নাগরপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি
এপ্রিল ১৮, ২০২৫, ০৫:২৩ পিএম
নাগরপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি
এপ্রিল ১৮, ২০২৫, ০৫:২৩ পিএম
এক সময় গ্রামীণ জীবনের অপরিহার্য অনুষঙ্গ ছিল ঢেঁকি। টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামগুলোতে প্রতিটি বাড়িতেই ঢেঁকি ছিল এক পরিচিত দৃশ্য। ধান ভানা, চাল তৈরি, মসুর ডাল কোটা—সবই হতো কাঠের তৈরি এই যন্ত্রে। ভোরবেলায় “ঢপ ঢপ” শব্দে গ্রামের ঘুম ভাঙত, দিন শুরু হতো সেই চেনা ছন্দে। কিন্তু কালের প্রবাহে এবং প্রযুক্তির দ্রুত বিকাশে সেই ঢেঁকি আজ হারিয়ে যেতে বসেছে। নাগরপুরে এখন ঢেঁকির দেখা পাওয়া যেন ভাগ্যের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ঢেঁকি শুধু একটি যন্ত্র ছিল না, এটি ছিল গ্রামীণ নারীদের শ্রম, ভালোবাসা ও পারিবারিক জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। বাড়ির মেয়েরা একত্র হয়ে ঢেঁকি চালাতেন, গল্প করতেন, হাসিখুশি সময় কাটাতেন। একপ্রকার সামাজিক মিলনমেলা তৈরি হতো ঢেঁকিকে কেন্দ্র করে। খাঁটি চাল, টাটকা ডাল—সবকিছুতেই ছিল ঢেঁকির স্বাদ ও ঘ্রাণ।
নাগরপুরের বয়স্ক নারী হালিমা খাতুন বলেন, “আগে সকালে ঢেঁকির শব্দ না শুনলে মনে হইতো ঘুম ঠিকমতো ভাঙছে না। এখন তো শুধু টেলিভিশনে ঢেঁকি দেখা যায়।”
বর্তমানে আধুনিক ধান ভাঙার মেশিন সহজলভ্য হওয়ায় ঢেঁকির ব্যবহার ব্যাপকভাবে কমে গেছে। মেশিনে কাজ যেমন সহজ, তেমনি সময়ও সাশ্রয়ী। ফলে ঢেঁকি হয়ে পড়েছে অব্যবহৃত ও অপ্রয়োজনীয়। নতুন প্রজন্মের অনেকেই জানেই না ঢেঁকি দেখতে কেমন।
স্থানীয় তরুণ রাহুল হাসান বলেন, “আমার দাদির মুখে ঢেঁকির গল্প শুনেছি, কিন্তু বাস্তবে কোনোদিন দেখিনি। এখন তো সবই মেশিনে হয়।”
ঢেঁকি ছিল শুধুমাত্র একটি পেষণযন্ত্র নয়, এটি ছিল আমাদের সংস্কৃতি ও গ্রামীণ ঐতিহ্যের প্রতীক। অথচ এই মূল্যবান ঐতিহ্য সংরক্ষণে নেই কোনো সরকারি বা বেসরকারি উদ্যোগ। স্থানীয় সাংস্কৃতিক সংগঠকরা মনে করেন, ঢেঁকি সংরক্ষণের জন্য বিদ্যালয়ে প্রদর্শনী আয়োজন, গ্রামীণ মেলায় ঢেঁকি চালানোর প্রতিযোগিতা, কিংবা স্থানীয় যাদুঘরে ঢেঁকি সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।
সাংস্কৃতিবিদরা বলেন, “যদি আমরা আমাদের শিকড় ও সংস্কৃতিকে সঠিকভাবে মূল্য না দিই, তাহলে একদিন আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম শুধুই বইয়ে এসব ঐতিহ্যের কথা পড়বে।”
নাগরপুরসহ দেশের বিভিন্ন গ্রামে ঢেঁকি আজ বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে। এটি কেবল একটি যন্ত্র নয়, আমাদের শিকড়, স্মৃতি ও সংস্কৃতির ধারক। ঐতিহ্যের এই ধ্বংস ঠেকাতে এখনই প্রয়োজন সম্মিলিত সচেতনতা ও কার্যকর উদ্যোগ। তা না হলে আমাদের আগামী প্রজন্ম হারিয়ে ফেলবে শিকড়ের স্বাদ ও গর্ব।
ইএইচ