আমার সংবাদ ডেস্ক
জানুয়ারি ২৫, ২০২৫, ০৮:১০ পিএম
আমার সংবাদ ডেস্ক
জানুয়ারি ২৫, ২০২৫, ০৮:১০ পিএম
চলমান অর্থনৈতিক সংকটে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে পরিচালিত ধীরগতির প্রকল্পগুলো থেকে ৬৭০ মিলিয়ন ডলার অন্যান্য খাতে খরচ করতে চায় সরকার।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা একটি গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, এর মধ্যে প্রায় ৫০০ মিলিয়ন ডলার বাজেট সহায়তায় খরচ হবে। অবশিষ্ট টাকা নতুন প্রকল্পে খরচ হতে পারে।
গত সপ্তাহে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) নতুন এ পরিকল্পনা বিশ্বব্যাংকের কাছে অনুমোদনের জন্য জমা দিয়েছে। আগামী মাসে বিশ্বব্যাংকের এক ভাইস প্রেসিডেন্টের বাংলাদেশ সফরকালে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হবে।
ইআরডির তথ্য অনুসারে, যে আট ধীরগতির প্রকল্পের টাকা অন্য খাতে খরচ করা হবে সেগুলো হলো—উচ্চশিক্ষার স্বীকৃতি ও রূপান্তর; অর্থনৈতিক রূপান্তরের জন্য দক্ষতা বাড়ানো; পরিবেশগত টেকসই ও রূপান্তর; ডিজিটাল সরকার অর্থনীতির উন্নয়ন; টেকসই বন ও জীবিকা; বেসরকারি বিনিয়োগ ও ডিজিটাল উদ্যোক্তা; অভিযোজন ও দুর্বলতা কমাতে টেকসই অবকাঠামো নির্মাণ এবং জলবায়ুসহিঞ্চু কৃষি ও পানি ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন।
গত বছরের আগস্টে অন্তর্বর্তী সরকার বাজেট সহায়তা এবং ব্যাংকিং ও জ্বালানি খাতের সংস্কারের জন্য উন্নয়ন সহযোগীদের কাছে নতুন করে ঋণ চাওয়ার পর ধীরগতির প্রকল্পগুলোর টাকা অন্য খাতে ব্যবহারের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এরপর গত বছরের ১৪ অক্টোবর বিশ্বব্যাংক ও প্রকল্প কর্মকর্তাদের সঙ্গে বসে ইআরডি চলমান ১১ প্রকল্প থেকে ৭২৩ দশমিক ৬৪ মিলিয়ন ডলার অন্য খাতে ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেয়। বৈঠকের পর সিদ্ধান্ত হয়, প্রকল্পগুলো থেকে ৬৭০ মিলিয়ন ডলার সরিয়ে নেওয়া হতে পারে।
কয়েক বছরে বিশ্বব্যাংক ১১ প্রকল্পের জন্য প্রায় তিন দশমিক দুই বিলিয়ন ডলার অনুমোদন দেয়। তবে ইআরডি ও প্রকল্প কর্মকর্তাদের ভাষ্য, প্রকল্প বাস্তবায়নে দেরির কারণে গত বছরের জুন পর্যন্ত মাত্র ৬৬১ দশমিক আট মিলিয়ন ডলার বিতরণ সম্ভব হয়েছে।
ধীরগতির প্রকল্পগুলোর মধ্যে একটি সড়ক নিরাপত্তা প্রকল্প। গত এক দশকে সড়ক দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে এই প্রকল্প নেওয়া হয়। বাংলাদেশে সড়ক নিরাপত্তা উন্নত করতে এবং উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ সড়ক-মহাসড়কে দুর্ঘটনায় হতাহত কমাতে বিশ্বব্যাংক ৩৫৮ মিলিয়ন ডলার ঋণ অনুমোদনের এক বছরেরও বেশি সময় পর ২০২৩ সালের এপ্রিলে সরকার চার হাজার ৯৮৮ কোটি ১৪ লাখ টাকার এই প্রকল্প গ্রহণ করে।
প্রকল্পটির বেশ কয়েকটি অংশ সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং বাংলাদেশ পুলিশ বাস্তবায়ন করবে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে গাজীপুর থেকে এলেঙ্গা ও নাটোর-নবাবগঞ্জ মহাসড়কে উন্নত প্রকৌশল নকশা প্রণয়ন, রোড সাইন ও মার্কিং, পথচারীদের সুবিধা, গতি নিয়ন্ত্রণ এবং জরুরি সেবাসহ বিস্তৃত সড়ক নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করা হবে।
বিশ্বব্যাংকের হিসাব অনুসারে, এই উদ্যোগের ফলে দুই মহাসড়কে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর হার ৩০ শতাংশের বেশি কমানো যাবে।
এটি দুর্ঘটনা-পরবর্তী সেবা পরিস্থিতিও উন্নত করবে। জীবন বাঁচাতে টোলমুক্ত নম্বরের অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবা দেবে। দুটি জাতীয় মহাসড়ক করিডোর বরাবর জেলা হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোয় জরুরি চিকিৎসাসেবা উন্নত করবে।
প্রকল্পটি অনুমোদনের ২০ মাসেরও বেশি পেরিয়ে গেলেও পরামর্শক নিয়োগ দিতে পারেনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। নথিপত্রে দেখা যায়, গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পটির আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে এক শতাংশেরও কম। পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, প্রকল্প থেকে ৭৫ মিলিয়ন ডলার অন্য খাতে ব্যবহার করা হবে।
আরেকটি ধীর গতির প্রকল্প চার হাজার ২৮০ কোটি টাকার প্রাণিসম্পদ ও দুগ্ধ উন্নয়ন প্রকল্প। দেশে প্রাণিসম্পদ ও দুগ্ধ খামারে সংখ্যা বাড়াতে ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে প্রকল্পটি চালু হয়। প্রকল্পের আওতায় কৃষকদের কীটনাশকসহ রাসায়নিক পণ্যের পাশাপাশি ২৬ ধরনের কৃষি যন্ত্রপাতি সরবরাহ করার কথা।
২০১৮ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পটির জন্য বিশ্বব্যাংকের ৫০০ মিলিয়ন ডলার দেওয়ার কথা ছিল। প্রকল্প কর্তৃপক্ষ টাকা খরচ করতে না পারায় ঋণের মেয়াদ ২০২৫ সালের জুলাই পর্যন্ত বাড়ানো হয়।
বিশ্বব্যাংকের তথ্য বলছে—গত বছরের জুন পর্যন্ত মোট ২৮১ দশমিক ৫৮ মিলিয়ন ডলার দেওয়া হয়েছে। পরে সিদ্ধান্ত হয়, প্রকল্প থেকে ১০০ মিলিয়ন ডলার অন্য খাতে খরচ করা হবে।
২০১৯ সালের মে মাসে সরকার ঢাকা শহরের চারটি বড় এলাকায় বসবাসের পরিবেশ উন্নত করতে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে ১০০ দশমিক পাঁচ মিলিয়ন ডলারের চুক্তি করে। এর ফলে শহরের প্রায় ১০ লাখ বাসিন্দা উপকৃত হবেন।
ঢাকা সিটি নেইবারহুড আপগ্রেডিং প্রকল্প ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অধীন কামরাঙ্গীর চর, লালবাগ, সূত্রাপুর-নয়াবাজার-গুলিস্তান, খিলগাঁও-মুগদা-বাসাবোয় নাগরিক ও নগর সেবা বাড়াবে।
জানা গেছে, গত বছরের জুন পর্যন্ত বিতরণ করা হয়েছে ২০ দশমিক ৮৩ মিলিয়ন ডলার। পরে সিদ্ধান্ত হয়, প্রকল্প থেকে ২২ মিলিয়ন ডলার অন্য খাতে খরচ করা হবে।
ইএইচ