হিজলা (বরিশাল) প্রতিনিধি:
এপ্রিল ২৩, ২০২৫, ১২:২৩ পিএম
হিজলা (বরিশাল) প্রতিনিধি:
এপ্রিল ২৩, ২০২৫, ১২:২৩ পিএম
স্কুল শেষে মেলায় গিয়েছিল নিশাত (১২) ও ওমর (১৪)। এক সময়ের সহপাঠীদের মধ্যে আনন্দ ভাগাভাগির কথা থাকলেও সেদিন তাদের জন্য অপেক্ষায় ছিল মৃত্যু ফাঁদ। প্রাণ বাঁচাতে ছুটে যেতে হয় মেঘনার স্রোতভরা নদীতে। এ যেন সিনেমার কাহিনি নয়—বরং হিজলার বাস্তব চিত্র।
ঘটনাটি ঘটে সোমবার (২১ এপ্রিল) সন্ধ্যায়, বরিশালের হিজলা উপজেলার তুলাতলীর মৌলভীরহাট এলাকায়। সেখানে স্থানীয়ভাবে ‘কিশোর গ্যাং’ নামে পরিচিত একটি গ্রুপের নেতৃত্বে থাকা নাবিল ও তার অনুসারীরা দুই স্কুলছাত্রের ওপর চালায় নৃশংস হামলা।
জানা যায়, এক বছর আগের একটি তুচ্ছ ঘটনার জের ধরে কিশোর গ্যাং নেতা নাবিল ক্ষুব্ধ ছিলেন নিশাত ও ওমরের ওপর। সেবার স্পোর্টস দেখতে গিয়ে স্কুল পরিচয় জানানোয় তারা গ্যাং সদস্যদের হাতে হেনস্তার শিকার হয়। এরপরের বছর ক্রিকেট টুর্নামেন্টেও একই রকম অপমানিত হয় তারা। সেই আক্রোশেই সোমবার সন্ধ্যায় মেলায় দেখে ফের চড়াও হয় নাবিল ও তার বাহিনী।
প্রাণ বাঁচাতে ছুটতে ছুটতে তারা পৌঁছে যায় মেঘনার পাড়ে। আর পেছনে তখন শতরঞ্জির মতো ছুটে আসছে কিশোর গ্যাংয়ের দলবল। বাধ্য হয়ে নিশাত ও ওমর নদীতে ঝাঁপ দেন। প্রাণে বাঁচলেও ভেসে ওঠে নতুন এক প্রশ্ন—এই শিশুরা নিরাপদ কোথায়?
স্থানীয়দের সহায়তায় কোনোমতে নদী থেকে উঠলেও দমে যায়নি গ্যাং। ফের ধাওয়া শুরু হলে তারা দৌড়ে আশ্রয় নেয় কাশিমুল উলুম মাদ্রাসায়। সেখানে শিক্ষকরা লাইব্রেরিতে তালা দিয়ে দুইজনকে লুকিয়ে রাখেন। কিন্তু এর মধ্যেও গ্যাং সদস্যরা ‘বন্ধু’ সেজে ঢুকে পড়ে। ফের চলে মারধর। ছিনিয়ে নেয়া হয় তাদের মোবাইল ফোন ও টাকা।
নাবিল বাহিনীর ক্ষমতার উৎস কোথায়?
নাবিলের পরিবার রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী। স্থানীয়ভাবে জানা গেছে, তার বড় ভাই নাহিদ ছাত্রলীগ করতেন, আর পিতা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য। তবে মজার বিষয় হলো, তার চাচা আবার বিএনপির ওয়ার্ড সভাপতি। রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় গড়ে ওঠা এই বাহিনীর ভয়ে সাধারণ মানুষ মুখ খোলার সাহসও পায় না।
‘সবাই দেখেছে, কিন্তু কেউ থামায়নি’
নিশাত ও ওমরের পরিবার বলছে, হামলার সময় আশপাশে লোকজন থাকলেও কেউ সাহস করে এগিয়ে আসেননি। পরে একজন সাংবাদিক ও একজন পুলিশ সদস্য উপস্থিত হলে পরিস্থিতি সাময়িক নিয়ন্ত্রণে আসে। কিন্তু পুরো ঘটনার পরও গ্যাং সদস্যরা ছিল বেপরোয়া।
‘এখনো কাঁপছি’ — নিশাত
প্রশ্ন করা হলে কাঁপা কণ্ঠে নিশাত বলেন, ‘ভেবেছিলাম, মেঘনার পানিতেই মরে যাব। কিন্তু তখন নদীতেই বেশি নিরাপদ মনে হচ্ছিল।’ ওমরের কণ্ঠে কেবল একটাই প্রশ্ন—‘আমরা কি কোনোদিন স্কুলে নিরাপদে যেতে পারব না?’
অপরাধ বিশ্লেষকদের মতে, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যেভাবে কিশোর গ্যাংয়ের প্রভাব বাড়ছে, তা ভয়ংকর। শিশুদের এই অপরাধচক্রে ঠেলে দিচ্ছে কিছু প্রভাবশালী মহল, যারা তাদের স্বার্থে ব্যবহার করছে। সময় থাকতেই যদি অভিভাবক, শিক্ষক ও প্রশাসন একযোগে না জাগে—তবে ভবিষ্যতে এই গ্যাং সংস্কৃতি রূপ নেবে সামাজিক দুর্যোগে।
বিআরইউ