অর্থনৈতিক প্রতিবেদক
জানুয়ারি ১৬, ২০২৩, ০৮:৩০ পিএম
অর্থনৈতিক প্রতিবেদক
জানুয়ারি ১৬, ২০২৩, ০৮:৩০ পিএম
রিজার্ভ চুরির মামলায় বাংলাদেশের পক্ষে রায় দিয়েছে নিউইয়র্ক সুপ্রিমকোট। বাংলাদেশের দায়েরকৃত মামলা বাতিলের আবেদন করেছিল বিবাদিরা। এ আবেদন খারিজ করে দিয়ে সমঝোতার নির্দেশ দিয়েদে আদালত। একই সঙ্গে নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরতে বিবাদিদের ২০ দিন সময় দেয়া হয়েছে।
সোমবার (১৬ জানুয়ারি) বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আদালত সমঝোতার নির্দেশ দেয়ায় বিষয়টি দ্রুত সমাধানের পথ উন্মুক্ত হলো। বিবাদিরা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সমঝোতায় ব্যর্থ হলে আমরা ফের আদালতে যাব। তখন আদালত যে সিদ্ধান্ত দিবে সেটি সবাইকে মানতে হবে। যেহেতু আমাদের কাছে শক্ত প্রমাণ রয়েছে তাই সিদ্ধান্ত আমাদের পক্ষেই আসবে। আমাদের সবচেয়ে বড় সফলতা হলো- এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে মামলাটি যাতে পরিচালনা না হয় সে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল বিবাদিরা। এখন সে পথ বন্ধ হয়ে গেছে।’
মেজবাউল হক বলেন, আমাদের আইনজীবিরা বিবাদিদের সাথে সমঝোতা প্রক্রিয়া এগিয়ে নিবেন। সেক্ষেত্রে আমরা মামলা পরিচালনার খরচ ও অন্যান্য ক্ষতিপূরণ দাবি করবো।
আর্থিক গেয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) এর প্রধান মাসুদ বিশ্বাস জানান, ‘রায়ের ফলে যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে মামলা পরিচালনায় আর কোন বাধা থাকল না।’
সংস্থাটির পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়- ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং কর্পোরেশনের (আরসিবিসি) সহযোগিতায় বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি হয়েছে। তাই রিজার্ভ চুরির ঘটনায় আরসিবিসিসহ অভিযুক্ত ছয়জনের দায়ের করা মামলা খারিজ করে দিয়ে বাংলাদেশের পক্ষে রায় দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক সুপ্রিম কোর্ট (স্টেট কোর্ট)। ফলে রিজার্ভের অর্থ ফেরত পেতে বাংলাদেশের করা মামলা পরিচালনায় আর কোনো বাধা রইলো না। বর্তমানে আরসিবিসিসহ অন্যান্য ১৮ ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে মামলা রয়েছে। আদলত থেকে অব্যাহতি দেয়া অন্য দুই আসামির বিরুদ্ধে আপিল শুনানির অপেক্ষমান।
মামলার অগ্রগতির বিষয়ে বিএফআইইউ জানায়, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে অর্থ চুরির ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রে সংঘটিত হয়েছে বিবেচনায় ২০১৯ সালের ৩১ জানুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংক যুক্তরাষ্ট্রের ডিস্ট্রিক্ট কোর্ট ফর দি সাউদার্ন ডিস্ট্রিক্ট অব নিউইয়র্কে (ফেডারেল কোর্ট) আরসিবিসিসহ ২০ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করে। পরে আরসিবিসিসহ ৬ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের মামলা বাতিল করার (মোশান চু ডিসমিস) আবেদন করে। পরে বিভিন্ন আইনি প্রক্রিয়ার পর ২০২০ সালের ২০ মার্চ ফেডারেল আদালত ফিলিপাইনের বিভিন্ন বিবাদী কর্তৃক দায়ের করা আবেদন খারিজ করে দিয়ে মামলাটি ফেডারেল কোর্টের পরিবর্তে স্টেট কোর্টে পরিচালনার নির্দেশ দেয়।
সেই রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২০ সালের ২৭ মে বাংলাদেশ ব্যাংক আবার যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক সুপ্রিম কোর্ট (স্টেট কোর্ট) আরসিবিসিসহ ফিলিপাইনের ২০ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। মামলা দায়েরের পর ৬ বিবাদী ফেডারেল কোর্টের মতো এই কোর্টেও মামলা বাতিলের আবেদন করে। বিবাদীপক্ষের আবেদনের বিষয়ে ২০২১ সালের ১৪ জুলাই ও ১৪ অক্টোবর শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। নিউইয়র্ক কাউন্টি সুপ্রিম কোর্ট ২০২২ সালের ৮ এপ্রিল মামলার আংশিক রায়ে দুটি প্রতিষ্ঠানকে অব্যাহতি দেন। এই রায়ের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ব্যাংক আপিল আবেদন করে, যা শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে।
সর্বশেষ গত ১৩ জানুয়ারি স্টেট কোর্টে আরসিবিসি ও অন্যান্য বিবাদী আবেদন করেছেন। আদালত তার রায়ে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছে, নিউইয়র্ক থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থ চুরির ক্ষেত্রে আরসিবিসি`র উদ্দেশ্যপ্রণোদিত জোগসাজশ ছিলো। আদালতের রায়ে আরো উল্লেখ করা হয়, আরসিবিসি`র নিউইয়র্কের হিসাব ব্যবহার না হলে এবং ফিলিপাইনে আরসিবিসি অভিযুক্তদের সহযোগিতা না করলে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক থেকে ওই অর্থ অন্য কোথাও যাওয়ার সুযোগ ছিলো না। স্টেট কোর্ট আরসিবিসি ও অন্যান্য বিবাদীদের আগামী ২ ফেব্রুয়ারির মধ্যে জবাব দেওয়ার আদেশ এবং মধ্যস্থতার নির্দেশ দিয়েছেন। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী নিউইয়র্কে নিয়োজিত বাংলাদেশ ব্যাংকের আইনি প্রতিষ্ঠান মধ্যস্থতার বিষয়টি পর্যালোচনা করবে।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের ইতিহাসে রিজার্ভ চুরির সবচেয়ে বড় এই ঘটনা ঘটেছিল ২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি রাতে। সেই রাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি হয়। কম্পিউটার হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে পাচার হওয়া এই অর্থ প্রথমে গিয়েছিল ফিলিপাইনের মাকাতি শহরের রিজাল ব্যাংকের ৪টি ভুয়া অ্যাকাউন্টে। তারপর সেখান থেকে দ্রুত এই অর্থ উত্তোলন করেন হ্যাকাররা। শেষ পর্যন্ত মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআইয়ের সহযোগিতায় মাত্র দেড় কোটি ডলার উদ্ধারে সমর্থ হয়েছে বাংলাদেশ। খোয়া যাওয়া বাকি অর্থের ফেরত প্রক্রিয়া মামলায় ঝুলে রয়েছে।
কেএস