Amar Sangbad
ঢাকা সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪,

ডেপুটি গভর্নর হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে এস আলমকে সুবিধা দেওয়া কর্মকর্তারা

নিজস্ব প্রতিবেদক

নিজস্ব প্রতিবেদক

আগস্ট ২০, ২০২৪, ০১:৩৪ পিএম


ডেপুটি গভর্নর হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে এস আলমকে সুবিধা দেওয়া কর্মকর্তারা

সমালোচিত ব্যবসায়ী গ্রুপ এস আলমকে অনৈতিক সুবিধা দিতে কাজ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা। সেসব দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তারাই এখন আবার ডেপুটি গভর্নর হওয়ার জন্য দৌঁড়-ঝাপ করছেন।

সরকার পতনের পর গত ৬ আগস্ট বাংলাদেশ ব্যাংকে এস আলম ঘনিষ্ঠ গভর্নর ও ডেপুটি গভর্নরদের পদত্যাগের দাবিতে নজিরবিহীন বিক্ষোভ হয়। এরপর আব্দুর রউফ তালুকদার পলাতক অবস্থায় পদত্যাগ করেছেন।

এছাড়া ডেপুটি গভর্নর কাজী ছাইদুর রহমান, খুরশীদ আলম, বিএফআইইউ প্রধান মাসুদ বিশ্বাস ও নীতি উপদেষ্টা আবু ফারাহ মো. নাছের পদত্যাগে বাধ্য হয়েছেন।

তথ্য মতে, বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর পদে নিয়োগ দেওয়ার জন্য দুই জন যোগ্য ব্যক্তিকে খুঁজছে সার্চ কমিটি, যাদেরকে এ সপ্তার মধ্যেই নিয়োগ দেওয়া হবে। বর্তমানে নির্বাহী পরিচালক পদে দায়িত্বরতরাও আছেন সার্চ কমিটির নজরে। তবে বাদ যাচ্ছেন বেশ কয়েকজন বিতর্কিত কর্মকর্তা, যারা শেখ হাসিনা সরকারের আমলে ব্যাংক লুটপাটের সহযোগী হয়েছেন।

বিগত দিনে ব্যাংক লুটপাটে যেসব কর্মকর্তা সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা করেছেন- নির্বাহী পরিচালক আনোয়ারুল ইসলাম, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক, নির্বাহী পরিচালক সাইফুল ইসলাম, নির্বাহী পরিচালক কাজী রফিকুল হাসান ও বাংলাদেশ ব্যাংকের চট্টগ্রাম শাখার নির্বাহী পরিচালকের দায়িত্বে থাকা আরেফ হোসাইন খান।

এদের মধ্যে এস আলম আনোয়ার খ্যাত এই নির্বাহী পরিচালকের বিরুদ্ধে আছে শত শত অভিযোগ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিচালক থাকা অবস্থায় তিনি ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামি ব্যাংকের কর্মকর্তা নিয়োগের ভাইবায় অংশগ্রহণ করতেন। অথচ কোনো পরিচালকের বেসরকারি কোনো ব্যাংকের ভাইবায় অংশগ্রহণ করার বিধান নেই। সাম্প্রতিক সময়ে তার বিরুদ্ধে ঋণ কেলেঙ্কারির সহযোগিতার অভিযোগ ওঠায় তাকে রংপুরে বদলি করা হয়। তবে তিনি এস আলমের প্রভাব খাটিয়ে আবারও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে চলে আসেন। এছাড়া পরিচালক ও নির্বাহী পরিচালক থাকা অবস্থায় এস আলম গ্রুপের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে অবৈধ সুবিধা দিয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

এদিকে নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হক বাংলাদেশ ব্যাংকের সবচেয়ে বড় ‘দুর্নীতিবাজ’ কর্মকর্তা এবং ব্যাংক ‘ডাকাতদের’ সবচেয়ে বড় দোসর হিসেবে অভিযুক্ত হয়েছেন। বিতর্কিত এস আলম গ্রুপের মুখপাত্র হিসেবেও উপস্থাপন করা হয়েছে তাকে। সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের সাথে তার সখ্যতা এবং পলকের নির্দেশে অনৈতিক উপায়ে মোবাইল আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান নগদকে লাইসেন্স ছাড়াই কার্যক্রম পরিচালনা করতে সহায়তা করেছেন তিনি।ল। অর্থ পাচারের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগও আছে এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।

নির্বাহী পরিচালক কাজী রফিকুল হাসান বেক্সিমকো গ্রুপ ও এস আলম গ্রুপের ‘একনিষ্ঠ শুভাকাঙ্খী’ হিসেবে অভিযুক্ত। বাংলাদেশ ব্যাংকের চট্টগ্রাম অফিসে দায়িত্ব পালনকালে এস আলম গ্রুপকে বিশেষ সুবিধা দিয়ে ‘আস্থাভাজন’ হয়েছেন। তার অবৈধ সম্পত্তি অর্জনের বিষয়টিও সামনে এসেছে।

তালিকায় আছেন নির্বাহী পরিচালক সাইফুল ইসলাম, যিনি ব্যাংক খাতের সর্ববৃহৎ লুটেরা হিসেবে চিহ্নিত এস আলম গ্রুপের ‘শুভাকাঙ্ক্ষী’ হিসেবে পরিচিত। সহকারী পরিচালক হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকে যোগ দিয়ে চারটি ক্যাডার অর্থাৎ ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার পদ পর্যন্ত ব্যাংকিং রেগুলেটরি এন্ড পলিসি ডিপার্টমেন্টে (বিআরপিডি) চাকরি করেন তিনি। বিশেষ ব্যাবসায়ী গ্রুপের আনুকূল্যে তিনি এই অতিগুরুত্বপূর্ণ বিভাগে দীর্ঘদিন চাকরি করেন এবং এই সময়ে ব্যবসায়ী গ্রুপগুলোকে বিশেষ সুবিধা দেওয়ার লক্ষ্যে অনেক প্রজ্ঞাপন জারিতে উদ্যোগী ভূমিকা রাখেন। নির্বাহী পরিচালক হওয়ার পরও এই বিভাগটি তার অধীনে রয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের চট্টগ্রাম শাখার নির্বাহী পরিচালকের দায়িত্বে থাকা আরেফ হোসাইন খান রয়েছেন বিষয়ে অভিযোগ রয়েছে। তিনি এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম মাসুদের ‘কাছের’ লোক। বিশেষ তদবিরের মাধ্যমে সাইফুল আলম মাসুদ তাকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চট্টগ্রাম শাখায় নিয়ে গেছেন।

সম্প্রতি বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুরকে গভর্নর নিয়োগ দিয়েছে সরকার। আর ডেপুটি গভর্নরের শূন্য পদে নিয়োগ দিতে সাবেক কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরীকে আহ্বায়ক করে চার সদস্যের সার্চ কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ মুস্তাফা কামাল মুজেরী, বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য ও সাবেক ডেপুটি গভর্নর নজরুল হুদা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের যুগ্ম সচিব বদরে মুনির ফেরদৌস।

জানা গেছে, সার্চ কমিটি গতকাল সোমবার বৈঠক করে কয়েকজনের নামে সুপারিশের জন্য একটি তালিকা প্রস্তুত করেছে। এ তালিকায় এস আলম এসব ঘনিষ্ঠ নির্বাহী পরিচালকদের নাম রয়েছে।


বিআরইউ

Link copied!