নাগরপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি
এপ্রিল ২৬, ২০২৫, ০৩:৪৭ পিএম
নাগরপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি
এপ্রিল ২৬, ২০২৫, ০৩:৪৭ পিএম
টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলায় বিদ্যুৎ বিপর্যয় নিত্যদিনের একটি সমস্যায় পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের ফলে প্রায় কয়েক লাখ মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। বিশেষ করে দুপুর ও সন্ধ্যার সময়ের বিদ্যুৎ বিপর্যয় জনজীবনকে অতিষ্ঠ করে তুলছে।
শহর থেকে গ্রাম—সব জায়গায় এক চিত্র। বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই থমকে যায় স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। প্রচণ্ড গরমে শিশু থেকে বৃদ্ধ সবাই হাঁসফাঁস করছে। বিদ্যুৎ না থাকায় বন্ধ হয়ে যাচ্ছে পানির মোটর, ফ্রিজ, ফ্যানসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি। কৃষকরা শঙ্কিত হচ্ছেন শস্যচাষ নিয়ে, কারণ সেচ ব্যবস্থায় বিঘ্ন ঘটছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, বিক্রি কমে যাচ্ছে এবং পণ্য নষ্ট হচ্ছে।
স্থানীয় মুদি দোকানি মো. সুজন মিয়া বলেন, "প্রতিদিন এতবার বিদ্যুৎ চলে যায় যে ফ্রিজে রাখা দুধ, বরফ ও অন্যান্য দ্রব্য পচে যাচ্ছে। দিন দিন লোকসান হচ্ছে।"
একটি বড় সমস্যা হলো—লোডশেডিংয়ের বিষয়ে গ্রাহকদের কোনো পূর্বঘোষণা, সময়সূচি বা জরুরি নোটিশ দেওয়া হচ্ছে না। বিদ্যুৎ কখন যাবে এবং কত ঘণ্টা থাকবে না, তা জানা যাচ্ছে না। হঠাৎ হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে গিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আসছে না। কোথাও দিনে ৪ ঘণ্টা, কোথাও আবার ৬-৮ ঘণ্টা পর্যন্ত লোডশেডিং হচ্ছে, যা গ্রাহকদের চরম অনিশ্চয়তায় ফেলেছে।
একজন ক্ষুব্ধ গ্রাহক বলেন, "আমরা তো জানিই না কখন বিদ্যুৎ যাবে। নোটিশও দেয় না কেউ। জরুরি কাজ, পড়াশোনা, ব্যবসা—সবই বিঘ্নিত হচ্ছে।"
লোডশেডিংয়ের কারণে কৃষকরাও পড়েছেন মারাত্মক সমস্যায়। সেচ পাম্প বন্ধ থাকায় মাঠে জমির পানি দিতে পারছেন না তারা। এতে আমন, গ্রীষ্মকালীন সবজি এবং অন্যান্য ফসলের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। কৃষক মোঃ হালিম মিয়া বলেন, "আমরা যখন জমিতে সেচ দেই, ঠিক তখনই বিদ্যুৎ চলে যায়। দুই-তিন ঘণ্টা অপেক্ষা করেও আবার বিদ্যুৎ পাচ্ছি না। সময়মতো পানি না দিলে আমাদের ফসল শুকিয়ে যাবে। এরকম চলতে থাকলে বড় ক্ষতির মুখে পড়বো।"
এ বছর এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে কয়েকশ শিক্ষার্থী। বিদ্যুতের ঘন ঘন বিঘ্নে তাদের পড়াশোনা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
এসএসসি পরীক্ষার্থী মো. জিদান আহমেদ বলেন, "প্রতিদিন সন্ধ্যার পর বিদ্যুৎ চলে যায়। গরমে ঘুমাতে পারি না, আবার মনোযোগ দিয়ে পড়তেও পারি না। পরীক্ষার আগে এমন হলে আমরা কীভাবে ভালো প্রস্তুতি নেবো?"
শুধু শিক্ষার্থী নয়, অভিভাবকরাও দুশ্চিন্তায় পড়েছেন সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে। এক অভিভাবক আঃ রাজ্জাক বলেন, "আমার সন্তান এবার এসএসসি দিচ্ছে। কিন্তু বিদ্যুতের জন্য ঠিকমতো পড়তে পারছে না। গরমে অসুস্থও হয়ে পড়ছে। প্রশাসনের উচিত শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনায় নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া।"
উপজেলার সচেতন মহল বলছে, নাগরপুরের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ উপজেলায় দিনের পর দিন এমন বিদ্যুৎ সমস্যা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। দ্রুত সমস্যার সমাধান না হলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে শিক্ষা, কৃষি ও স্থানীয় অর্থনীতি। স্থানীয় জনপ্রশাসনের দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
নাগরপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ডিজিএম মোঃ শফিকুল ইসলাম বলেন, "বর্তমানে জাতীয় গ্রিড থেকে সরবরাহ ঘাটতির কারণে লোডশেডিং দেওয়া হচ্ছে। এটি কেবল নাগরপুরে নয়, সারাদেশেই পরিস্থিতি একই রকম। আমরা চেষ্টায় আছি যেন যতটা সম্ভব ভোগান্তি কম হয়। দ্রুত পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে আশা করছি।"
ইএইচ