নিজস্ব প্রতিবেদক :
ফেব্রুয়ারি ৬, ২০২৪, ০৪:৪২ পিএম
নিজস্ব প্রতিবেদক :
ফেব্রুয়ারি ৬, ২০২৪, ০৪:৪২ পিএম
অর্থপাচারের সঙ্গে দেশের সাত ব্যাংক ও দুইটি মানি এক্সচেঞ্জার প্রতিষ্ঠান জড়িত। সংশ্লিষ্ট ব্যাংক এবং মানিএক্সচেঞ্জার প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তারা দুদকের নজরদারিতে রয়েছে। অর্থ পাচারের সঙ্গে জড়িত ব্যাংকগুলো হচ্ছে- জনতা ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক, যমুনা ব্যাংক এবং দুই মানি এক্সচেঞ্জার প্রতিষ্ঠান হচ্ছে- এভিয়া মানি এক্সচেঞ্জার ও ইমপেরিয়াল মানি এক্সচেঞ্জার। বিদেশে অর্থপচারের সঙ্গে এই সাত ব্যাংক ও দুই মানিচেঞ্জার জড়িত থাকার সত্যতা পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
প্রাপ্ত তথ্য মতে প্রতিদিন আনুমানিক একশ’ কোটি টাকা সমমূল্যের বৈদেশিক মুদ্রা থেকে ব্যাংকিং খাত বঞ্চিত হচ্ছে। অবৈধভাবে ক্রয়কৃত ডলার, ইউরো, রিয়াল, রিঙ্গিত, পাউন্ড, দিনার ও অন্যান্য ফরেন কারেন্সি সংগ্রহপূর্বক বিদেশি মুদ্রাপাচারকারী, বিদেশি মুদ্রার কালোবাজারি ও বাংলাদেশ হতে বিদেশে মানিলন্ডারিং এর মাধ্যমে অর্থপাচারকারী দুর্নীতিবাজদের অবৈধভাবে সরবরাহ করে। দুদক কর্তৃক বিভিন্ন সময় অভিযান চালানোয় এসব বিষয়গুলো উঠে এসেছে।
এ প্রসঙ্গে মঙ্গলবার (৬ ফেব্রুয়ারি) দুদক সচিব মো. মাহবুব হোসেন রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় তিনি জানান, এনফোর্সমেন্ট টীম অভিযানকালে ব্যাংক ও মানি এক্সচেঞ্জার কর্তৃক এনকেশমেন্ট স্লিপ ব্যতীত ফরেন করেন্সি ক্রয়-বিক্রয় সংক্রান্ত প্রাথমিক তথ্য প্রমাণ পেয়েছে। এছাড়া একাধিক ভুয়া ভাউচার ও স্বাক্ষরবিহীন ভাউচার সংগ্রহ করেছে দুদক।
জানা যায়, প্রবাসী ওয়েজ আর্নার্স ও বিমানের যাত্রীগণ ঢাকাস্থ হযরত শাহ জালাল আন্তর্জাতিক এয়ারপোর্টে মূল্যবান যে রেমিটেন্স নগদ ও বৈদেশিক মুদ্রায় আনয়ন করেন তা ব্যাংকিং চ্যানেলে রাষ্ট্রীয় রিজার্ভে জমা হওয়ার কথা। কিন্তু অসাধু ব্যাংকারগণ ব্যাংকের টাকা ব্যবহার করে তা ব্যাংকিং চ্যানেলে সংগৃহীত না দেখিয়ে নিজেরাই ক্রয়পূর্বক মার্কেটে বিক্রয় করে দেন, যা পরবর্তীতে মানিলন্ডারিংয়ের মাধ্যমে আবার বিদেশে পাচার হয়ে যায়। এভাবে দেশের মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা পাচার হয়ে দেশের অর্থনৈতিক কাঠামোকে ক্ষতিগ্রস্থ করে আসছে।
দুদক সচিব আরও জানান, বিধি ও নিয়ম অনুযায়ী ফরেন কারেন্সি এনকেশমেন্ট ভাউচার এনকেশমেন্টকারীকে দিতে হয়। কিন্তু ব্যাংক ও মানি এক্সচেঞ্জারগণ ভাউচার না দিয়ে বা জাল ভাউচার দিয়ে সরাসরি ফরেন কারেন্সি গ্রহণ করে তার বিনিময়ে টাকা দিয়ে দেয়। এছাড়াও তারা স্বাক্ষরবিহীন, ভুয়া ভাউচার এনকেশমেন্ট স্লিপ প্রদান করেন। এই বিদেশি মুদ্রার ক্রয়কারী ব্যাংক ও মানি এক্সচেঞ্জার প্রতিষ্ঠানসমূহ তাদের মূল হিসাবে প্রতিষ্ঠানের অনুমোদিত একাউন্টে অন্তর্ভূক্ত করেন না। ফলে বিদেশি মুদ্রার কেন্দ্রিয় রিজার্ভে এ সকল বিদেশি মুদ্রা যুক্ত হয়না, যার ফলে বাংলাদেশ বিদেশি মুদ্রার ঘাটতি বা সংকটের সৃষ্টি হয়।
এ বিষয়ে গত ৫ ফেব্রুয়ারি দিনব্যাপী কমিশনের উপপরিচালক সৈয়দ নজরুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি এনফোর্সমেন্ট অভিযান পরিচালনা করা হয়। উক্ত অভিযান পরিচালনা শেষে বিদেশি মুদ্রার কালোবাজারি সাথে জড়িত ব্যাংক ও মানি এক্সচেঞ্জারগণের একটি সংঘটিত চক্রের সন্ধান পাওয়া যায়। এছাড়া অবৈধভাবে ফরেন কারেন্সি ক্রয়-বিক্রয়, পাচার ও কালোবাজারির সাথে জড়িত প্রতিষ্ঠান ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য ব্যক্তিবর্গের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রমাণ অভিযান পরিচালনাকারী টীম সংগ্রহ করেছে। সন্দেহভাজন ও জড়িত ব্যাংক কর্মকর্তারা কমিশনের কর্মকর্তাদের নজরদারিতে রয়েছেন। তাদের মদদাতা ও সহযোগীদের বিষয়েও কমিশনের নির্দেশে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। এ বিষয়ে কমিশন আইন ও বিধি অনুযায়ী পরবর্তী আইনি ব্যব্যস্থা গ্রহণ করা হবে।
মাসুম/বিআরইউ/আরএস