সারোয়ার হোসেন, তানোর
এপ্রিল ২৭, ২০২৫, ০৭:৪০ পিএম
সারোয়ার হোসেন, তানোর
এপ্রিল ২৭, ২০২৫, ০৭:৪০ পিএম
তীব্র তাপপ্রবাহ উপেক্ষা করে রাজশাহীর তানোরে বিলকুমারী বিলের বোরো ধান কাটা শুরু হয়েছে। প্রতিটি জমির ধান পেকে গেছে, তবে প্রচণ্ড রোদের কারণে শরীর থেকে পানি বেরিয়ে পড়ছে। এ কারণে ভোর থেকে সকাল সাড়ে ১১ টা পর্যন্ত শ্রমিকরা ধান কাটতে পারছেন। ১২ টা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত রোদের তীব্রতায় তারা জমিতে কাজ করতে পারছেন না। তবে বিকেল চারটার পর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ধান কাটার কাজ চলছে। ফলন ভালো হওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন বিলপাড়ের কৃষকরা।
বিলের জমিতে ধান কেটে শ্রমিকরা মাথায় বা ভারে করে সড়কে এনে রাখছেন। কিছু শ্রমিক ধান বোঝা বহন করে সড়কের দুপাশে গাছের নিচে শরীর শীতল করার চেষ্টা করছেন। প্রচণ্ড রোদের কারণে সকাল ১১ টা থেকে দুপুর ৩ টা পর্যন্ত রাস্তায় যানবাহন কম দেখা যাচ্ছে। যদিও ধান কাটা শ্রমিকরা রোদের মধ্যে সারাদিন কাজ করছেন, রাতে শীতল আবহাওয়ার কারণে তারা ভালোভাবে ঘুমাতে পারছেন।
ইতিপূর্বেই বহিরাগত শ্রমিকরা ধান কাটার জন্য আসেন। তারা ধান কাটার মূল ভরসা।
সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার চান্দুড়িয়া ইউপি, রাতৈল, দেওতলা, গাগরন্দ, তানোর পৌর এলাকা, মাসিন্দা, হাবিবনগর, আকচা, বুরুজ, ভদ্রখন্ড, গোকুল, সুমাসপুরসহ বিভিন্ন গ্রামে বিলের জমিতে ধান কাটার কাজ চলছে। কামারগাঁ, দমদমা, শ্রীখন্ডা, মজুমদার পাড়া, বাতাসপুরসহ আরো অনেক এলাকায় শ্রমিকরা ধান কাটা শুরু করেছেন।
ধানতৈড় গ্রামের কৃষক মুনসুর জানান, অনেকের ধান কাটা হয়ে গেছে, তবে মাড়াই হয়নি। তার ছোট ভাই আফসার দুই বিঘা জমির ধান মাড়াই করে ২০ মন করে ৪০ মন ফলন পেয়েছেন। তিনি জানান, যারা নিজস্ব জমিতে আবাদ করেছেন তাদের রোপণ থেকে মাড়াই পর্যন্ত খরচ হবে ২০ হাজার টাকা, আর যারা লীজ নিয়ে আবাদ করেছেন তাদের খরচ হবে ২৫ হাজার টাকা।
স্থানীয় শ্রমিক মোস্তফা জানান, তারা মজুরী হিসেবে ধান কাটছেন। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কাটা যায়, কারণ প্রচুর রোদ, জমিতে টিকতে কষ্ট হয়। তবে তারা যে জমিতে ধান কাটছেন, সেগুলোতে প্রায় ২৫ মন করে ফলন হবে। এক বিঘা জমির ধান কাটতে চারজন শ্রমিক লাগে, এবং যেসব জমিতে ধান পড়ে আছে সেখানে ৫/৬ জন শ্রমিক প্রয়োজন হয়।
জানা গেছে, তানোর উপজেলায় বরাবরের মতোই আগাম বোরো চাষ করা হয়। উপরের মাঠের জমিতে আলু উত্তোলনের পর বোরো ও আউশ চাষাবাদ করা হয়। এবার উপজেলায় বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৪ হাজার ২০০ হেক্টর জমি, কিন্তু চাষাবাদ হয়েছে ১৪ হাজার ১৩০ হেক্টর জমিতে। ৭০ হেক্টর জমিতে কম বোরো চাষ হয়েছে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, ১৫ মার্চের আগে যে জমিতে ধান রোপণ করা হয়, তা বোরো আবাদ হিসেবে ধরা হয়, এবং ১৫ মার্চের পর যেসব জমি রোপণ করা হয়, সেগুলো আউশ চাষ হিসেবে ধরা হয়। এবারে ৭ হাজার ৭৫০ হেক্টর জমিতে আউশ চাষ হয়েছে।
উপজেলা কৃষি অফিসার সাইফুল্লাহ আহম্মেদ জানান, বোরো রোপণের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূল রয়েছে। বিলের বোরো ধানে রোগবালাই তেমন ছিল না, দু-এক জায়গায় হলেও মাঠ কর্মীদের সঠিক পরামর্শে তা দূর করা হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, এবারও বিলের জমিতে ভালো ফলন হবে।
ইএইচ