নিজস্ব প্রতিবেদক
ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০২৪, ০৬:২৮ পিএম
নিজস্ব প্রতিবেদক
ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০২৪, ০৬:২৮ পিএম
শীত মৌসুমে নিত্যপণ্য ও সবজির বাজার কিছুটা ক্রেতা সাধারণের নিয়ন্ত্রণে থাকার কথা থাকলেও দেখা গেছে গেছে ভিন্ন চিত্র। তবে শীত শেষ হতেই না হতে বাড়তে শুরু করছে সব ধরনের সবজির দাম। প্রতিটি সবজির দাম আগের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি হতে দেখা গেছে রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে।
এছাড়াও রমজানকে সামনে রেখে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছে প্রতিযোগিতার হারে। সাধারণ মানুষ বাজারে গিয়ে প্রয়োজন অনুযায়ী জিনিস কিনতে পারছে না। তবে অনেকে মনে করছেন রমজানকে কেন্দ্র করে একটি সিন্ডিকেট নিত্যপণ্যের দাম বাড়াচ্ছে। এতে করে মানুষের সাধ্যের বাইরে চলে যাচ্ছে নিত্যপণ্যের দাম।
গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারে আবারও বাড়তির দিকে কিছু কিছু সবজির দাম।
শুক্রবার রাজধানীর বাজারে কেজিতে ১০ থেকে ৪০ টাকা বাড়তি দেখা গেছে বিভিন্ন সবজির দাম।
সাধারণ মানুষের দাবি, বিগত বছরের মতো রমজানের শুরুর আগে থেকেই নিত্যপণ্যের বাজারে প্রতিটি পণ্যের দাম বাড়তে শুরু হয়েছে। তবে রোজায় যেসব পণ্যের দাম বাড়ে তা অসাধু চক্রের কারণেই হয়ে থাকে। সমাধানে কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন সময় আশ্বাস দিলেও তেমন কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এতে বোঝা যাচ্ছে, ভোক্তার জন্য সরকারের দেওয়া শুল্ক ছাড়ের সুবিধা চলে যাচ্ছে অসাধু ব্যবসায়ীদের পকেটে।
রাজধানীর কাঁঠাল বাগান বাজারসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা আর মিনিকেট ৬৫ থেকে ৬০ টাকা কেজি।
মসুরের ডাল বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১৩৫ টাকা কেজি দরে। মুগ ডাল ১৭৫ টাকা, খেসারি ডাল ১১০ টাকা, বুটের ডাল ১০০ টাকা, ছোলা ১০০ টাকা।
প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৭৩ টাকা এবং খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৪৯ টাকায়।
প্যাকেটজাত চিনি ১৪৫ টাকা, খোলা চিনি ১৪০, টাকা, দুই কেজি প্যাকেট ময়দা ১৫০ টাকা, আটা দুই কেজির প্যাকেট ১৩০ টাকা এবং খোলা সরিষার তেল বিক্রি হচ্ছে প্রতি লিটার ১৯০ টাকায়।
বাজার করতে আসা এক বেসরকারি চাকরিজীবী আমার সংবাদকে বলেন, আমরা সারাবছরই তো বেশি দামেই সবজি কিনে খেলাম। সিজন তো খুব বেশি কাজ করলো না। কখনও অনেক বেশি দামে কিনি, আবার কখনও অল্প বেশি দামে কিনি। কম দাম বলতে যেটা বোঝায়, সেটা তো পাই না।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, শীতকালীন সবজি এখন শেষের দিকে। আবারও নতুন করে বাজারে সবজি আসবে। সবমিলিয়ে দাম একটু বাড়তি। এমনকি আসন্ন রমজান মাসেও সবজির বাজার চড়া থাকবে বলেও ধারণা তাদের। এর কারণ ব্যাখ্যা করে বলছেন, একটি সিজনের (ঋতু) শেষ, আরেকটির শুরু; এমন সময়েই আসছে রোজা। যে কারণে সবজির দাম বাড়তি থাকতে পারে।
সবজির বাজারে গিয়ে দেখা যায়, প্রতি পিস লাউ বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা। তাছাড়া ফুলকপি ৫০ টাকা, বাঁধাকপি ৫০ টাকা, ব্রুকলি ৫০ টাকা করে পিস বিক্রি হচ্ছে। দেখা যায় পেঁয়াজকলি, লম্বা বেগুন, কচুরমুখী, উচ্ছে, ধুন্দল, বরবটির দাম বেড়েছে কেজিতে ১০ টাকা থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত।
বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৩০ টাকা, লাল ও সাদা আলু ৪০ টাকা, নতুন দেশি রসুন ১৫০ টাকা, চায়না রসুন ২০০ টাকা, ভারতীয় আদা ২০০ থেকে ২২০, চায়না আদা ২২০ থেকে ২৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
গত সপ্তাহের সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যায়, আজ আলুর দাম কমেছে ৫ টাকা এবং চায়না আদার দাম বেড়েছে ২০ টাকা।
প্রতি কেজি শিম বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা। এছাড়াও শালগম ৫০ টাকা, টমেটো ৫০ টাকা, পেঁয়াজ কলি ৬০ টাকা, মটরশুঁটি ৮০-১০০ টাকা, মুলা ৪০ টাকা, দেশি গাজর ৪০ টাকা, বেগুন ৮০ টাকা, শসা ৮০ থেকে ১০০ টাকা, ক্ষিরা ৮০ টাকা, করলা ১৬০ টাকা, পেঁপে ৫০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৪০ টাকা, ঢেঁড়স ১২০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০ টাকা, ধুন্দল ১০০ টাকা, বরবটি ১৪০ টাকা, কচুর লতি ১০০ টাকা, সজনে ২০০ টাকা, কচুরমুখী ১২০, কাঁচা মরিচ ৬০ টাকা, ধনেপাতা ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
মাছের বাজারে দেখা যায়, প্রতিটি মাছের ওজন অনুযায়ী ইলিশ ১৭০০ টাকা, রুই মাছ ৩৮০ টাকা, কাতল মাছ ৪০০ টাকা, কালবাউশ ৫০০ টাকা, চিংড়ি মাছ ৭০০ টাকা, কাঁচকি মাছ ৫০০ টাকা, কৈ মাছ ২৫০ টাকা, পাবদা মাছ ৪০০ টাকা, শিং মাছ ৪০০ টাকা, টেংরা মাছ ৬০০ টাকা, মেনি মাছ ৫০০ টাকা, কাজলি মাছ ১১০০ টাকা, বোয়াল মাছ ৬০০ টাকা, রূপচাঁদা মাছ ১০০০ টাকা শোল মাছ ৭০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি ১৯৮-২১০ টাকা, কক মুরগি ২৮৩-৩০০ টাকা, লেয়ার মুরগি ২৮৫-২৯০ টাকা, দেশি মুরগি ৫০০ টাকা, গরুর মাংস ৭৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর মুরগির লাল ডিম প্রতি ডজন বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ টাকায় এবং সাদা ডিম ১৩০ টাকা।
সবজি ব্যবসায়ী জাবের (ছদ্মনাম) আমার সংবাদকে বলেন, শীতের শেষে সবজির দাম তুলনামূলক বাড়ে। এবার রোজার মাসটা এমন সময় আসছে, যখন শীতের সবজির শেষ পর্যায়ে। আবার নতুন সবজিরও শুরুর দিকে। তাই বলাই যায়, এবার রোজায় সবজির দাম বেশিই থাকবে।
রূপস নামের এক ক্রেতা আমার সংবাদকে বলেন, অনেকে দামের কারণে গরুর মাংস কেনা ছেড়ে দিয়েছিলেন। মাঝখানে দাম কমানোয় ক্রেতা বেড়েছিল। এখন আবার দাম বাড়া শুরু করেছে। রমজান মাসকে কেন্দ্র করে গরুর মাংসের দাম বেড়েছে। রমজান শুরু হলে এর দাম কোথায় গিয়ে ঠেকবে কে জানে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমানে মোটামুটি স্থিতিশীল আছে ডলারের দাম, ডলারের জোগানও বাড়ানো হয়েছে আমদানির জন্য। বাকিতে পণ্য আমদানির সুযোগ দেওয়া হয়েছে। শিথিল করা হয়েছে এলসি মার্জিন। কমানো হয়েছে শুল্ক। তবুও কমছে না নিত্যপণ্যের দাম। সিন্ডিকেটের কারসাজি বন্ধে সময়মতো জোরালো পদক্ষেপ নেওয়া দরকার বলেন জানান তারা। নিত্যপণ্যের আকাশছোঁয়া দামে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে সাধারণ ও নিম্ন আয়ের মানুষকে। দেশে বর্তমানে সরবরাহ সংকট না থাকলেও কিছু অসাধু আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীদের একটি অংশ রমজান সামনে রেখে কীভাবে নিত্যপণ্যের বাজার অস্থির করে তুলছে, তার তদন্ত হওয়া দরকার।
মজুমদার/ইএইচ