আবু ছালেহ আতিফ
মার্চ ২১, ২০২৩, ০৫:২১ পিএম
আবু ছালেহ আতিফ
মার্চ ২১, ২০২৩, ০৫:২১ পিএম
পবিত্র মাহে রমজানের বাকি বলতে গেলে একদিন। আর রোজাদার ব্যক্তিদের ইফতারে প্রধান উপজীব্য হিসেবে ব্যাপক চাহিদা বিভিন্ন প্রজাতির খেজুরের।এটাকেই পুঁজি করে খেজুরের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে আগুন গতিতে। খেজুর কিনতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত ও খেটে খাওয়া পরিবারের মানুষ। দেখা যাচ্ছে যে বাজেট নিয়ে তারা খেজুর কিনতে এসেছে তাতে ভারো মানের খেজুর পাওয়া যাচ্ছে না। তাই বাধ্য হয়ে কম টাকায় নিম্ন মানের খেজুর কিনে বাসায় যেতে হচ্ছে। তবে গরমের দিনে অন্যতম একটি মৌসুমি ফল তরমুজের দাম রয়েছে সন্তোষজনক।
মঙ্গলবার (২১ মার্চ) বিকেলে রাজধানীর খেজুরের পাইকারি ও খুচরা বাজার সদরঘাট, বাদামতলির বিভিন্ন আড়ত ঘুরে এ দৃশ্য দেখা যায়।
রাজধানীর ধুপখোলা থেকে খেজুর কিনতে বাদামতলী এসেছেন আব্দুল গফফার। তিনি বলেন, রোজা তো পরশু থেকেই। তাই ইফতারির জন্য খেজুর কিনতে আসলাম ১ হাজার টাকা বাজেট নিয়ে। কিন্তু এসে দেখছি এমন দাম এ টাকায় টাকা বাজেটে আসলে ভালো মানের কোন খেজুর পাবো না।
আবদুল গফফর বলেন খেজুর যেহেতু কিনতেই হবে দুই কার্টুনের জায়গায় এক কার্টুন কিনেই বাসায় যাচ্ছি। এবং এত দাম বৃদ্ধির উপরে ক্ষোভ ঝেড়ে এ ক্রেতা বললেন, "এই দেশে রমজান আসলেই, সবকিছুর দামে গজব পরে কেনো জানিনা।"
খেজুর কিনতে আসা আরেক ক্রেতা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নিহাল আহমেদ। তিনি বলেন প্রায় পুরোটা রমজান মেসেই থাকবো আমরা। তাই সবার জন্য ইফতারির খেজুর কিনতে এসেছি। কিন্তু ; যেই পরিমান দাম বাড়ছে তাতে বাজেট সংকটে পড়ে যাচ্ছি।
তিনি বলেন, নিয়ে এসেছিলাম ১৫ শ টাকা। ভাবছিলাম ভালো মানের তিন-চার কেজি খেজুর কিনবো কিন্তু; এখনতো কোনোরকম দুই কেজি কিনতে পারবো মনে হচ্ছে।
সরেজমিনে বিভিন্ন আড়ত ও দোকান ঘুরে দেখা গেছে, বিভিন্ন প্রজাতির খেজুর যেমন, কালমী খেজুরের কার্টুন (৫কেজি) বর্তমানে ৩৫০০ টাকা, যেটা গতবছর ছিলো ২৫০০ টাকা। অর্থাৎ ১ হাজার টাকা বেড়েছে কার্টুনে। খেজুরের মধ্যে সুস্বাদু আজোয়ার প্রতি কার্টুনে বেড়েছে প্রায় ১৩ শ টাকা। অর্থাৎ গত বছর যা ৩ হাজার টাকা হরে এখন তা ৪৩শ টাকা। এবং আরেকটা ভালো মানের খেজুর ম্যাট-জুল যা বিক্রি হচ্ছে ৫৭ শ টাকা কার্টুন। যা আগে ছিলো ৩৫শ টাকা। বর্তমান দাম ৫৭শ টাকা। অর্থাৎ এক কার্টুনেই ২২শ টাকা বৃদ্ধি। যার কেজি প্রতি দাম আসে এগারো শ টাকার ও বেশি।
তবে বাজার ঘুরে দেখা গেছে দাম বাড়েনি শুধু নিম্ন মানের কিছু খেজুরের। যেমন-মদিনা খেজুরের প্যাকেট হিসেবে বিক্রি হচ্ছে মাত্র পঞ্চাশ টাকা।
খেজুরের এত দাম বৃদ্ধির কারণ কি রমজান জানতে চাইলে বাদামতলীর মেসার্স ফারুক এন্ড ব্রাদার্স, সাথী ফ্রেশ ফুড লিমিটেড সহ কয়েকটি আড়তের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিক্রেতারা জানান, সবকিছুই দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। এজন্য খেজুরের দাম বৃদ্ধি স্বাভাবিক। তাছাড়াও এখন সবকিছুর খরচ বেশি এজন্য আমাদেরকে বাধ্য হয়ে দাম বৃদ্ধি করতে হচ্ছে।
এছাড়াও তারা দাম বৃদ্ধির কারণ হিসেবে ডলার সংকটের কারনও উল্লেখ করেন। তারা বলেন বিশ্বব্যপী অর্থনৈতিক অবস্থার কারনে সবকিছুর দাম যেহেতু বেড়েছে তাই খেজুরের দাম বাড়বে এটা স্বাভাবিক। আর খেজুর বাহিরের দেশ থেকে আসে, সুতরাং দাম বৃদ্ধিতে আমাদের কিছু করার নেই।
কিন্তু; এ দাম বৃদ্ধির ব্যপারে কনজুমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সহ-সভাপতি নাজের হোসাইন বলেন ভিন্ন কথা। তিনি আমার সংবাদকে বলেন, খেজুরের আমদানি প্রচুর থাকা সত্বেও ব্যবসায়ীরা দাম বৃদ্ধি করে দিচ্ছে। এমনকি গত বছরের স্টক এখনো আছে। কিন্তু; তারপরে ও তারা দাম কমাচ্ছে না।
তিনি বলেন, দাম যেহেতু কমছেনা; আমরা যারা ক্রেতা রয়েছি তাদের উচিত ক্রয় কমিয়ে দেওয়া। তাহলে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের টনক নড়বে। যেমন ছোলার দাম বৃদ্ধির পরে মানুষ কেনা কমিয়ে দিয়েছিল এখন কিন্তু; ছোলার দাম কমেছে।
ক্রয় কমিয়ে দেওয়াই দাম বৃদ্ধির সমাধান কি না প্রশ্নের জবাবে নাজের হোসাইন বলেন, যেহেতু প্রশাসন ব্যবস্থা নিচ্ছেনা সেক্ষেত্রে কি আর করার। আর ব্যাবসায়ীরা তো সুযোগ পেয়েছে যে অন্যান্য দ্রব্য- মূল্যের দাম বাড়লে তারা খেজুরের দাম তালে তালে বাড়িয়ে দিচ্ছে। যদিও এক্ষেত্রে কোনো যুক্তি বা ঘাটতি নেই দাম বাড়ানোর।
আরএস