নিজস্ব প্রতিবেদক
ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০২৫, ১২:৩১ এএম
নিজস্ব প্রতিবেদক
ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০২৫, ১২:৩১ এএম
দেশের কারাগারগুলোতে নারী বন্দি রয়েছে ধারণক্ষমতার দ্বিগুণেরও বেশি। দেশের জেলা পর্যায়ের কারাগারের নারী সেলে মোট বন্দি ধারণক্ষমতা প্রায় ১ হাজার ৯২৯ জন। এর বিপরীতে রয়েছে ২ হাজার ৯৮১ নারী বন্দি। গাজীপুরের কাশিমপুর কারা কমপ্লেক্সে মোট চারটি কারাগার রয়েছে। তার একটি দেশের প্রথম ও বিশেষায়িত নারী কারাগার। আর দ্বিতীয়টির অবস্থান কেরানীগঞ্জে হলেও সেটি এখনো চালু হয়নি।
বিগত ২০০৭ সালে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় মহিলা কারাগারের কার্যক্রম শুরু হয়। এর ধারণক্ষমতা ২০০ জন। সেখানে এখন সাড়ে ৪শ’ নারী বন্দি রয়েছে।
বর্তমানে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় মহিলা কারাগারে একজনের জন্য বরাদ্দকৃত জায়গায় দুজনকে থাকতে হচ্ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ছোট্ট একটি জায়গা তিনজনকেও ভাগ করতে হয়। ফলে অনেকেই চর্মজনিতসহ নানা রোগে ভুগছে। বিদ্যমান পরিস্থিতি বন্দিদের ক্ষেত্রে নানা ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। কারা অধিদপ্তর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের অভ্যন্তরে বিগত ২০২০ সালে নারী বন্দিদের জন্য ‘মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগার’ উদ্বোধন করা হলেও লোকবল সংকটে এখনো সেটি চালু হয়নি। বলা হয়, আধুনিক সুযোগ-সুবিধা দিয়ে নারী বন্দিদের ওই কারাগারে রাখা হবে। তাছাড়া সেখানে কিশোরী বন্দিদের জন্য রয়েছে আলাদা ভবন। আর যে বন্দিদের সন্তান রয়েছে, তাদের জন্য রাখা হয়েছে ডে-কেয়ার সেন্টার। পাশাপাশি হাসপাতাল, বিদ্যালয়, পাঠাগার, ওয়াশিং প্লান্ট ও মানসিকভাবে অসুস্থ বন্দিদের জন্যও আলাদা ওয়ার্ডের ব্যবস্থা রয়েছে। তবে এতোসব সুযোগ-সুবিধা থাকা সত্ত্বেও নির্মাণের পাঁচ বছরেও কারাগারটিকে সচল করা সম্ভব হয়নি। ফলে কাশিমপুরই এখন পর্যন্ত নারীদের একমাত্র কেন্দ্রীয় কারাগার।
সূত্র জানায়, অনুমোদিত পদ থাকলেও কাশিমপুর কেন্দ্রীয় মহিলা কারাগারে কোনো চিকিৎসক নেই। তবে কারা কর্তৃপক্ষের মতে, চাহিদা অনুযায়ী সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে নিয়মিত চিকিৎসক আসে এবং প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত চিকিৎসাসেবা দেয়া হয়। এরপর জরুরি প্রয়োজন হলে কারাগারে চিকিৎসক নিয়ে আসা হয়। কিন্তু কারাগার থেকে আসা বন্দিদের মতে, বর্তমানে কারাগারটিতে ধারণক্ষমতার দুই গুণেরও বেশি নারী বন্দি রাখা হয়েছে। ফলে সীমিত স্থানের মধ্যেই বন্দিদের থাকতে হয়। পাশাপাশি কারাগারটিতে পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা ও পরিচ্ছন্নতা ইস্যুতেও অনেক ঘাটতি রয়েছে।
অপরিচ্ছন্ন বিছানা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে দীর্ঘদিন থাকায় অনেক বন্দিই নানা ধরনের চর্ম, যৌন ও অ্যালার্জিতে আক্রান্ত। তারা প্রয়োজন মতো চিকিৎসা সেবা পাচ্ছে না।
সূত্র আরও জানায়, কারাগারে স্থান সংকুলানের ঘাটতি ও অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে অবস্থানের কারণে বন্দিদের নানা ধরনের ব্যাধির শঙ্কা বেড়েই চলেছে। গাদাগাদি করে থাকায় অনেক ধরনের চর্মরোগ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। অতিরিক্ত গরমে এবং সক্ষমতার অতিরিক্ত মানুষ এক জায়গায় থাকলে ওসব রোগ একজনের থেকে অন্যজনের শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। তাছাড়া সবার রোগ প্রতিরোধক্ষমতা সমান নয়। যার কারণে অনেকেই খুব কম সময়ের মধ্যে সংক্রমিত হয়।
এদিকে কারাগারে ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত নারী বন্দি স্থান সংকুলান, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ ও অপরিচ্ছন্নতার মধ্যে থাকার বিষয়ে অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক কর্নেল মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল বলেন, কাশিমপুর কেন্দ্রীয় মহিলা কারাগারে স্থান সংকুলানের চ্যালেঞ্জ রয়েছে। পাশাপাশি স্যানিটেশন ও হাইজিন মেইনটেইনের ক্ষেত্রেও কিছুটা কমপ্রমাইজ করতে হচ্ছে। তবে খাবার ও স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে কোনো সংকট নেই। পাশাপাশি নারী বন্দিদের যথেষ্ট সহযোগিতাপূর্ণ মনোভাব থাকায় ধারণক্ষমতার অধিক বন্দি নিয়েও খুব একটা সমস্যা হয় না। তবে সংখ্যা ব্যাপক হারে বেড়ে গেলে কিছু বন্দিকে জেলা কারাগারের নারী সেলে স্থানান্তর করা হয়। পরে আবার সুবিধামতো সময়ে তাদের কেন্দ্রীয় মহিলা কারাগারে ফিরিয়ে আনা হয়।