খোকসা (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধি
এপ্রিল ১৬, ২০২৫, ০৯:৩০ পিএম
খোকসা (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধি
এপ্রিল ১৬, ২০২৫, ০৯:৩০ পিএম
কুষ্টিয়ার খোকসায় এক ইউপি চেয়ারম্যানের বাড়ি ও খেয়া ঘাটে পৃথক হামলায় দুইজন গুলিবিদ্ধসহ চারজন আহত হয়েছেন। ঘাটের মাঝিদের উপর হামলার প্রতিবাদে কয়েক ঘণ্টা খেয়া পারাপার বন্ধ রাখা হয়।
মঙ্গলবার গভীর রাতে পুলিশ পরিচয় দিয়ে একদল সশস্ত্র সন্ত্রাসী জানিপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মজিবর রহমান মজিদের বিহারিয়া গ্রামের বাড়িতে হানা দেয়। হামলাকারীরা নিজেদের পুলিশ পরিচয় দিয়ে চেয়ারম্যানের ভাই শরিফুল ইসলাম (৪০)কে ঘুম থেকে ডেকে তোলে। দরজা খোলার সাথে সাথে সন্ত্রাসীরা শরিফুলের হাত পা বেঁধে বেধরক মারপিট করে। এক পর্যায়ে তার বাম পায়ে আগ্নেয় অস্ত্র ঠেকিয়ে গুলি চালায়। এ সময় এলাকাবাসীরা মসজিদের মাইকে হামলার ঘটনা প্রচার করলে সন্ত্রাসীরা মাইক্রোবাস নিয়ে পালিয়ে যায়। পালিয়ে যাওয়ার সময় সন্ত্রাসীদের ছোড়া গুলিতে নিজের বিছায় গুলিবিদ্ধ হন কৃষক আব্দুল মান্নান (৫৫) নামের এক বৃদ্ধ। অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান বৃদ্ধের স্ত্রী। বৃদ্ধে কাঁধ ও মুখে ৪টি গুলি লেগেছে। গুলিবিদ্ধ শরিফুল ইসলামের বাবা বিহারিয়া গ্রামের ওহেদ আলী মোল্লা। অপর গুলিবিদ্ধ বৃদ্ধ আব্দুল মান্নান এই গ্রামের আলাউদ্দিন শেখের ছেলে। রাত ৩টার দিকে একটি মাইক্রোবাস ও প্রাইভেট কারে আসা সন্ত্রাসীরা গড়াই নদীর খোকসা খেয়া ঘাটের টোল ঘরে হামলা চালায়। সন্ত্রাসীরা টোল ঘরে থাকা ঘাট মাঝি বিশাল (১৮) ও হাচেন আলী (৬০) কে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে আহত করে। রাতেই এসব ঘটনায় আহতদের উদ্ধার করে প্রথমে খোকসা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে নেয়া হয়। প্রাথমিক চিকিৎসার পর তাদের কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। আহদের মধ্যে চেয়ারম্যানের ভাই গুলিবিদ্ধ শরিফুল ও আব্দুল মান্নন কে ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়।
ধারালো অস্ত্রের কোপে আহত মাঝির সহকারী বিশাল ওসমানপুর গ্রামের জাহাঙ্গীর আলীর ছেলে। আহত বৃদ্ধ মাঝি হাচেন আলীর বাবার নাম জানা যায়নি। ঘাটের মাঝিদের উপর হামলার প্রতিবাদে বুধবার সকাল থেকে খোকসা খেয়া ঘাটে পারাপার বন্ধ করেদেয় ইজারাদারের লোকেরা। ৫ ঘণ্টা পর সকাল ১০টার দিকে পুলিশের উপস্থিতিতে খেয়া পারাপার স্বাভাবিক হয়েছে। গুলিবিদ্ধ আহত শরিফুলের স্ত্রী নাজমা জানান, তার স্বামী ঘরে ঘুমিয়ে ছিল। গভীর রাতে বাড়ির দেয়াল টপকে কয়েকজন লোক বাড়ি মধ্যে ঢুকে নিজেদের পুলিশ পরিচয় দিয়ে তার স্বামীকে ডাকা ডাকি করতে থাকে। এক পর্যায়ে তার স্বামী নিজেই ঘরের দরজা খুলে দেয়। এ সময় তিনজন লোক ঘরে প্রবেশ করে। অস্ত্রধারী লোকগুলো তার স্বামীকে বিছানায় বসিয়ে হাত-পা বাঁধতে থাকে। এক পর্যায়ে বেধরক মারপিট করে। সন্ত্রাসী যাবার সময় তার স্বামী শরিফুলের পায়ে একই স্থানে দুটি গুলি চালায়। তিনি আরও জানান, হামলাকারীদের মুখ খোলা থাকলেও তাদের চেনেননি। তবে তার স্বামী চিনতে পারেন। বাড়ির বাইরের গাড়ি ছিল।
তারা গাড়িতে করে চলে যায়। গুলিবিদ্ধ মান্নানের ছেলে রুবেল শেখ জানান, তিনি নসিমন গাড়ি চালান। একটি মোবাইল ফোন থেকে রবিবার দুপুরের তার কাছে ১২ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করা হয়। তিনি টাকা দিতে অপারগতার কথা জানান। এ ঘটনার সূত্র ধরে সন্ত্রাসীরা তার বাড়িতেও হামলা করতে পারে বলে জানান । তার বাবার শোবার ঘর লক্ষ করে বেশ কয়েক রাউন্ড গুলি চালায়। তাদের ছোড়া ৪টি গুলি তার বাবার গায়ে লেগেছে। অল্পের জন্য তার মা বেঁচে গেছেন। জানিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মজিবর রহমান মজিদ বলেন, সাত মাস আগে সন্ত্রাসীরা তার উপর হামলা করে একটি পা গুড়িয়ে দিয়েছিল। তিনি এই সময় ধরে খোকসার বাইরে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এবার তার ভাই শরিফুলেও একই ভাবে একটি পায়ে গুলি করে পঙ্গু করে দেওয়া হয়েছে। আগের হামলা কারীরাই এবারে তার ভাইয়ের উপর হামলা করেছে।
খোকসা খেয়া ঘাটের ইজারা দার সান্টু দাবি করেন, পূর্ব বিরোধের জের ধরে রাতের আঁধারে ঘাটের মাঝিদের ধারালো অস্ত্রদিয়ে কুপিয়েছে। আহতদের উন্নত চিকিৎসার জন্য কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। পুলিশ ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা সরেজমিন ঘুরে গেছেন। তিনি মামলার প্রস্তুতিও নিচ্ছেন।
থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শেখ নাঈমুল ইসলাম বলেন, তিনি সবগুলো ঘটনা স্থলে গিয়েছেন। তদন্তের স্বার্থে তাদের সাথে কথা বলেছেন। আহতদের চিকিৎসার পর ভুক্তভোগীরা মামলা করবেন বলেও জানিয়েছেন। মামলা রেকর্ডের পর চরম ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানিয়েছেন ।
আরএস