নিজস্ব প্রতিবেদক
জানুয়ারি ২৮, ২০২৫, ০৭:৩৩ পিএম
নিজস্ব প্রতিবেদক
জানুয়ারি ২৮, ২০২৫, ০৭:৩৩ পিএম
দুর্বল ব্যাংকে জমা রাখা টাকা গ্রাহকদের ফেরত দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। তিনি বলেছেন, জমাকৃত অর্থ ধাপে ধাপে ফেরত দেওয়া হবে, তবে এর জন্য কিছুটা সময় প্রয়োজন।
মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটির (এমআরএ) প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এমআরএর এক্সিকিউটিভ ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন। আরও উপস্থিত ছিলেন আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারেক ও পিকেএসএফ-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ফজলুল কাদের।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, অতিরিক্ত সুদের প্রলোভনে দুর্বল ব্যাংকে অর্থ রাখার ফলে গ্রাহকরা সমস্যায় পড়েছেন। গত ১০ বছর আগে থেকে বলে আসছি যে এস আলমের ব্যাংকে আপনারা টাকা রাখবেন না। কিন্তু আপনারা টাকা রেখেছেন। তারা দুই শতাংশ সুদ বেশি দিয়েছে, আর আপনারা সেখানেই টাকা রেখেছেন; এখন ধরা খেয়েছেন। জমাকৃত অর্থ আপনারা ফেরত পাবেন তবে এ জন্য কিছুটা সময় দিতে হবে। এই অর্থ ধাপে ধাপে ফেরত দেওয়া হবে।
অপর এক প্রশ্নে গভর্নর বলেন, এখন আপনাদের আমরা উদ্ধার করব কিন্তু সেটি এখনই সম্ভব না। আমরা ধাপে ধাপে করব; এ জন্য সময় দিতে হবে। আমরা ব্যাংক রেজুলেশন অ্যাক্টের দিকে যাচ্ছি, কিছু ব্যাংক একীভূত করতে হবে। অনেক কিছু করা যাবে, করা হবে। এ বছরেই হয়তো অনেক কিছু করা হবে। এতটুকু বলতে পারি, আপনারা টাকা পান, আর বন্ড পান, কিছু একটা পাবেন।
এ সময় ফজলুল কাদের বলেন, ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমে ওভারল্যাপিংয়ের সমস্যা নিরসনে পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। এমআরএর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সনদপ্রাপ্ত ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানগুলো ৩ লাখ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করেছে, যা আগের বছরের তুলনায় ৫ দশমিক ২৬ শতাংশ বেশি।
গভর্নর মনসুর সরকারের ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমের যৌক্তিকতা পর্যালোচনার পরামর্শ দেন এবং এ খাতে আরও সমন্বয়ের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি (এমআরএ) সূত্র জানায়, ২০২৪ অর্থবছরে কৃষি খাতে প্রদত্ত ঋণের পরিমাণ ১৩০ হাজার কোটি টাকা (বিতরণকৃত ঋণের প্রায় ৫০%)। ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানগুলো সারাদেশে আর্থিক সেবা প্রদানের পাশাপাশি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, উচ্চশিক্ষা বৃত্তি এবং দুর্যোগ মোকাবিলাসহ গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে চলেছে।
মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি টেকসই ক্ষুদ্রঋণ সেক্টর প্রতিষ্ঠার কাজে সার্বক্ষণিকভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এমআরএ ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানের সনদ প্রদান, বিধি, নীতিমালা, সার্কুলার প্রদানের মাধ্যমে সুশৃঙ্খল করা, দরিদ্র জনগোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষায় তাদের গচ্ছিত আমানতের উপর সুদ প্রদানে ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানগুলোকে অগ্রাধিকার হিসাবে নির্ধারণ করার পরামর্শ প্রদানসহ নানামুখী সংস্কারমূলক কাজ করে যাচ্ছে।
দুর্যোগকালীন সময়ে ঋণের কিস্তি আদায় স্থগিত রাখা, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা করাসহ ঋণমান বিষয়ক নানা ধরনের নির্দেশনা ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানগুলোকে সেবামুখী করছে। গ্রাহকের ঋণপ্রাপ্তি সহজতর করার জন্য অর্থায়নকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে এমআরএ নিয়মিত সমন্বয় করে যাচ্ছে।
কর্মশালায় উপস্থাপিত প্রকাশনায় সার্বিকভাবে এমআরএ এর তথ্যসহ ক্ষুদ্রঋণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের বছরভিত্তিক সদস্য, ঋণগ্রহীতা, সঞ্চয়স্থিতি, ঋণস্থিতি, ঋণবিতরণ ও আদায়, মোট ঋণের বিপরীতে কৃষি ঋণ, ক্ষুদ্র উদ্যোগ ঋণ ইত্যাদি গুরত্বপূর্ণ তথ্যাদি সন্নিবেশিত রয়েছে। বিশেষ করে এমএফআই এর ঋণযোগ্য তহবিলের উৎস, অপারেটিং কষ্ট রেশিও, রিস্ক মেজারিং রেশিও ইত্যাদি, ঋণস্থিতির ভিত্তিতে এমএফআইগুলোর অবস্থান উল্লেখ করা হয়েছে। ফলে প্রকাশনাটি ক্ষুদ্রঋণ খাতে অর্থায়নকারী সংস্থাসহ বিভিন্ন সরকারী বেসরকারী সংস্থা, গবেষক এবং শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ক্ষুদ্রঋণ সেক্টর বিশ্লেষণে খুবই কার্যকর ভূমিকা রাখছে। প্রধান অতিথিসহ সকলে এমআরএ এর এই ধরণের উদ্যোগের প্রশংসা করেন এবং প্রকাশনার বিষয়ে বেশ কিছু পরামর্শও প্রদান করেন। প্রধান অতিথি ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানগুলোর কাজে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ, দক্ষ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় এমআরএকে বিভিন্ন প্রকাশনার পাশাপাশি সেক্টরের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় চিহ্নিত করে গবেষণা কার্য পরিচালনার উপর জোর দেন। এছাড়া তিনি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিগণকে বৈষম্যমূলক সমাজ ব্যবস্থা নির্মাণ করতে, অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর করতে সমাজের প্রান্তিক মানুষের মাঝে অর্থের প্রবাহ বৃদ্ধির আহ্বান জানান। পরিশেষে অনুষ্ঠানের সভাপতি কর্মশালায় উপস্থিত হয়ে অনুষ্ঠানটিকে সফল করার পাশাপাশি তাদের সুচিন্তিত মতামতের জন্য প্রধান অতিথি ও বিশেষ অতিথিসহ সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে অনুষ্ঠান শেষ করেন।
উক্ত কর্মশালায় আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র কর্মকর্তাগণ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, বাংলাদেশ ব্যাংক, এনজিও বিষয়ক ব্যুরো, সমাজসেবা অধিদপ্তর, রেজিস্ট্রার অব জয়েন্টস্টক কোম্পানিজ অ্যান্ড ফার্মস, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর, বিআইডিএস, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো, বিআরডিবি, গ্রামীণ ব্যাংক, পিকেএসএফ, আইএনএম, সিডিএফ, ইনাফি বাংলাদেশ এর প্রতিনিধিগণ উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠান, সরকারী ও বেসরকারী ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী ও প্রতিনিধিগণ এবং বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
আরএস