অক্টোবর ১৬, ২০২২, ০৯:২৩ পিএম
চলতি অর্থবছরের তৃতীয় মাসে ব্যাংক ঋণের মাত্রা বাড়িয়েছে সরকার। প্রথম দুইমাসে ঋণ না নিয়ে উল্টো পরিশোধ করেছিল। কিন্তু হঠাৎ উল্টোচিত্র দেখা যাচ্ছে। সেপ্টেম্বর মাসে ব্যাংক খাত থেকে ঋণের পরিমাণ ১৩ হাজার ৪১৮ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে।
খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্যয় সংকোচন নীতির কারণে অর্থবছরের শুরু দিকে সরকারের অর্থের চাহিদা কম ছিল। এখন কিছু প্রকল্প চালু হয়েছে। এছাড়া সরকারের খাদ্য ও জ্বালানি আমদানিতে আগের চেয়ে বেশি অর্থ খরচ করতে হচ্ছে। তবে যে হারে অর্থ খরচ বেড়েছে সেই হারে আয় না বাড়ায় ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে হচ্ছে। তাই বাধ্য হয়ে ব্যাংক ঋণে ঝুঁকছে সরকার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সবশেষ তথ্য বলছে, ২৯ সেপ্টেম্বর শেষে সরকারের ব্যাংক খাতে নিট ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৮২ হাজার ৭১২ কোটি টাকায়। এক মাস আগে ৩০ আগস্ট এ ঋণের পরিমাণ ছিল ২ লাখ ৬৯ হাজার ২৩০ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক মাসে সরকার ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছে ১৩ হাজার ৪১৮ কোটি টাকা।
হঠাৎ করে সরকারের ঋণ বাড়ায় চিন্তিত হওয়ার কারণ নেই বলে মত বিশ্লেষকদের। তারা বলছেন, সরকার বাজেটে যে পরিমাণ ব্যাংক ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে তাতে বর্তমানে নেয়া ঋণ উদ্বেগের কারণ নয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, চলতি (২০২২-২৩) অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে ব্যাংক খাত থেকে ঋণ না নিয়ে উল্টো পরিশোধ করেছিল সরকার। গত ৩০ আগস্ট পর্যন্ত দুই মাসে ব্যাংক থেকে সরকারের নিট ঋণ ৩ হাজার ১৩৪ কোটি টাকা কমে ২ লাখ ৬৭ হাজার ৫২ কোটি টাকায় নেমে আসে। গত জুন শেষে স্থিতি ছিল ২ লাখ ৭০ হাজার ১৮৬ কোটি টাকা।
চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট ঘাটতি পূরণে ব্যাংক ১ লাখ ৬ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকার ব্যাংক ঋণ নেবে বলে লক্ষ্য ঠিক করছে সরকার। এই অংক চলতি অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২৯ হাজার ৮৮২ কোটি টাকার বেশি। আগের অর্থবছরের বাজেটে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ৭৬ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা ঋণ নেয়ার লক্ষ্য ছিল।
অন্যদিকে চলতি অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে ৩৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে।
জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ৭ হাজার ১৮ কোটি ৪৩ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র জমা বা বিক্রি হয়েছে। এর মধ্যে মূল টাকা ও মুনাফা পরিশোধ করা হয়েছে ৬ হাজার ৬২৫ কোটি ৩২ টাকা। সঞ্চয়পত্রের মূল টাকা ও মুনাফা পরিশোধের পর এ খাতে সরকারের নিট ঋণ দাঁড়িয়েছে ৩৯৩ কোটি ১১ লাখ টাকা।
এদিকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পতনের মধ্যেও ডলার বিক্রি বাড়িয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে ৪ অক্টোবর পর্যন্ত বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে ৩৭৫ কোটি ডলারের বেশি বিক্রি করেছে। এর বিপরীতে বাজার থেকে উঠে এসেছে ৩৬ হাজার কোটি টাকার বেশি। মূলত আমদানিতে খরচ বাড়লেও রপ্তানি ও রেমিট্যান্সে পতন এবং অনেক বিদেশি ব্যাংকে ঋণসীমা কমানোয় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
ইএফ