Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪,

সতর্কতামূলক মুদ্রানীতি ঘোষণা

মো. মাসুম বিল্লাহ

জানুয়ারি ১৫, ২০২৩, ০৮:৩৮ পিএম


সতর্কতামূলক মুদ্রানীতি ঘোষণা
  • বেড়েছে নীতি সুদহার, উঠে গেছে আমানতে, ভোক্তা ঋণে সুদ ১২ শতাংশ পর্যন্ত
  • বেসরকারি বিনিয়োগে সংকোচনমূলক নীতি অপরিবর্তিত 
  •  সরকারি খাতে ঋণের লক্ষ্যমাত্রা বৃদ্ধি
  • কমানো হয়েছে অভ্যন্তরীণ মুদ্রা সরবরাহের লক্ষ্যমাত্রা

তীব্র তারল্য সংকটের মধ্যেও ক্রমবর্ধমাণ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে অর্থ সরবরাহ কমাতে চায় বাংলাদেশ ব্যাংক। এ লক্ষ্যকে সামনে রেখে চলতি ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের (জানুয়ারি-জুন) মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হয়েছে। এতে নীতি সুদহার বৃদ্ধির পাশাপাশি তুলে দেয়া হয়েছে আমানতের সুদ হার। একই সাথে ভোক্তা ঋণে সুদহার ৩ শতাংশ বাড়ানো হলেও সার্বিক বিনিয়োগে ৯ শতাংশ সুদ হার অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে।

রাশিয়া-ইউক্রেণ যুদ্ধ, ফেডারেল ব্যাংকের উচ্ছ সুদহার ও চীনে করোনা পরিস্থিরি উপর সতর্ক দৃষ্টি রেখে মুদ্রানীতি বাস্তবায়নের লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে। সামগ্রিক বিবেচনায় এবারের মুদ্রানীতিকে সতর্কমূলক হিসেব আখ্যা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

রোববার (১৫ জানুয়ারি) বাংলাদেশ ব্যাংকের জাহাঙ্গীর আলম কনফারেন্স হলে কার্যকালের প্রথম মুদ্রানীতি প্রকাশ করেন গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। এ সময় ডেপুটি গভর্নর আহমেদ জামাল, কাজী ছাইদুর রহমান, আবু ফরাহ মো. নাছেরের, এ কে এম সাজেদুর রহমান খান, বিএফআইইউ প্রধান মাসুদ বিশ্বাস, প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. হাবিবুর রহমান, নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হকসহ গবেষণা বিভাগের সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।

মুদ্রানীতি ঘোষণার শুরুতে গভর্নর জানান, মূল্যস্ফীতি, মুদ্রাবাজার ও সুদহারের নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্য নিয়ে মুদ্রানীতি করা হয়েছে। খেলাপি ঋণ কমানো ও সুশাসন নিশ্চিত কেন্দ্রীয় ব্যাংক কাজ করে যাচ্ছে বলে জানান তিনি।

এদিকে নতুন অর্থবছরের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখা। তবে এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কিছু উপকরণ ব্যবহার ছাড়া তেমন কোনো করণীয় নেই। যে কয়েকটি উপকরণ রয়েছে, তার অন্যতম প্রধান হলো টাকার প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করা।

অর্থাৎ বেসরকারি খাতে কম হারে ঋণ দেওয়া। এজন্য চলতি অর্থবছরের মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতের ঋণপ্রবাহ প্রথমার্ধের মতো একই হার ধরে দ্বিতীয়ার্ধের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে।

চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৪ দশমিক ১০ শতাংশ। আগের অর্থবছরে যা ছিল ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ। তবে বাজেটের বিশাল ঘাটতির অর্থায়নে সরকারি খাতের ঋণপ্রবাহ উল্টো বাড়ানো হয়েছে। দ্বিতীয়ার্ধে এ লক্ষ্য ঠিক করেছে ৩৭ দশমিক ৭০ শতাংশ করা হয়েছে। প্রথমার্ধে ছিল ৩৬ শতাংশ।

মূল্যস্ফীতির চাপ কমাতে আরও উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। দেশের ব্যাংকগুলো যখন তারল্য সংকটে, তার মধ্যেই রেপো রেট বা নীতি সুদহার ২৫ বেসিস বাড়িয়ে ৬ শতাংশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে বাণিজ্যিক ব্যাংকের জন্য টাকা ধার নেওয়া আরো দামি হয়ে উঠলো।

অর্থাৎ ছয় মাসের ব্যবধানে তিন দফা বাড়ল নীতি সুদহার। গত বছরের জুন মাসে ঘোষিত মুদ্রানীতিতে রেপো বা নীতি সুদহার ২৫ শতাংশ বাড়িয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। এর তিন মাসের মাথায় সেপ্টেম্বরে তা আরও ২৫ শতাংশ বাড়িয়ে ৫ দশমিক ৭৫ শতাংশ করা হয়। নতুন মুদ্রানীতে তা বেড়ে ৬ শতাংশ উন্নীত হলো।

অন্যদিকে নয়া মুদ্রানীতিতে রিভার্স রেপোর সুদহার ৪ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৪ দশমিক ২৫ শতাংশ করা হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী বিশেষ রেপো হার ৮ দশমিক ৭৫ শতাংশ  থেকে ২৫ পয়েন্ট বেড়ে ৯ শতাংশ হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে নেওয়া অর্থে, ব্যাংকগুলিকে যে সুদ দিতে হয়, সেটি হল- রোপো রেট। আর উল্টোটি হলে, মানে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে অর্থ নিচ্ছে, তার ওপর যে সুদ, তাকে রিভার্স রেপো রেট বলা হয়।

এছাড়া মুদ্রা সরবরাহের লক্ষ্যমাত্রা ১২ দশমিক ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১১ দশমিক ৫০ শতাংশে নামানো হয়েছে।

চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে মূল্যস্ফীতিকে ৫ দশমিক ৬ শতাংশে রাখার কথা বলেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। কিন্তু সবশেষ নভেম্বর মাস শেষে মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ৮৫ শতাংশ।

বাজেট ঘাটতি মেটাতে সরকার ব্যাংক ঋণের লক্ষ্যমাত্রা আরও বাড়িয়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট ঘাটতি পূরণে ১ লাখ ৬ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকার ব্যাংক ঋণ নেবে বলে লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে। এই অংক চলতি অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২৯ হাজার ৮৮২ কোটি টাকা বেশি। 

এটি বেড়ে এখন ১ লাখ ১১ হাজার ৬০৮ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। তাই সরকারি খাতে বিনিয়োগের লক্ষ বাড়ানো হয়েছে। আগের অর্থবছরের বাজেটে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ৭৬ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছিল।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর ২০২২) বাংলাদেশ ব্যাংক সরকারকে ঋণ দিয়েছে ৬৫ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা। এ সময়ের মধ্যে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ঋণ শোধ করেছে ৩৩ হাজার ৩৫৫ কোটি টাকা। ফলে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারের নিট বা প্রকৃত ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩২ হাজার ২৪৯ কোটি টাকা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের ৫ম মাস নভেম্বরে বেসরকারি খাতের ঋণপ্রবাহ প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়ায় ১৩ দশমিক ৯৭ শতাংশ। আগের মাস অক্টোবর শেষে যা ছিল ১৩ দশমিক ৯১ শতাংশ। সেপ্টেম্বরে এই হার ছিল ১৩ দশমিক ৯৩ শতাংশ। আগস্টে ছিল ১৪ দশমিক ০৭ শতাংশ এবং জুলাই মাসে ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি ছিল ১৩ দশমিক ৯৫ শতাংশ।

মূলত মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও কাঙ্ক্ষিত প্রবৃদ্ধি অর্জনের মধ্যে ভারসাম্য রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক মুদ্রানীতি প্রণয়ন ও প্রকাশ করে। দেশের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় মুদ্রানীতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ ঋণ, মুদ্রা সরবরাহ, অভ্যন্তরীণ সম্পদ, বৈদেশিক সম্পদ কতটুকু বাড়বে বা কমবে এর একটি পরিকল্পনা তুলে ধরা হয়েছে।

এমআরএইচ/টিএইচ

Link copied!