নিজস্ব প্রতিবেদক
ডিসেম্বর ৮, ২০২৪, ০২:৩৭ পিএম
নিজস্ব প্রতিবেদক
ডিসেম্বর ৮, ২০২৪, ০২:৩৭ পিএম
এবি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন তারিক আফজাল।
রোববার ব্যাংকটির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তারিক আফজাল আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপকমিটির সদস্য।
ব্যাংকটির মুখপাত্র মো. আজাদকে বিষয়টি জানতে ফোন করা হলেও তিনি কল ধরেননি, মুঠোফোনে ম্যাসেজ পাঠালেও তিনি কোনো উত্তর দেননি।
এবি ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, রোববার এমডি কানাডা থেকে দেশে ফিরে যোগদান করার থাকলেও তিনি যোগ দেননি।
সূত্রটি আরও জানায়, তার স্ত্রী দীর্ঘদিন ধরে কানাডায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তিনি দীর্ঘদিন অফিস অনুপস্থিত ছিলেন। পরে স্ত্রীর অসুস্থতার কারণ জানিয়ে সেই ছুটি বৃদ্ধি করেন।
ব্যাংকটি কর্মকর্তারা জানান, আওয়ামী লীগের রাজনীতি করার কারণে তিনি প্রচণ্ড চাপে ছিলেন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিচারে এককালের জৌলুসপূর্ণ এবি এখন রুগ্ণ প্রায় ব্যাংকের উদাহরণ। ব্যাংকটির পেছনে ঘুরতে হচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশন দুদকের তদন্ত কর্মকর্তাদের, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা নিয়ে আসছেন থানা পুলিশ। এমন দৃশ্যে ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন আমানতকারীসহ গ্রাহকদের আনাগোনা বাড়ছে ব্যাংকের শাখাগুলোতে।
বিএনপি নেতা এম মোরশেদ খানের উদ্যোগে ১৯৮২ সালে এবি ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়। অপ্রতিরোধ্য গতিতে চলছিল ২০০১ সাল নাগাদ। ঐ বছর এম মোরশেদ খান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর শপথ নিয়ে ব্যাংকের দায়িত্ব দেন ছেলে ফয়সাল মোরশেদ খানের হাতে। তখন থেকেই অনিয়ম ভর করে ব্যাংকটিতে।
২০০৭ সালে চেয়ারম্যান পদ ছাড়েন ফয়সাল মোরশেদ খান। কিন্তু নেপথ্য কলকাঠি ছিল তারই হাতে। ওয়ান-ইলেভেনের পর একে একে দুর্নীতির পাহাড়ের খোঁজ মেলে এবি ব্যাংকে।
ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। চোখ পড়ে বিএনপি নেতার এ ব্যাংকটিতে। অদৃশ্য ইশারায় দুদকের ফাইল চলছিল রকেট গতিতে। দুদকে অর্ধডজন মামলা। ফলে ব্যাংকটির প্রতি গ্রাহকদের আস্থা ধসে যাচ্ছিল বালুর বাঁধের মতো।
এ পরিস্থিতিতে এবি ব্যাংকের পাশে দাঁড়ায় বাংলাদেশ ব্যাংক। একজন সাবেক ডেপুটি গভর্নরকে চেয়ারম্যানের চেয়ারে বসায়। তবে এ সুযোগ হাতছাড়া করেনি শেখ হাসিনা সরকার। দলীয় নেতা তারিক আফজালকে বসান প্রধান নির্বাহীর (ভারপ্রাপ্ত) আসনে। এরপর ব্যবস্থাপনা পরিচালক। শুরু হয় ফ্যাসিবাদের দোসরদের পুনর্বাসন। এ অবস্থা চলমান জুলাই বিপ্লবের পরেও।
বাংলাদেশের প্রথম বেসরকারি ব্যাংক। নাম এবি ব্যাংক। আশির দশকে সাধারণ জনতা চিনতো আরব বাংলাদেশ ব্যাংক নামে। দেড়যুগ আগে পরিবর্তিত হয়ে ইংরেজির প্রথম দুই বর্ণ নিয়ে এখন শুধুই এবি ব্যাংক।
আধুনিক সেবার কারণে এবি ব্যাংকের জুড়ি ছিল না। ইসলামি ব্যাংকিং শাখা করায় গ্রাহক বেড়েছিল হু হু করে। কালের আবর্তে নতুন পুরোনো ঘটন-অঘটনের কারণে এ ব্যাংকের জৌলুস এখন ইতিহাস।
চার দশকের পথচলায় ঘরে-বাইরে নানামুখী চক্রান্তে বদল হয়েছে ব্যাংকটির চালিকা শক্তি। সর্বদিক থেকে প্রশংসিত হওয়ায় এতে নজর পড়েছিল স্বৈরাচারের। উদ্যোক্তাদের অতিলোভ আর দখলদার চক্রের কারণে এবি ব্যাংক হয়েছে চিঁড়েচেপটা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিচারে এককালের জৌলুসপূর্ণ এবি এখন রুগ্ণ প্রায় ব্যাংকের উদাহরণ। ব্যাংকটির পেছনে ঘুরতে হচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশন দুদকের তদন্ত কর্মকর্তাদের, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা নিয়ে আসছেন থানা পুলিশ। এমন দৃশ্যে ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন আমানতকারীসহ গ্রাহকদের আনাগোনা বাড়ছে ব্যাংকের শাখাগুলোতে।
কে এই তারিক আফজাল?
সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে ১৯৯৯ সালে ‘রং হেডেড’ আখ্যায়িত করেছিলেন প্রধান বিচারপতি এ. টি. এম. আফজালের নেতৃত্বাধীন পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ। এ. টি. এম. আফজাল ছিলেন স্বাধীন দেশের অষ্টম প্রধান বিচারপতি। তারই ছেলে এবি ব্যাংকের এমডি তারিক আফজাল। আশির দশকের শেষের দিকে যুক্তরাজ্যে তার ব্যাংকিং কর্মজীবন শুরু হয়। এরপর কানাডায় ছিলেন তিনি। দেশি-বিদেশি ব্যাংক-বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানে চাকরির সুবাদে সখ্যতা হয়েছিল বিদেশিদের সঙ্গে। দেশে ফিরে সক্রিয় হয়ে উঠেন রাজনীতিতে।
বাবার দেয়া ‘মাথা খারাপ’ খ্যাতিপ্রাপ্ত শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগের সঙ্গেই যুক্ত হন তিনি। সিঁড়ি বেয়ে তারিক আফজাল উপহার পান আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক উপ-কমিটির ৯ নম্বর সদস্যপদ। ২০২৩ সালের ২৪ জুলাই সোমবার গঠিত হয় এ কমিটি। যার মেয়াদ এখনো আছে।
সোহেল/ইএইচ