জানুয়ারি ১৭, ২০২৩, ০৯:৪১ পিএম
প্রান্তিক এলাকার সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীকে প্রযুক্তিনির্ভর আর্থিক সেবা দিতে ‘ভিলেজ ডিজিটাল বুথ’ চালু করবে জয়তুন বিজনেস সলিউশনস। চেয়ারম্যানের দায়িত্বে আছেন ব্যাংক এশিয়ার সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আরফান আলী।
এর আগে তার এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের দেশে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। ব্যাংক এশিয়ায় থাকাকালে তিনি দেশে প্রথম এজেন্ট ব্যাংকিং কায়ক্রম চালু করেন। বর্তমানে এটি ব্যাপক জনপ্রিয় সেবা হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। দেশের অধিকাংশ ব্যাংক এ সেবা চালু করে সুফল পাচ্ছে। উপকৃত হচ্ছে সাধারণ মানুষ, সৃষ্টি হয়েছে বহু কর্মসংস্থান।
নতুন সেবার আওতায় দেশের প্রতিটি গ্রামে চালু হবে ‘ভিলেজ ডিজিটাল বুথ’। এই বুথে গ্রামের লোকজন সহজে ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবেন। পাশাপাশি ব্যাংকের লেনদেন, রেমিট্যান্সের অর্থ উত্তোলন, কার্ডের লেনদেন, বিভিন্ন পরিষেবার বিল, শেয়ার বাজার ও মোবাইল ফাইন্যান্সের পেমেন্টসহ মিলবে ব্যাংকের সব ধরনের সেবা।
এ সেবা সারা দেশে পৌঁছে দিতে অর্থাৎ ভিলেজ ডিজিটাল বুথ প্রতিষ্ঠায় এটুআই-এর পেমেন্ট এগ্রিগেটর প্ল্যাটফর্ম ‘একপে’ এবং জয়তুন বিজনেস সলিউশনস একসঙ্গে কাজ করবে।
মঙ্গলবার (১৭ জানুয়ারি) রাজধানীর একটি হোটেলে এটুআই এবং জয়তুন বিজনেস সলিউশনস-এর মধ্যে এ বিষয়ে এক সমঝোতা স্মারক সই হয়। এটুআইয়ের প্রকল্প পরিচালক (যুগ্ম সচিব) ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর এবং জয়তুন বিজনেস সলিউশনস-এর চেয়ারম্যান মো. আরফান আলী নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে সমঝোতা স্মারক সই করেন।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, এই সমঝোতা স্মারকের আওতায় দেশব্যাপী ভিলেজ ডিজিটাল বুথ থেকে প্রান্তিক এলাকায় বসবাসকারী সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীকে প্রযুক্তিনির্ভর আর্থিক সেবা প্রদান করা হবে। এক্ষেত্রে এটুআইয়ের পেমেন্ট এগ্রিগেটর প্ল্যাটফর্ম ‘একপে` এই কার্যক্রমে কারিগরি এবং সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করবে। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলতে এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর আর্থিক অন্তর্ভুক্তি কার্যক্রমকে আরও দ্রুত এবং প্রাতিষ্ঠানিকভাবে এগিয়ে নিতে প্রতিটি গ্রামে একটি ভিলেজ ডিজিটাল বুথ প্রতিষ্ঠা করা হবে।
জয়তুন বিজনেস সলিউশনস- এর সার্বিক ব্যবস্থাপনায় একজন স্থানীয় উদ্যোক্তার মাধ্যমে এই ভিলেজ ডিজিটাল বুথ পরিচালিত হবে। মূলত এটি একটি গ্রামীণ আর্থিক সেবা কেন্দ্র হয়ে গড়ে উঠবে, এই বুথ থেকে ডিজিটাল আর্থিক সেবাসহ বিভিন্ন প্রকার ই-সেবা প্রদান নিশ্চিত করা হবে। এর মাধ্যমে সব ধরনের সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের আর্থিক সেবা, সরকারি পরিষেবা বিল পরিশোধ, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় ভাতা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সংক্রান্ত বিল পরিশোধ, টেলিমেডিসিন, ই-টিকেটিং ইত্যাদি সেবা বিশেষভাবে দেওয়া হবে।
এছাড়া এই ভিলেজ ডিজিটাল বুথ থেকে আর্থিক সেবা গ্রহণ করতে পারবেন প্রান্তিক জনগোষ্ঠী। ভিলেজ বুথের মাধ্যমে সকল ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সব ধরনের সেবাগুলো এক জায়গা থেকে পাওয়া যাবে। এতে গ্রামীণ অঞ্চলে সুবিধাবঞ্চিত ও প্রাতিষ্ঠানিকভাবে আর্থিকসেবা বহির্ভুক্ত জনগোষ্ঠী তাদের আর্থিক সেবা গ্রহণে অনেক বেশি সময়, কষ্ট ও অর্থের সাশ্রয় করতে পারবে।
অনুষ্ঠানে এটুআইয়ের প্রকল্প পরিচালক (যুগ্ম সচিব) ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর বলেন, ভিলেজ বুথের মাধ্যমে গ্রামের সুবিধাবঞ্চিত জনগণের কাছে সেবা পৌঁছে দেওয়া হবে। একই সঙ্গে ভিলেজ বুথ নিরাপদ ও উন্নত মানের সেবা প্রদান, পল্লী এলাকায় আর্থিক উন্নয়ন, সব ধরনের আর্থিক অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিতকরণ, এসডিজি কাউকে পেছনে ফেলে নয়- স্লোগানের বাস্তবায়ন করবে।
অনুষ্ঠানে জয়তুন বিজনেস সলিউশনস- এর চেয়ারম্যান মো. আরফান আলী বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনে ডিজিটাল বুথ বিশেষ ভূমিকা পালন করবে। বিশেষ করে আর্থিক অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে ব্যাংকিং সেবার সঙ্গে সম্পৃক্ত করে ব্যাংকিং, ইন্সুরেন্স, পরিষেবা ফি প্রদানসহ অন্যান্য সকল ধরনের পেমেন্ট, আর্থিক লেনদেনের সঙ্গে যুক্ত করে গ্রামীণ পর্যায়ে দেশের উন্নয়ন নিশ্চিত করবে।
এক প্রশ্নের উত্তরে জয়তুন বিজনেস সলিউশনস- এর চেয়ারম্যান জানান, নতুন এই সেবার মাধ্যমে ব্যাংকের হিসাব খুলতে পারবেন, ব্যাংক ও মোবাইল ফাইন্যান্সের ছোট ছোট লেনদেন করা যাবে। ক্রেডিট ও ডেবিট কার্ডে লেনদেন ও শেয়ারবাজারের পেমেন্টও করা যাবে। এছাড়া আগামীতে প্রত্যন্ত অঞ্চলে পিছিয়ে পড়া ঋণ কার্যক্রমও বিস্তার হবে। পিএসপি পিএফও ও মোবাইল ফাইন্যান্স তিনটার কাজ এক সঙ্গে করতে পারবে।
ভিলেজ ডিজিটাল বুথের উদ্যোক্তা কারা হবে জানতে চাইলে আরফান আলী জানান, চেইন এজেন্ট হিসেবে কাজ করবে ভিলেজ ডিজিটাল বুথ। প্রতিটা বুথের উদ্যোক্তা হবে নিজ গ্রামের শিক্ষিত তরুণ, তরুণী ও যুবকরা। তাদের অবশ্যই এইচএসসি পাস হতে হবে। এতে করে একদিকে প্রান্তিক এলাকার সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠী আধুনিক আর্থিক সেবা পাবেন। অন্যদিকে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।
পাইলট পকল্প হিসেবে খুব শিগগিরই মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখানে ভিলেজ ডিজিটাল বুথ চালু হবে। এরপর ৫০টি বুথ নিয়ে কার্যক্রম চালাবে। আগামী তিন বছরে দেশের সব গ্রামে ডিজিটাল বুথ স্থাপন করা হবে বলে পরিকল্পনার কথা জানান জয়তুন বিজনেস সলিউশনস-এর চেয়ারম্যান।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের আওতায় বাস্তবায়নাধীন এবং ইউএনডিপি`র সহায়তায় পরিচালিত ‘এটুআই’ পেমেন্ট এগ্রিগেটর প্ল্যাটফর্ম ‘একপে’ পরিচালনা করছে।
সমঝোতা স্মারক সই অনুষ্ঠানে জয়তুন বিজনেস সলিউশনস-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক আকবর হোসাইন, এটুআইয়ের হেড অব ডিজিটাল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস অ্যান্ড ডিজিটাল সেন্টার মো. তহুরুল হাসান এবং এটুআই, জয়তুন বিজনেস সলিউশনস- এর সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এমআরএইচ/এআরএস