দিনাজপুর প্রতিনিধি
এপ্রিল ২০, ২০২৫, ১২:৩৬ পিএম
দিনাজপুর প্রতিনিধি
এপ্রিল ২০, ২০২৫, ১২:৩৬ পিএম
সাংবাদিক ইউনিয়ন দিনাজপুরের সভাপতি জি. এম. হিরু এবং সাধারণ সম্পাদক মাহফিজুল ইসলাম রিপনের বিরুদ্ধে এমপিওভুক্ত শিক্ষক ও একাধিক মামলার আসামিদের সদস্য বানিয়ে প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ (পিআইবি)-এর প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করানোর অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি নিয়ে দিনাজপুরের সাংবাদিক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া ও আলোচনা চলছে।
গত ১৯ থেকে ২১ মার্চ পর্যন্ত দিনাজপুর সার্কিট হাউজ মিলনায়তনে পিআইবি ও তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে তিনদিনব্যাপী ‘অনুসন্ধানমূলক রিপোর্টিং’ প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হয়।
অভিযোগ রয়েছে, এই প্রশিক্ষণে প্রকৃত সাংবাদিকদের বাদ দিয়ে ব্যবসায়ী, এনজিও কর্মী, মাদক মামলার আসামি ও স্কুল-মাদরাসায় শিক্ষকরা অংশগ্রহণ করেছেন, যারা ইউনিয়নের সদস্যপদ পেয়েছেন সন্দেহজনক প্রক্রিয়ায়।
ঘটনার সূত্রপাত ঘটে ২০ মার্চ, প্রশিক্ষণের দ্বিতীয় দিনে, যখন দিনাজপুরের জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. রফিকুল ইসলাম প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিদর্শনে যান। তিনি অংশগ্রহণকারীদের পরিচয় যাচাইয়ের সময় বেশ কয়েকজন নিজেদের পাশাপাশি শিক্ষক হিসেবেও পরিচয় দেন।
এ সময় জেলা প্রশাসক বলেন, “আপনারা শিক্ষকতা করবেন, না সাংবাদিকতা—দুটির মধ্যে একটি পেশা বেছে নিতে হবে। দুটি একসঙ্গে চলতে পারে না, যা সরকারি নীতিমালার পরিপন্থি।”
সরকারি বিধি অনুযায়ী, এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা কোনো আর্থিক লাভজনক পদে থাকতে পারেন না। এই বিষয়ে প্রযোজ্য বিধানসমূহ হলো—বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা ২০২২ (অনুচ্ছেদ ১১.১৭), মাদ্রাসা নীতিমালা ২০১৮ (অনুচ্ছেদ ১১.১০(ক)), এবং কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নীতিমালা ২০১৮ (অনুচ্ছেদ ১৫.১)।
ঘটনার বিষয়ে দিনাজপুরের নবাগত জেলা শিক্ষা অফিসার খন্দকার মো. আলাউদ্দীন আল আজাদকে বিষয়টি জানানো হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, ইউনিয়নের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক স্বেচ্ছাচারীভাবে প্রকৃত সাংবাদিকদের বাদ দিয়ে অযোগ্য ও সুবিধাভোগী ব্যক্তিদের সদস্য করে প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করিয়েছেন। অভিযোগ রয়েছে, তারা গুণগত মানের তোয়াক্কা না করে শুধু সদস্য সংখ্যাকে গুরুত্ব দিয়ে সংগঠনের নিয়ন্ত্রণ বজায় রেখেছেন। প্রতিবাদকারীদের সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা হয় এবং কৌশলে সদস্য পদ থেকেও বাদ দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে সাংবাদিক ইউনিয়ন দিনাজপুরের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও প্রবীণ সাংবাদিক আব্দুস সালাম বলেন, “আওয়ামী লীগ সরকারের সময় বহু নির্যাতন সহ্য করে এই সংগঠন ধরে রেখেছি। কিন্তু আজ এই অনিয়ম দেখে হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। সংগঠনের জন্মলগ্ন থেকে আজ পর্যন্ত কোনো নির্বাচন হয়নি, নির্বাচন দেওয়ার প্রতিশ্রুতি থাকলেও বাস্তবায়ন হয়নি।”
তিনি আরও বলেন, “প্রকৃত সাংবাদিকদের বাদ দিয়ে গোষ্ঠীবাদী ও অযোগ্যদের সদস্য করে সংগঠনকে স্বার্থে ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে প্রশ্ন থেকে যায়, পলাতক স্বৈরাচারী সরকারের সঙ্গে এই কার্যক্রমের পার্থক্য কী?”
বঞ্চিত সাংবাদিকরা বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ (পিআইবি), তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
ইএইচ