সেপ্টেম্বর ৫, ২০২২, ০৬:১৪ পিএম
ইচ্ছাকৃত ঋণ খেলাপীদের বিরুদ্ধে কঠোর হচ্ছে রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকগুলো। ইচ্ছাকৃত খেলাপী ঋণ গ্রহীতাদের বিরুদ্ধে ব্যাংকগুলোর নমনীয়তা নিয়ে সমালোচনার প্রেক্ষাপটে ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে জনতা ও রুপালী ব্যাংক।
সম্প্রতি জনতা ব্যাংকের পাঁচজন এবং রূপালী ব্যাংকের চারজন ঋণখেলাপিকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
রুপালী ব্যাংকের টিসিবি ভবন কর্পোরেট শাখার দীর্ঘ দিনের খেলাপী গ্রাহক এন.ডি গ্রুপের চেয়ারম্যান মাহমুদা জামানকে সম্প্রতি গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এর মধ্যে দিয়ে বিষয়টি আলোচনায় আসে।
আদালত সূত্রে জানা যায়, রূপালী ব্যাংকের টিসিবি ভবন কর্পো. শাখার গ্রাহক এন.ডি গ্রুপের কাছে ৪৯ কোটি ৪৫ লাখ টাকা দীর্ঘদিন ধরে অনাদায়ী ছিল। ব্যাংকের শাখা থেকে ঋণ আদায়ে বারবার যোগাযোগ করা হলেও কোনো সাড়া মেলেনি।
পরে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ অর্থ ঋণ আদালত আইন, ২০০৩ এর ৩৪(১) ধারা মোতাবেক ৬ মাসের দেওয়ানী আটকাদেশ প্রদান, দায়িকের গ্রেপ্তারী ওয়ারেন্ট ফৌজদারী কার্যবিধির ৭৫ ধারায় অর্থজারী মামলা (৩০৬/২০২১) দায়ের করে।
মামলার নথি পর্যালোচনা করে আদালত এন.ডি গ্রুপের বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে প্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। এর প্রেক্ষিতে গত ২৬ আগস্ট তুরাগ থানা পুলিশ এন.ডি গ্রুপের ঋণের জামিনদার মো. আলমগীর হোসেন, মাহবুব আলম ও এইচ এম শহীদুল আলমকে (মানিক) গ্রেপ্তার করে।
সবশেষ গত ৩ সেপ্টেম্বর খিলক্ষেত থানা পুলিশ মাহমুদা জামানকে তার নিজ বাসা ক্যান্টনম্যান্ট আবাসিক এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করে। আদালত আসামিদের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, যে কোনো সময় গ্রেপ্তার হতে পারেন আরও কয়েকজন খেলাপি। গ্রেপ্তার এড়াতে তারা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন, অনেকে আছেন আত্মগোপনে।
ঋণের নথি পর্যালোচনায় জানা যায়, এন.ডি গ্রুপের চেয়ারম্যান মাহমুদা জামান এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক আহাদুজ্জামান মূলত গার্মেন্টস ব্যবসায়ী।
মেয়াদী ঋণ, সিসি (হা), এলটিআর, ফোর্সড লোন ও কার লোন বাবদ গ্রুপটির তিনটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান যথাক্রমে- এন.ডি প্রিন্টিং এন্ড এমব্রয়ডারি লি., এন.ডি এ্যাপারেলস লি. এবং এন.ডি নিট কম্পোজিট লি. সহ ব্যবস্থাপনা পরিচালক আহাদুজ্জামান (কার লোন) এবং চেয়ারম্যান মাছুমুজ্জামান (কার লোন) সব মিলে গ্রুপটির নামে মোট ১০টি ঋণ হিসাব রয়েছে।
এসব ঋণ ২০১২ সালের ২৭ ডিসেম্বর প্রথম দফায় এবং ২০১৩ সালের ৩০ ডিসেম্বর দ্বিতীয় দফায় পুনঃতফশিল করা হয়।
মেয়াদী-১ ঋণে ৩১ মার্চ ২০১৩ তারিখের স্থিতি ৭ কোটি ৬২ লাখ, মেয়াদী-২ ঋণে ৩১ মার্চ ২০১৩ তারিখের স্থিতি ২৯ কোটি ৪৭ লাখ, সিসি(হা) ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৩ তারিখের স্থিতি ১ কোটি ৮৬ লাখ, এলটিআর ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৩ তারিখের স্থিতি ২ কোটি ৩৪ লাখ, ফোর্সড লোন ৩১ মার্চ ২০১৩ তারিখের স্থিতি ৩ কোটি ৫৪ লাখ ও কার লোন ৩১ অক্টোবর ২০১৩ তারিখের স্থিতি ১ কোটি ১৫ লাখ টাকা।
খেলাপীর তারিখে মোট মূল ঋণ ৪৮ কোটি ২৮ লাখ টাকা এবং বর্তমান স্থিতির পরিমাণ ৪৯ কোটি ৪৫ লাখ টাকা।
রূপালী ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, বারবার তাগাদা দেয়া সত্বেও দীর্ঘদিন যাবৎ যে সমস্ত গ্রাহক ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ঋণের টাকা পরিশোধ করছেন না তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিচ্ছে রূপালী ব্যাংক।
এ বিষয়ে রূপালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর বলেন, খেলাপি ঋণ আদায়ে সব ধরণের পদক্ষেপ নেয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, যেকোন মূল্যে ব্যাংকের খেলাপী ঋণের পরিমাণ কমিয়ে আনা হবে এবং ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নীতি অব্যাহত থাকবে।
টিএইচ