ডিসেম্বর ২৯, ২০২২, ০৯:১০ পিএম
ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে করোনার মহামারিতে বিধ্বস্ত বিশ্ব যখন ধীরে ধীরে ছন্দে ফেরার প্রত্যাশা করছিল তখনি ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ সেই গতি মন্থর করে দেয়। ইউক্রেন-রাশিয়া সংঘাত শুরুর পর থেকেই অস্থিরতা দেখা দেয় বিশ্বের পুঁজিবাজারে। দেশের পুঁজিবাজারও এ অবস্থা থেকে বাদ পড়েনি। বিভিন্ন কারণে বাজার-চিত্র পাল্টে যেতে থাকে। লেনদেন ও সূচক কমতে থাকে। টানা দরপতনে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ে।
বাজারে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের পক্ষ হতে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়। পুঁজিবাজারের চলমান দরপতনের সাথে যুক্ত হয় বিশ্ব অর্থনীতির নানামূখী সংকটের প্রভাব। বিশ্বজুড়ে ডলারের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাবে বিপাকে পড়ে ছোট অর্থনীতির দেশগুলো। অর্থনীতিতে দেখা দেয় অস্থিরতা। বৈশ্বিক অর্থনীতির বৈরী পরিস্থিতির প্রভাবে বাংলাদেশের অর্থনীতির বিভিন্ন আর্থিক সূচকেও নেতিবাচক ধারা পরিলক্ষিত হয়। এর ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতিও অনেকটা চাপের মুখে পড়ে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার নানামুখী উদ্যোগে বছরের প্রথমভাগে (জানুয়ারি এবং ফেব্রুয়ারি) এবং শেষের দিকে আগষ্ট, সেপ্টেমবর এবং অক্টোবর মাসে পুঁজিবাজারে যে উত্থান দেখা দিয়েছিল, তার স্থায়িত্ব বজায় না থাকায় শেষ দুই মাসের অস্থিরতা নিয়েই শেষ হয়েছে ২০২২ সাল। তবে সদ্য বিদায়ী বছরে নানা সংকটের মধ্যেও পুঁজিবাজারে বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য ঘটনা রয়েছে।
পুঁজিবাজারে প্রথমবারের মতো ইসলামি সুকুক বন্ড তালিকাভুক্তির মাধ্যমে পুঁজিবাজারে সম্ভাবনার এক নতুন দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। ৩ লাখ ১৬ হাজার ৮০৮ কোটি টাকা বাজার মূলধন নিয়ে ডিএসই’র ট্রেডিং প্ল্যাটফর্মে বহুল প্রতিক্ষিত ২৫০টি সরকারি সিকিউরিটিজের লেনদেন শুরু হয়েছে। পুঁজিবাজারে অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ড (এটিবি) লেনদেন শুরুর অপেক্ষায়। এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ড (ইটিএফ) চালুর কার্যক্রমও চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। পুঁজিবাজারে রিয়েল এস্টেট ইনভেস্টমেন্ট ট্রাস্ট (আরইআইটি) প্রবর্তনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ওটিসি প্লাটফর্মে তালিকাভুক্ত বেশ কিছু কোম্পানিতে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ আটকে আছে, এ কারণে কিছু কোম্পানিকে স্মল ক্যাপিটাল প্লাটফর্মে স্থানান্তর করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
পাশাপাশি বেশ কিছু কোম্পানিকে এক্সিট প্ল্যানের মাধ্যমে বাজার থেকে বের হওয়ারও সুযোগ দেয়া হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে ডিএসই ২০২২ সালে দুটো কোম্পানির (যশোর সিমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড এবং আরবি টেক্সটাইল লিমিটেড) বিনিয়োগকারীদের অর্থ বুঝিয়ে দিয়ে বের হয়ে যাওয়ার কার্যক্রম শুরু করেছে।
স্টার্টআপ খাতের উন্নয়নে যৌথ গবেষনা পরিচালনা ও পারস্পরিক অভিজ্ঞতা বিনিময়, পুঁজিবাজার থেকে মূলধন উওোলনের বিষয়ে স্টার্টআপ উদ্যোক্তাদের অবহিতকরণের উদেশ্যে যৌথ প্রচারণা, আইপিও প্রক্রিয়া সম্পর্কিত তথ্য, নিয়মনীতি আদান প্রদানের সুবিধার্থে একটি হেল্প ডেক্স প্রতিষ্ঠা এবং আইপিও সম্ভাব্য প্রযুক্তি উন্নয়ন বিষয়ে পারস্পরিক সহযোগীতাসহ সভা, সেমিনার, কনফারেন্স আয়োজনের লক্ষে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ও স্টার্টআপ বাংলাদেশ লিমিটেডের মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে।
শেয়ারবাজারের টানা পতন থামাতে দফায় দফায় স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা ও বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়ার পরও দরপতন ঠেকাতে না পেরে আবারও ফ্লোর প্রাইস বা শেয়ারের দামের সর্বনিম্ন সীমা বেঁধে দেয়া হয়েছে।
২০১০ সালে শেয়ারবাজারে ধসের আগে থেকেই পুঁজিবাজার-সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যাংকের বিনিয়োগ হিসাবের ক্ষেত্রে শেয়ারের ক্রয়মূল্যেকে বাজার মূল্য হিসেবে বিবেচনার দাবি জানিয়ে আসছিল। এক যুগের বেশি সময় ধরে এ দাবি অমীমাংসিত ছিল। এ অবস্থায় বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন গভর্ণর হিসেবে আব্দুর রউফ তালুকদার দায়িত্ব নেয়ার পর বিষয়টি সমাধানের উদ্যোগ নেন। সে অনুযায়ী গত ১৭ জুলাই ২০২২ অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের মতামত চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মতিক্রমে ৪ আগষ্ট ২০২২ তারিখে শেয়ারের ক্রয়মূল্যকে ‘বাজারমূল্য’ ধরে ব্যাংকের বিনিয়োগসীমা বা এক্সপোজার লিমিট হিসাব করার নির্দেশনা জারী করে বাংলাদেশ ব্যাংক।
২টি ট্রেকহোল্ডার কোম্পানী এপিআই কানেক্টিভিটি স্থাপন করে তাদের নিজস্ব ওএমএস’র মাধ্যমে লেনদেন শুরু করছে। এছাড়াও ডিএসই থেকে ১১টি ট্রেকহোল্ডার কোম্পানিকে এপিআই ইউএটি সংযোগ প্রদান করা হয়েছে। আশা করা যায় যে, অচিরেই এসকল কোম্পানি নিজস্ব অর্ডার ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের (ওএমএস) মাধ্যমে সরাসরি লেনদেন করতে পারবে। এরই ধারাবাহিকতায় পর্যায়ক্রমে আগ্রহী সকল ট্রেকহোল্ডার কোম্পানিকে এ সুযোগের আওতায় আনার পরিকল্পনা রয়েছে।
বাজারে তারল্য সরবরাহ বাড়াতে ব্লক মার্কেটে ফ্লোর প্রাইস বা সর্বনিম্ন দামের চেয়ে ১০ শতাংশ কম দামে শেয়ার বেচাকেনা করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বছরের একেবারে শেষভাগে শেয়ারবাজারে লেনদেনের গতি ফেরাতে তালিকাভুক্ত ১৬৯টি কোম্পানি ও মিউচ্যুায়াল ফান্ডের ওপর আরোপিত ফ্লোর প্রাইস বা সর্বনিম্ন মূল্যস্তর তুলে নেয়া হয়, তবে একদিনে সর্বোচ্চ ১ শতাংশের বেশী কমতে পারবে না।
ডিএসই’র বর্তমান বোর্ডের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য হল এক্সচেঞ্জের জন্য একটি আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন আধুনিক ডেটা সেন্টার তৈরি করা। এই উদ্দেশ্যে ট্রেকহোল্ডারদের ট্রেডিংয়ের সুবিধার্থে ম্যাচিং ইঞ্জিন ও অর্ডার ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (ওএমএস) হোস্ট করার জন্য ডিএসই টাওয়ার নিকুঞ্জে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ১০৬টি রেকের সুবিধা সম্বলিত একটি টায়ার-৩ ডেটা সেন্টারের কাজ চুড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ডেটা সেন্টারের হার্ডওয়ার স্থাপনের কাজ প্রায় সম্পন্ন হয়েছে। ডিএসই মনে করছে, প্রয়োজনীয় সফট্ওয়্যার সংযোজনের পর শীঘ্রই ডাটা সেন্টার চালু করা সম্ভব হবে।
জাতীয় অর্থনীতির নিরবিচ্ছিন্ন প্রবৃদ্ধির সাথে সাথে দেশের পুঁজিবাজারে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগও উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ডিএসই’র সেবা ও কার্যক্রম ব্যাপকভাবে প্রযুক্তি নির্ভর হওয়ায় প্রযুক্তিগত ঝুঁকিও অনেক বেশি। কোন দুর্ঘটনা বা প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেশের পুঁজিবাজারের কার্যক্রমকে অপ্রত্যাশিত বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দিতে পারে। সম্ভাব্য ঝুঁকি ও বিপর্যয় রোধের মাধ্যমে পুঁজিবাজারের কার্যক্রম নিরবচ্ছিন্নভাবে সচল রাখতে মোনায়েম বিজনেস ডিসট্রিক্ট এ ২৪ রেকের একটি ডিজাস্টার রিকভারি (ডিআর) সাইট স্থাপনের কাজও প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। ডেটা সেন্টার এবং ডিআর প্রবর্তনের মাধ্যমে ডিএসই অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে প্রবেশ করবে এবং ট্রেডিং প্ল্যাটফর্মের সুরক্ষা নিশ্চিত হবে।
পুঁজিবাজারের বিগত বছরের অবস্থা এবং সামনের বছরের বেশকিছু পরিকল্পনা নিয়ে ডিএসই’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) এম. সাইফুর রহমান মজুমদার, এফসিএ, এফসিএমএ বলেন, দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির কারণে বিশেষ করে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষিতে বৈশ্বিক অর্থনীতি টানাপোড়নের মধ্যদিয়ে যাচ্ছিল, এরই ধারাবাহিকতায় বছরের শেষভাগে দেশের পুঁজিবাজার একটা বিয়ারিশ ট্রেন্ড পার করে। আশা করি ২০২৩ সালের শুরুতেই এই সংকট কিছুটা কাটিয়ে উঠা সম্ভব হবে।
এর মূল কারণ বাংলাদেশের অর্থনীতি তার বৈশিষ্টগত (জবংরষরবহপব) সহনশীলতার কারণে বিভিন্ন সূচকের অগ্রগতি পরিলক্ষিত হচ্ছে। তাছাড়া ২০২৩ সালের শুরুতেই ডিএসই’র অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ড চালু করণ, মোবাইল অ্যাপস এর ক্যাপাসিটি বৃদ্ধি, বন্ড মার্কেটের জন্য স্বতন্ত্র অর্ডার ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম প্রতিষ্ঠাসহ বাজারের অধিকতরস্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং গুণগত সম্প্রসারণের জন্য ব্যপক কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছে। আমরা আশাকরি পুঁজিবাজারে এর সুফল বয়ে আনবে।
বাজার-চিত্র ২০২২
২০২২ সাল শেষে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত সিকিউরিটিজের সংখ্যা দাঁড়ায় ৬৫৮টি। এর মধ্যে কোম্পানি ৩৫৪টি, মিউচ্যুয়াল ফান্ড ৩৭টি, ডিবেঞ্চার ৮টি, গভর্ণমেন্ট ট্রেজারি বন্ড ২৫০টি এবং করপোরেট বন্ড ৯টি। যার বাজার মূলধনের কাঠামো কোম্পানি ৫৭.৭৮ শতাংশ, মিউচ্যুয়াল ফান্ড ০.৫১ শতাংশ, করপোরেট বন্ড ০.৪৪ শতাংশ, ডিবেঞ্চার ০.০১ শতাংশ এবং গভর্ণমেন্ট ট্রেজারি বন্ড ৪১.২৭ শতাংশ।
এসএমই
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২১ সালে ৬টি এসএমই কোম্পানি নিয়ে স্মল ক্যাপিটাল প্ল্যাটফর্মে লেনদেনের শুভসুচনা করে। ২০২২ সালের শেষে এসএমই প্ল্যাটফর্মে তালিকাভুক্ত কোম্পানির সংখ্যা দাঁড়ায় ১৫টি এবং মোট লেনদেনের পরিমাণ দাঁড়ায় ২৪,৪৯৫.৮৩ মিলিয়ন টাকা। যা মোট লেনদেনের ১.০৪ শতাংশ। বছর শেষে এসএমই প্ল্যাটফর্মে তালিকাভুক্ত কোম্পানির বাজার মূলধনের পরিমাণ দাঁড়ায় ১৫৯০২.০৯ মিলিয়ন টাকা। ২০২২ সালে এসএমই উদ্যোক্তাগণ ৬টি কোম্পানির (মামুন এগ্রো প্রোডাক্টস লিমিটেড, কৃষিবিদ সিড লি., স্টার অ্যাডেসিভস লিমিটেড, বিডি পেইন্টস লিমিটেড, আছিয়া সি ফুডস লি. এবং নিয়ালকো অ্যালোস লিঃ) মাধ্যমে ৬১১ মিলিয়ন টাকা মূলধন উওোলন করে। অপরদিকে ২০২১ সালে ৪টি কোম্পানি ৫৩০ মিলিয়ন টাকা মূলধন উওোলন করেছিল।
মোবাইল লেনদেন
২০২২ সাল শেষে মোবাইলে লেনদেনকারীর সংখ্যা দাঁড়ায় ৭৭১০৩ জনে। ২০২২ সালে মোবাইলের মাধ্যমে মোট ১৩.১০ মিলিয়ন আদেশ প্রেরণ করে। এর মধ্যে ১০.৮৫ মিলিয়ন আদেশ কার্যকর হয়। এ বছর মোবাইলের মাধ্যমে মোট লেনদেনের পরিমাণ দাঁড়ায় ৩০০,৭৯৮.৩৬ মিলিয়ন টাকা। এর মধ্যে ক্রয়ের পরিমান ছিল ১৫৩,৫৩৪.৮৪ মিলিয়ন টাকা এবং বিক্রয়ের পরিমান ছিল ১৪৭,২৬৩.৫২ মিলিয়ন টাকা। যা মোট লেনদেনের ১২.৮৩ শতাংশ।
অপরদিকে ২০২১ সালে মোবাইলে লেনদেনকারীর সংখ্যা ছিল ৭৭০৫৮ জন। ২০২১ সালে মোবাইলের মাধ্যমে মোট ১৭.৬৪ মিলিয়ন আদেশ প্রেরণ করে। এর মধ্যে ১৩.৮৩ মিলিয়ন আদেশ কার্যকর হয়। ২০২১ সালে মোবাইলের মাধ্যমে মোট লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৪২৬,৮১৫.৯০ মিলিয়ন টাকা। যা মোট লেনদেনের ১২.০৬ শতাংশ। এর মধ্যে ক্রয়ের পরিমাণ ছিল ২১৭,৮২৬.৭০ মিলিয়ন টাকা এবং বিক্রয়ের পরিমাণ ছিল ২০৮,৯৮৯.২১ মিলিয়ন টাকা।
আইপিও
২০২২ সালে ৬টি কোম্পানি প্রাথমিক গণপ্রস্তাব বা আইপিওর মাধ্যমে ৭,১৩৭.৮১ মিলিয়ন টাকা মূলধন সংগ্রহ করে। এর মধ্যে ২টি কোম্পানি প্রিমিয়াম বাবদ মূলধন সংগ্রহ করে ৮৭৫.২০ মিলিয়ন টাকা।
এছাড়াও ১টি পারপিচ্যুয়াল বন্ড এবং ১টি মিউচ্যুয়াল ফান্ড প্রাথমিক গণপ্রস্তাব বা আইপিওর মাধ্যমে ৭৫০.০০ মিলিয়ন টাকা মূলধন সংগ্রহ করে এবং ১ পারপিচ্যুয়াল বন্ড প্রাইভেট প্লেসম্যান্টের মাধ্যমে ৪০০০ মিলিয়ন টাকা মূলধন সংগ্রহ করে। অপরদিকে, ২০২১ সালে ১৯টি সিকিউরিটিজ প্রাথমিক গণপ্রস্তাব বা আইপিও’র মাধ্যমে মোট ১৮,৫৮৪.৪০ মিলিয়ন টাকা মূলধন সংগ্রহ করা হয়। এর মধ্যে ১৪টি কোম্পানি (৩টি কোম্পানির প্রিমিয়ামসহ) ১২,৩৩৩.৬১ মিলিয়ন টাকা মূলধন উত্তোলন করে। একটি সুকুক বন্ড ৪,২৫০.৭৯ মিলিয়ন এবং ৪টি পারপিচ্যুয়াল বন্ড ২,০০০ মিলিয়ন মূলধন সংগ্রহ করেছিল।
রাইট শেয়ার ইস্যু
২০২২ সাল ১টি কোম্পানি ১০.৯৮ মিলিয়ন রাইট শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে মোট ১০৯.৮২ মিলিয়ন টাকা মূলধন সংগ্রহ করে। অপরদিকে ২০২১ সালে ২টি কোম্পানি ৫১.৮৪ মিলিয়ন রাইট শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে ৭৭৭.৬৫ মিলিয়ন টাকা মূলধন সংগ্রহ করে। এর প্রিমিয়াম বাবদ মূলধন সংগ্রহ করে ২৫৯.২২ মিলিয়ন টাকা।
ডিএসই’র ইতিহাসে তৃতীয় সর্বোচ্চ লেনদেন
কোভিড ১৯ মহামারি ও ইউক্রেন-রাশিয়া সংঘাতের কারণে বিশ্বের স্টক মার্কেটের মতো বাংলাদেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেনের গতিও কিছুটা হ্রাস পেয়েছে। ২০২২ সালে ডিএসইতে ২৪৪ কার্যদিবসে লেনদেনের পরিমাণ দাঁড়ায় ২,৩৪৪,৪৭৯.৩৭ মিলিয়ন টাকা। যা পুঁজিবাজারের ইতিহাসে তৃতীয় সর্বোচ্চ লেনদেন। যার গড় লেনদেন ৯,৬০৮.৫২ মিলিয়ন টাকা। এর আগে ২০১০ সালে গড় লেনদেন ছিল ১৬,৪৩৪.০৭ মিলিয়ন টাকা এবং ২০২১ সালে গড় লেনদেন ছিল ১৪,৭৫২.২০ মিলিয়ন টাকা।
ডিএসইর মূল্য সূচক সমূহঃ
ডিএসই ব্রড ইনডেক্স (ডিএসইএক্স) হ্রাস ৮.১৪%
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান মূল্য সূচক ডিএসই ব্রড ইনডেক্স (ডিএসইএক্স) আগের বছরের চেয়ে ৫৪৯.৮৫ পয়েন্ট বা ৮.১৪ শতাংশ হ্রাস পেয়ে ৬২০৬.৮১ পয়েন্টে দাঁড়ায়। ২০২২ সালে ডিএসইএক্স মূল্য সূচক সর্বোচ্চ ৭১০৫.৬৯ পয়েন্টে উন্নীত হয় এবং সর্বনিম্ন ছিল ৫৯৮০.৫১ পয়েন্ট।
ডিএসই ৩০ সূচক (ডিএস৩০) হ্রাস ১৩.৩২%
ডিএসই ৩০ সূচক (ডিএস৩০) ৩৩৭.২৮ পয়েন্ট বা ১৩.৩২ শতাংশ হ্রাস পেয়ে ২১৯৫.৩০ পয়েন্টে দাঁড়ায়। ২০২২ সালে ডিএস৩০ মূল্য সূচক সর্বোচ্চ ২৬৩৫.৩৮ পয়েন্টে উন্নীত হয় এবং সর্বনিম্ন ছিল ২১৪৫.২৫ পয়েন্ট।
ডিএসইএক্স শরীয়াহ্ সূচক (ডিএসইএস) হ্রাস ৫.০৫%
একই বছর ডিএসইএক্স শরীয়াহ্ সূচক (ডিএসইএস) ৭২.২৯ পয়েন্ট বা ৫.০৫ শতাংশ হ্রাস পেয়ে ১৩৫৮.৮৪ পয়েন্টে দাঁড়ায়। ২০২২ সালে ডিএসইএস মূল্য সূচক সর্বোচ্চ ১৫২২.৯৮ পয়েন্টে উন্নীত হয় এবং সর্বনিম্ন ছিল ১৩০৮.২০ পয়েন্ট।
বাজার মূলধন
২০২২ সালে ডিএসই’র ট্রেডিং প্ল্যাটফর্মে ৩,১৪০,১৪৩.২৭ মিলিয়ন টাকা বাজার মূলধন নিয়ে ২৫০টি সরকারি সিকিউরিটিজ তালিকাভুওির মাধ্যমে ১০.১০.২০২২ তারিখে বাজার মূলধনের পরিমাণ দাঁড়ায় ৭,৭২৫,১৪৪ মিলিয়ন টাকা। বছরশেষে বাজার মূলধনের দাঁড়ায় ৭,৬০৯,৩৬৮ মিলিয়ন টাকা দাঁড়ায়।
ব্লক মার্কেট
২০২২ সালে ব্লক মার্কেটে লেনদেন হয় ১৪২,৫৩১.৯৬ মিলিয়ন টাকা। যা মোট লেনদেনের ৬.০৪ শতাংশ। অপরদিকে ২০২১ সালে ব্লক মার্কেটে লেনদেনের পরিমান ছিল ১৪০,৫১০.৮৩ মিলিয়ন টাকা, যা মোট লেনদেনের ৩.৯৭ শতাংশ।
মার্কেট পিই
২০২২ সালে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ লিঃ এ তালিকাভুক্ত সিকিউরিটিজ সমূহের মূল্য আয় অনুপাত বা মার্কেট পিই দাঁড়ায় ১৪.০৮। খাতওয়ারী সর্বনিম্ন অবস্থানের দিক থেকে মূল্য আয় অনুপাত বা মার্কেট পিই ছিল ব্যাংকিং খাতের, যার মার্কেট পিই ৭.৭৩। মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মার্কেট পিই ৯.১৫, বিবিধ খাতের মার্কেট পিই ১১.৭৭, ফুয়েল এন্ড পাওয়ার খাতের ১২.০৪, টেলিকমিউনিকেশন খাতের মার্কেট পিই ১৫.১০, সিমেন্ট খাতের মার্কেট পিই ১৫.৮১, ইন্স্যুরেন্স খাতের মার্কেট পিই ১৭.১৩, টেক্সটাইল খাতের মার্কেট পিই ১৭.৩০, ফার্মাসিউটিক্যালস এন্ড কেমিক্যালস খাতের মার্কেট পিই ১৭.৯৬, আর্থিক খাতের পিই ১৯.১১, সার্ভিসেস এন্ড রিয়েল এস্টেট খাতের মার্কেট পিই ১৯.২৫, ইঞ্জিনিয়ারিং খাতের মার্কেট পিই ১৯.৯১, ফুড এন্ড এ্যালাইড প্রোডাক্ট খাতের মার্কেট পিই ২১.২৩, সিরামিক খাতের মার্কেট পিই ৩০.৬৫, আইটি-খাতের মার্কেট পিই ৩০.৮০, ট্যানারি খাতের মার্কেট পিই ৩৬.৯৯, জুট খাতের মার্কেট পিই ৬৫.৬০, পেপার এন্ড প্রিন্টিং খাতের মার্কেট পিই ৬৭.২১ এবং ট্রাভেল এন্ড লেইজার ২৬৬.৪। অপরদিকে ২০২১ সালে সামগ্রিক বাজার মূল্য আয় অনুপাত বা মার্কেট পিই ছিল ১৬.২৯।
এবি