Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০২৪,

সমন্বিত উদ্যোগে মিলবে বিকাশমান সমুদ্র অর্থনীতির সুফল

সেন্ট্রাল আলবার্টা (কানাডা)

সেন্ট্রাল আলবার্টা (কানাডা)

জানুয়ারি ৯, ২০২৩, ০৪:১৮ পিএম


সমন্বিত উদ্যোগে মিলবে বিকাশমান সমুদ্র অর্থনীতির সুফল

বাংলাদেশের বিকাশমান সমুদ্র অর্থনীতির সফলতা নির্ভর করছে এ খাতে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণের উপর। কৌশলগত পরিকল্পনা প্রণয়ন ও সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের উপর জোর দিয়ে স্বাস্থ্যসম্মত সামুদ্রিক খাদ্য, শুকনো মাছ উৎপাদন, অন্ত:দেশীয় ও বৈদেশিক বিপণনের ক্ষেত্রে সকল প্রতিবন্ধকতা দূর করা প্রয়োজন।

রোববার (০৮ জানুয়ারি) কক্সবাজারের সামুদ্রিক শুকনো মাছের উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ নিয়ে বিশ্লেষণ এবং নীল অর্থনীতি অর্জনে সম্ভাবনা এবং চ্যালেঞ্জসমূহের উপর গবেষক ও বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে তৃণমূল পর্যায়ের প্রতিনিধিদের নিয়ে ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন বক্তারা।

সভায় সভাপতিত্ব করেন কানাডা প্রবাসী লেখক, গবেষক ও সাংবাদিক, বাংলাদেশ নর্থ আমেরিকান জার্নালিস্টস নেটওয়ার্ক এর সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা দেলোয়ার জাহিদ। সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী।

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রফেসর ড. আব্দুল জলিল চৌধুরী, ডিপার্টমেন্ট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এবং সাবেক মহাপরিচালক (চলতি দায়িত্ব) বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম)। প্রধান আলোচক ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. এস.এম. রফিকুজ্জামান। অধ্যাপক, গবেষক, শিক্ষক, লেখক, সাংবাদিক এবং স্থানীয় স্টেকহোল্ডারদের মধ্য থেকে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমি (বার্ড) এর  সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. এস. জে আনোয়ার জাহিদ,  প্রশিকার প্রোগ্রাম পরিচালক  সাঈদ হাসান, উন্নয়ন কনসালটেন্ট বাবু অশোক সরকার, আবেদ আহসান সাগর, মাহবুব উল আলম এবং অংশ গ্রহণ করেন খায়রুল আহসান মানিক, কৃষিবিদ মোয়াজ্জেম হোসাইন, নজরুল ইসলাম বাবুল, শামসুল হাবিব, শিরিন ফেরদৌসি, নাজমা রেশমী, ইভানা হোসাইন ও  এসরার জাহিদ।

কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স এর সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী বলেন, সমুদ্র অর্থনীতির সঠিক ব্যবহার বাংলাদেশকে উন্নতির শিখরে নিয়ে যেতে পারে। যদি আমরা এ খাতে প্রথাগত পদ্ধতির পরিবর্তে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারকে নিশ্চিত করতে পারি । ইতোমধ্যে সরকার কৌশলগত নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে এবং বিদেশি কয়েকটি সংস্থা তাদের সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছে। এগুলোর মাঝে সমন্বয় সাধন ও চেলেন্জের বিষয়। বাংলাদেশে খাদ্য সংস্কৃতি পরিবর্তনের উপর আমাদের জোর দিতে হবে এবং সামুদ্রিক-খাদ্যকে আমাদের খাদ্য তালিকায় নিতে হবে।  

মূল প্রবন্ধে প্রফেসর ড. আব্দুল জলিল চৌধুরী বলেন, কক্সবাজারে মার্কেট ভ্যালু চেইনের উপর গবেষণা ও প্রশিক্ষণ প্রদান বিষয়ে মাঠ পর্যায়ে কাজ করে এর সুফলতা আসতে শুরু করেছে। সাসটেইনেবল ব্লু ইকোনমির জন্য পরিবেশগত অবক্ষয় এবং সমুদ্রের পানির দূষণ কমাতে  প্রয়োজনীয় নীতিনির্ধারণের উপর বাংলাদেশের উদ্যোগ গ্রহণ করা উচিত।

প্রধান আলোচক প্রফেসর ড. এস.এম. রফিকুজ্জামান বলেন, কক্সবাজার জেলার সামুদ্রিক খাদ্য ও শুকনো মাছের স্বাস্থ্যসম্মত উৎপাদন ও এগুলো বাজারজাতকরণের উপর নিবিড় গবেষণা করার প্রয়োজন রয়েছে। রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে এর উপর কাজ হচ্ছে, দেশে বিচ্ছিন্নভাবে প্রযুক্তি ও  আসছে। তবে ইন্ডাস্ট্রি এর ডিমান্ড যথাযথভাবে আলোচনায় উঠে আসছে না। দেশে মৎস্যখাত নিয়ে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করতে একে অগ্রাধিকার তালিকায় নিতে হবে।  

বার্ডের সাবেক পরিচালক ড. আনোয়ার জাহিদ আলোচকবৃন্দের বক্তব্যের উদ্ধৃতি দিয়ে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদ আহরণ বিশেষ করে শুকনো মাছের উৎপাদনের অতীত ও বর্তমান অবস্থার উপর কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্সের পরিচালিত গবেষণা ও সমীক্ষায়  প্রাপ্ত ফলাফলের উপর আলোকপাত করেন।

ভেলু চেঞ্জ এনালাইসিস সমীক্ষার মাধ্যমে যারা মৎস্যজীবি, ট্রলার মালিক, মাছ ও শুঁটকি বিক্রয়কারি মার্চেন্ট এজেন্ট মধ্যস্বত্বভোগী, যেমন: আড়ৎদার, পাইকার, খুচরা ব্যবসায়ি সংরক্ষণকারি ও মহাজন তাদের প্রতি কেজি বা ১০০ কেজিতে  মুনাফা বা লাভের অংশ নির্ধারণ করা প্রয়োজন।

এতে মার্কেটিং চ্যানেলে জড়িত অধিক সুবিধাভোগীদের চিহ্নিত করার পাশাপাশি সরকারি বিভাগ ও বাজার নিয়ন্ত্রণকারীরা তাদের ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে। মাছ ধরার এলাকায় মাছ সংরক্ষণ (স্টোরেজ) এবং স্থানীয়ভাবে শুঁটকি সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা গেলে তা অভ্যন্তরীণ ত্রেতা-ভোক্তার সাশ্রয় ও রপ্তানি বাজারে এর অধিক সুফল পাওয়া যাবে, প্রশিকার প্রোগ্রাম পরিচালক সাঈদ হাসান পরিবেশগত অবক্ষয় এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠী নিয়ে কাজের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে সমুদ্র উপকূলের আদিবাসীদের জীবনমান উন্নয়নের উপর জোরারোপ করেন।

কনসালটেন্ট বাবু অশোক সরকার বলেন, মৎস্যখাতের মার্কেটিং চেইনে মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণে প্রোডাক্টের মূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর প্রভাব পড়ছে ভোক্তাদের উপর। এ খাতে শ্রমিককল্যাণ অনেক অবহেলিত এবং নারী শ্রমিকরা তাদের ন্যায্যমজুরি থেকে বঞ্চিত।

কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক আবেদ আহসান সাগর বলেন, বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলায় মাছের বাজার প্রায় ৮০ ভাগ।  টেকনোলজি ব্যবহার, প্রক্রিয়া ও গুদামজাত করণে মধ্যস্বত্ব ভোগীদের কারণে পণ্যের দাম বেড়ে যায়, প্রোডাক্টের মূল্য পেতে ও দীর্ঘ সূত্রিতা হয়  ও  সঙ্কট তৈরি হয়. সরকারের সাবসিডি ছাড়া এ খাতের টেকসই উন্নয়ণ কোনোভাবেই সম্ভব নয়.

সভাপতি দেলোয়ার জাহিদ বলেন দারিদ্র্য বিলোপ, ক্ষুধা মুক্তি, সুস্বাস্থ্য ও কল্যাণ, জলবায়ু কার্যক্রম এবং জলজ জীবনকে অর্থবহ ও সমূদ্র অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করার অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জনে বাংলাদেশকে কানাডার মতো উন্নত দেশের অংশীদারিত্ব গ্রহণের উপর জোর দিতে হবে।

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ ও আলোচনার উপর ভিত্তি করে সমস্যা সমাধানে কিছু সুপারিশমালা প্রনয়ণ করা হয়: বাংলাদেশে সামদ্রিকখাদ্য ও শুঁটকি উৎপাদন গতানুগতিকভাবে চলে আসছে। দেশের অভ্যন্তরে এবং বাইরে তাদের চাহিদা ও অনেক বেড়েছে। অতীতে শুঁটকি খোলা জায়গায় শুকানো হতো এবং রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করা হতো। বর্তমানে মৎস্য অধিদপ্তর, চেম্বার অব কমার্স ও কিছু বেসরকারি প্রতিষ্ঠান নানাবিদ উদ্যোগ নেয়ার ফলে উৎপাদন প্রক্রিয়া ও বিপণন ব্যবস্থায় উন্নতি ঘটছে। দেশের অভ্যন্তরে শুঁটকির  চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি কিছু সংখ্যক শুঁটকি; যেমন- চিংড়ি, ছুড়ি, লোট্ট্রা রূপচাঁদা প্রভৃতি চায়না হংকং হয়ে আমেরিকা, কানাডায় রুপ্তানি হচ্ছে। আলোচনায় যে সকল সুপারিশ করা হয় তা হলো :

১. বাংলাদেশের বিশাল সুমুদ্রসীমার মধ্যে প্রায় ৮০ মিলিয়ন মেট্রিকটন মাছের মুজুত রয়েছে এর থেকে আহরণের পরিমাণ মাত্র ৩.৫৫ মিলিয়ন মেট্রিকটন। এর প্রেক্ষিতে বেশি মৎস্য আহরণ, সংরক্ষণ ও বাজারজাতকরণের মাধ্যমে রপ্তানি আয় বৃদ্ধি করা যেতে পারে।
২, মৎস্য আহরণে আধুনিক প্রযুক্তি ও জনবল বৃদ্ধি, বিদেশি শুঁটকিতে করারোপসহ উন্নত মানের উৎপাদন, সংরক্ষণ, প্রক্রিয়া ও বাজারজাতকরণের ব্যবস্থা গ্রহণ প্রয়োজন।
৩. সরকারি উদ্যোগে প্রধান মৎস্য আহরণ, শুঁটকি উৎপাদন কেন্দ্রগুলোতে সংরক্ষণাগার তৈরি করা প্রয়োজন।
৪. সমন্বিত উদ্যোগ, টেকসই প্রযুক্তি, অ্যাকশন রিসার্চ ও ভ্যালু চেইন এনালিসিস করে সমীক্ষা প্রকাশ করাও  প্রয়োজন।
৫. উৎপাদন ও রপ্তানিকে বেগবান ও উৎসাহিত করতে স্বল্প সুদে ঋণদান ও প্রয়োজনে ভর্তুকি প্রদান করা যেতে পারে।

এআরএস

Link copied!