যাচ্ছে, কি করছে, কাদের সাথে মেলামেশা করছে এ বিষয়ে তাদের সজাগ ও সচেতন থাকার পরামর্শ দিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা।

পহেলা বৈশাখে বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে নগরবাসীদের নিরাপত্তায় অসংখ্য পুলিশ সদস্য ছিল বলে কোতয়ালী মডেল থানা পুলিশ বলে জানান ওসি।

বরিশাল

Link copied!