Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৫,

ভাঙ্গুড়ার চিকিৎসা সেবার শেষ ভরসাস্থল ডা. হালিমা খানম

মেহেদী হাসান, ভাঙ্গুড়া, পাবনা

মেহেদী হাসান, ভাঙ্গুড়া, পাবনা

এপ্রিল ১৭, ২০২৫, ০৫:২৬ পিএম


ভাঙ্গুড়ার চিকিৎসা সেবার শেষ ভরসাস্থল ডা. হালিমা খানম

পাবনার অবহেলিত জনপদ ভাঙ্গুড়া উপজেলা। বিল ঘেরা এই জনপদে দীর্ঘদিন ধরে স্বাস্থ্যসেবা ছিল প্রায় অপ্রতুল। চরম দারিদ্র্যসীমায় বসবাসকারী এখানকার মানুষের কাছে এমবিবিএস কিংবা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সেবা ছিল স্বপ্নের মতো। চিকিৎসার ভরসা ছিল কেবল বাজারের ফার্মেসি থেকে কেনা এক-দুই পাতা ওষুধ কিংবা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। তবে সেখানেও জরাজীর্ণ অবকাঠামো, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ এবং পর্যাপ্ত চিকিৎসা ব্যবস্থার অভাবে ভোগান্তির সীমা ছিল না।

কিন্তু সময় বদলেছে। এখন ভাঙ্গুড়ার মানুষ সহজেই উন্নতমানের চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেন। শুধু সাধারণ মানুষ নয়, বিত্তশালীরাও এখন চিকিৎসা নিতে ছুটে আসছেন ভাঙ্গুড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। এই আমূল পরিবর্তনের কারিগর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোছা. হালিমা খানম।

ডা. হালিমা খানম এখন ভাঙ্গুড়াবাসীর চিকিৎসার শেষ ভরসা হয়ে উঠেছেন। ফরিদপুর, চাটমোহরসহ আশপাশের উপজেলার রোগীরাও তার কাছে চিকিৎসা নিতে ছুটে আসছেন। বিশেষ করে নারী ও প্রসূতি রোগের ক্ষেত্রে তিনি এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। আধুনিক স্বাস্থ্যসেবাকে দোরগোড়ায় পৌঁছে দিয়ে স্বাস্থ্যখাতে বিপ্লব ঘটিয়েছেন এই চিকিৎসক।

সরেজমিনে ভাঙ্গুড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ঘুরে দেখা গেছে, এটি যেন কোনো দর্শনীয় স্থান। প্রধান ফটকে প্রবেশ করলেই চোখে পড়ে সাজানো-গোছানো ফুলের বাগান ও পরিচ্ছন্ন পরিবেশ। চারদিকের পরিপাট্য বলে দেয় এখানে চিকিৎসা সেবা কতটা গুরুত্ব পায়। যেখানে অন্য উপজেলার হাসপাতালগুলোতে দুর্গন্ধে থাকা দুষ্কর, পাবনা জেনারেল হাসপাতালকেও অনেকে ময়লার ভাগাড় বলেন, সেখানে ভাঙ্গুড়ার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স যেন এক উজ্জ্বল ব্যতিক্রম।

হাসপাতালের অন্য চিকিৎসকদের কক্ষে দুই-একজন রোগী অপেক্ষমাণ থাকলেও, ডা. হালিমা খানমের চেম্বারের সামনে রোগীদের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ করা গেছে। অনেকেই সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত অপেক্ষা করেও ফিরে যান না, শুধু তার সেবা নেওয়ার জন্য।

ফরিদপুর থেকে আসা প্রসূতি রোগী খোদেজা বেগম বলেন, "হালিমা ম্যাডাম খুব ভালো ডাক্তার। আমাদের অনেক আত্মীয়-স্বজন তার কাছে চিকিৎসা নিয়েছেন। তার ব্যবহারও খুব ভালো। আমি এর আগে দুইবার চিকিৎসা নিয়েছি।"

আরেক রোগী মুরসালিনা আক্তার বলেন, "আমি দুইবার সিজার করেছি ম্যাডামের কাছে। এবার আরেকটি সন্তান নেব কি না, তা জানতে এসেছি। যতো রাতই হোক, ম্যাডামের কাছে গেলে চিকিৎসা না নিয়ে কেউ ফেরে না। আমি নিজেই একবার রাত ১২টার দিকে তার কাছে চিকিৎসা নিয়েছিলাম। তিনি মা-মতো ব্যবহার করেন।"

৪০ বছর ধরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত অফিস সহকারী মাহবুব হোসেন বলেন, "অনেক স্যার-ম্যাডামকে দেখেছি, কিন্তু এমন রোগী দরদি ডাক্তার কখনো দেখিনি। প্রায় সব রোগীই তার কাছে আসেন। তার চিকিৎসা না নিয়ে কেউ ফিরতে চান না।"

ডা. হালিমা খানম বলেন, "২০১০ সালে মেডিকেল অফিসার হিসেবে যোগদান করি। শুরু থেকেই চেষ্টা করেছি মানুষের পাশে দাঁড়াতে। ২০১৭ সালে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করি। আমার এই কাজের পেছনে ভাঙ্গুড়ার জনপ্রতিনিধি, গণ্যমান্য ব্যক্তি এবং সাধারণ মানুষের ভালোবাসা ও সহযোগিতা রয়েছে।"

তিনি আরও বলেন, "আমি চাই, যতদিন বাঁচি, এই মানুষগুলোর সেবা করে যেতে। ইনশাআল্লাহ, মৃত্যু পর্যন্ত মানুষের পাশে থাকতে চাই।"

দুইবার বদলি হলেও ভাঙ্গুড়াবাসীর অনুরোধে আবার ফিরে এসেছেন তিনি। ভাঙ্গুড়ার স্বাস্থ্যসেবা আজ যে জায়গায় পৌঁছেছে, তার মূল কারিগর নিঃসন্দেহে ডা. হালিমা খানম।

ইএইচ

Link copied!