সালথা (ফরিদপুর) প্রতিনিধি:
এপ্রিল ২৯, ২০২৫, ০৩:৩৩ পিএম
সালথা (ফরিদপুর) প্রতিনিধি:
এপ্রিল ২৯, ২০২৫, ০৩:৩৩ পিএম
সরকারি প্রকল্পের আওতায় ফরিদপুরের সালথা উপজেলায় পেঁয়াজ সংরক্ষণের মডেল ঘর নির্মাণে উঠেছে ভয়াবহ অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ। অভিযোগ রয়েছে, প্রকৃত কৃষকদের বাদ দিয়ে টাকা লেনদেনের মাধ্যমে অনায্যভাবে অযোগ্যদের ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ঘর পেতে নেওয়া হচ্ছে ১০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ। শুধু তাই নয়, এসব ঘরের নির্মাণকাজও এখনো সম্পূর্ণ হয়নি, যদিও পেঁয়াজ উঠেছে প্রায় এক মাস আগে।
জানা গেছে, কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের ‘কৃষক পর্যায়ে পেঁয়াজ ও রসুন সংরক্ষণ পদ্ধতি আধুনিকায়ন এবং বিপণন কার্যক্রম উন্নয়ন প্রকল্প’-এর আওতায় সালথা উপজেলায় ৪৫টি মডেল ঘর নির্মাণের বরাদ্দ দেওয়া হয়। প্রতিটি ঘরের নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৯০ হাজার টাকা। এসব ঘরে ৩৭৫ বর্গফুট আয়তনের আধুনিক স্টোরেজ সিস্টেম থাকার কথা, যা ৯ মাস পর্যন্ত পেঁয়াজ সংরক্ষণে সক্ষম।
কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, বেশিরভাগ ঘরের কাজই শেষ হয়নি, কিছু ঘরের কাজ শুরুই হয়নি। স্থানীয় চাষিরা বলছেন, ঘর পেতে হলে দিতে হয় মোটা অঙ্কের টাকা, তবেই বরাদ্দ মেলে। ফলে প্রকৃত কৃষকরা বঞ্চিত হলেও টাকা দেওয়া অযোগ্যরাই পাচ্ছেন ঘর।
৪৫টি ঘরের আওতায় ৪৫০ জন কৃষককে প্রশিক্ষণ দেওয়ার কথা থাকলেও বাস্তবে প্রশিক্ষণ পেয়েছেন মাত্র ৪০-৫০ জন। ফলে প্রশিক্ষণ বাবদ বরাদ্দ থাকা ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে।
সালথার যদুনন্দি ইউনিয়নের কৃষক শাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘ঘর পাওয়ার আশায় পুরোনো ঘর মেরামত করিনি। কিন্তু টাকা না দেওয়ায় আমার ঘরের কাজই শুরু হয়নি। বাধ্য হয়ে পেঁয়াজ কম দামে বিক্রি করে দিয়েছি। কয়েক লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।’
আরেক কৃষক রেজাউল সেক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আমি খুশি হয়ে ১০ হাজার টাকা দিয়েছি। অনেকেই ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত দিয়েছেন।’
কানইড় গ্রামের শাহিদ মিয়া বলেন, ‘টাকা ছাড়া কি ঘর পাওয়া যায়? ঘর পেতে হলে অন্তত ৫০ হাজার টাকা লাগে।’
কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের মাঠ কর্মকর্তা শাহজাহান আলী ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘চাহিদার তুলনায় ঘর বরাদ্দ কম ছিল, তাই সবাইকে দেওয়া যায়নি।’
সালথা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুদর্শন শিকদার বলেন, ‘আমরা যাচাই-বাছাই করে ৩০ জন প্রকৃত কৃষকের তালিকা পাঠালেও সেই তালিকা থেকে কাউকে ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়নি।’
সালথা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আনিছুর রহমান বালী বলেন, ‘আমাদের কাছে কেউ লিখিত অভিযোগ দিলে তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
স্থানীয় কৃষকেরা বলছেন, শুধু মডেল ঘর নির্মাণ নয়, এর পেছনে থাকা দুর্নীতিবাজদের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। একইসঙ্গে ঘর বরাদ্দের স্বচ্ছতা ও কৃষকদের প্রশিক্ষণের বিষয়টিও নিশ্চিত করা জরুরি।
বিআরইউ