জুলাই ২, ২০২৩, ০৬:৫৬ পিএম
- এক বছরে বেড়েছে ৫৮ কোটি ডালার
- জুন মাসে এসেছে ২২০ কোটি ডলার
- রেমিট্যান্স বাড়লেও আশানুরূপ নয় :অর্থনীতিবিদ
প্রবাসী বাংলাদেশিরা বৈধ পথে ও ব্যাংকিং চ্যানেলে ২০২২-২৩ অর্থবছরে ২ হাজার ১৬১ কোটি মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ রেমিট্যান্স দেশে পাঠিয়েছেন। যা এ যাবৎকালের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আহরণ। দেশে রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স এসেছিল ২০২০-২১ অর্থবছরে ২ হাজার ৪৭৭ কোটি ডলার।
রোববার ( ২ জুলাই) কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রকাশিত হালনাগাদ পরিসংখ্যানে এ তথ্য জানা গেছে।
খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ডলার সংকটসহ নানা কারণে বৈধ পথে ব্যাংকিং চ্যানেলে বেশি পরিমাণে রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় আনতে নানা উদ্যোগ নেয় সরকার। এরপরও ব্যাংকের আশানুরূপ হারে রেমিট্যান্স বাড়েনি। এক মাসে বাড়ছে তো আরেক মাসে কমছে।
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রথম দুই মাসে রেমিট্যান্স প্রবাহ ভালো ছিল; ওই সময় ২০০ কোটি ডলারের উপরে রেমিট্যান্স আসে। অর্থবছরে প্রথম মাস জুলাইয়ে আসে ২০৯ কোটি ৬৩ লাখ ডলার এবং আগস্টে ছিল ২০৩ কোটি ৬৯ লাখ ডলার। এরপরে প্রবাসী আয় আশানুরূপ আসেনি। টানা পাঁচ মাস ২০০ কোটির ঘর ছুঁতে পারেনি রেমিট্যান্স। সেপ্টেম্বর আসে ১৫৪ কোটি ডলার, অক্টোবরে ১৫২ কোটি ৫৫ লাখ ডলার, নভেম্বরে ১৫৯ কোটি ৫১ লাখ, ডিসেম্বরে ১৬৯ কোটি ৯৭ লাখ, জানুয়ারিতে এসেছিল ১৯৫ কোটি ৮৮ লাখ, ফেব্রুয়ারিতে ১৫৬ কোটি ডলার এসেছে।
এরপর মার্চে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়লেও এপ্রিল ও মে-তে হোঁচট খায়। সব শেষ জুনে কোরবানির ঈদের মাসে রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স পাঠান প্রবাসীরা। গত অর্থবছরের মার্চে রেমিট্যান্স আসে ২০২ কোটি ২৪ লাখ, এপ্রিলে কমে হয় ১৬৮ কোটি ৪৯ লাখ, মে মাসে আসে ১৬৯ কোটি ডলার এবং সব শেষ জুনে রেমিট্যান্স আসে ২১৯ কোটি ৯০ লাখ ডলার।
রেমিট্যান্স প্রসঙ্গে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, রেমিট্যান্স বেড়েছে তা খুবই সামান্য; এটা আশানুরূপ নয়। কারণ যে হারে বিদেশে জনশক্তি রপ্তানি হচ্ছে সেই হারে আমরা রেমিট্যান্স পাচ্ছি না। কেন রেমিট্যান্স আসছে না এর কারণ খতিয়ে দেখা দরকার। কারণ রেমিট্যান্স বাড়ানো না গেলে দেশের অর্থনীতি খুব একটা ভালো হবে না। তাই যে কোনো মূল্যে রেমিট্যান্স বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে।
নগদ প্রণোদনাসহ ইতিমধ্যে কিছু উদ্যোগ নিয়েছে সরকার তারপর কেন বাড়ছে না এটার কারণও খুঁজে বের করা দরকার জানিয়ে তিনি বলেন, রেমিট্যান্স আনতে এক্সচেঞ্জ হাউজ রয়েছে তাদের আরও বেশি সক্রিয় করতে হবে। একই সঙ্গে আমাদের যেসব দেশে দূতাবাস রয়েছে তাদের প্রবাসী আয় বাড়াতে পদক্ষেপ নিতে হবে। কীভাবে রেমিট্যান্স পাঠানোর প্রক্রিয়া সহজ করা যায় তার ব্যবস্থা গ্রহণের পরামর্শ দেন সাবেক এ অর্থ উপদেষ্টা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, সদ্য বিদায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশে রেমিট্যান্স আহরণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ১৬১ কোটি ১০ লাখ ডলার। (বাংলাদেশি মুদ্রায় ২ লাখ ৩৪ হাজার ৪৭৫ কোটি টাকার বেশি)। এই অংক আগের অর্থবছরের চেয়ে ৫৭ কোটি ৯০ লাখ ডলার বেশি। ২০২১-২২ অর্থবছরে রেমিট্যান্স এসেছিল ২ হাজার ১০৩ কোটি ১৬ লাখ ডলার। এর আগে ২০২০-২১ অর্থবছরে রেমিট্যান্স আসে ২ হাজার ৪৭৭ কোটি ৭০ লাখ ডলার। ২০১৯-২০ এসেছিল ১ হাজার ৮২০ কোটি ৫০ লাখ ডলার এবং ২০১৮-১৯ অর্থবছরে রেমিট্যান্সের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৬৪১ কোটি ৯৬ লাখ ডলার।
২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রবাসীরা সরকারি ৫টি ব্যাংকের মাধ্যমে ৩৩৯ কোটি ৯২ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছে। বিশেষায়িত একটি ব্যাংকে এসেছে ৫২ কোটি ২২ লাখ ডলার। বেসরকারি ৪০টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিট্যান্স এসেছে ১ হাজার ৭৬১ কোটি ২০ লাখ ডলার। আর বিদেশি ৬ ব্যাংকে এসেছে ৭ কোটি ৭১ লাখ ৮০ হাজার ডলার।
আরএস