আমার সংবাদ ডেস্ক
এপ্রিল ১২, ২০২৫, ০৭:৪৬ পিএম
আমার সংবাদ ডেস্ক
এপ্রিল ১২, ২০২৫, ০৭:৪৬ পিএম
অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে ছাঁটাইকৃত শ্রমিক পুনর্বাসন, মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও বকেয়া মজুরি পরিশোধসহ ৭ দফা দাবি জানিয়েছেন শ্রমিক সংগঠনগুলোর আন্তর্জাতিক জোট ইন্ডাস্ট্রিয়াল বাংলাদেশ কাউন্সিলের (আইবিসি) নেতারা।
শনিবার (১২ এপ্রিল) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনী মিলনায়তনে আইবিসি আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তারা এই আহ্বান জানান। আইবিসির সভাপতি জনাব তৌহিদর রহমানের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পেশ করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক বাবুল আখতার।
আইবিসি হচ্ছে ইন্ডাস্ট্রিঅল গ্লোবাল ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত বাংলাদেশের জাতীয় শ্রমিক সংগঠনসমূহের সমন্বয়ে গঠিত একটি বৃহৎ ও শক্তিশালী প্ল্যাটফর্ম, যা বর্তমানে তৈরি পোশাক শিল্পে কর্মরত প্রায় ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ শ্রমিকের প্রতিনিধিত্ব করছে। শ্রমিকদের অধিকার, মর্যাদা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করতে আইবিসি বিগত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে নীতি নির্ধারণ, সংলাপ, আন্দোলন ও সংগ্রামের মাধ্যমে সক্রিয় ভূমিকা রেখে চলেছে।
আইবিসির সাধারণ সম্পাদক বাবুল আখতার বলেন, সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র সরকারের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের ওপর ৩৭ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত আমাদের শিল্পখাতের জন্য একটি গুরুতর হুমকি হয়ে দেখা দিয়েছে। তবে আমরা সরকারের কূটনৈতিক উদ্যোগের প্রশংসা করি। যার ফলে এই ট্যারিফ ৯০ দিনের জন্য স্থগিত রাখা সম্ভব হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত অস্থায়ী স্বস্তি দিলেও, ভবিষ্যতের জন্য এখনও অনিশ্চয়তা থেকেই যাচ্ছে। আমরা আশা করি, সরকার এই বিষয়ে উচ্চ পর্যায়ে আরও কৌশলী ও জোরালো ভূমিকা পালন করবে এবং স্থায়ী সমাধানের পথ প্রশন্ত করবে। এরইমধ্যে শিল্পের দোরগোড়ায় অটোমোশন, ন্যায্য রূপান্তর (জাষ্ট ট্রানজিশন) ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে শ্রমিকরা চাকরি হারানোর ঝুঁকিতে রয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, শুল্ক ইস্যু ছাড়াও আমাদের পোশাক শিল্প ইতোমধ্যে নানা সংকটে রয়েছে। গত ৮-৯ মাসে প্রায় ৭০-৮০টি গার্মেন্টস কারখানা বন্ধ হয়েছে, যার ফলে প্রায় ৭০ হাজার শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। তাদের বেশিরভাগই এখনো কোনো পুনর্বাসন সুবিধা পাননি। প্রতিদিন কোথাও না কোথাও শ্রমিকরা মজুরি, সার্ভিস বেনিফিট, ইনক্রিমেন্ট, চাকরি রক্ষা ইত্যাদি দাবি নিয়ে আন্দোলনে নামছেন, যেটি মাঝে মধ্যেই সংঘর্ষে রূপ নিচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়, সরকার ঘোষিত ৯ শতাংশ মজুরি বৃদ্ধি এখনও অধিকাংশ কারখানায় কার্যকর হয়নি। ঈদকে সামনে রেখে সরকারের নির্দেশনা ছিল ১৫ দিনের চলতি (মার্চ) মাসের মজুরি ও উৎসব বোনাস পরিশোধের। কিন্তু বহু কারখানায় তা লঙ্ঘিত হয়েছে। আমরা মনে করি, সরকারের সদিচ্ছা থাকলেও, বাস্তবায়নের দুর্বলতা, তদারকির অভাব এবং মালিক পক্ষের অনমনীয়তা এই বাস্তবতাকে সংকটময় করে তুলছে। অন্যদিকে, সরকার, মালিক ও শ্রমিকদের মধ্যে সম্পাদিত ১৮ দফা সমঝোতা চুক্তির পূর্নাঙ্গ বাস্তবায়ন না হওয়ায় আন্দোলনরত শ্রমিকদের ওপর দমনমূলক ব্যবস্থা-যেমন মিথ্যা মামলা, গ্রেফতার, পুলিশি হয়রানি এবং শ্রমিক নেতাদের টার্গেট করে হেনস্তার প্রবণতা ক্রমবর্ধমান। ২০২৪ সালের মাঝামাঝি থেকে ২০২৫ সালের প্রথম প্রান্তিক পর্যন্ত অন্তত কয়েক ডজন ঘটনায় শ্রমিকদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে, যা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থার পরিপন্থি।
আইবিসির নেতারা দাবি করেন, ট্রেড ইউনিয়ন রেজিস্ট্রেশনের ক্ষেত্রেও আমরা একই ধরনের বাধার মুখে পড়ছি। এখনো প্রায় ৫০টিরও বেশি ট্রেড ইউনিয়নের আবেদন অনিষ্পন্ন অবস্থায় ঝুলে আছে। শ্রমিকদের সংগঠিত হওয়ার সাংবিধানিক অধিকার এখনো বাস্তবে লজ্জিত হচ্ছে। এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের কার্যকর ভূমিকার অভাব স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান। শ্রম আইন সংশোধনের ব্যাপারে আমরা দীর্ঘদিন ধরে যুক্ত আছি। সরকার শুরুতে আমাদের মতামত নিয়ে একটি শ্রমবান্ধব খসড়া তৈরি করলেও, এখন দেখা যাচ্ছে তা মাঝরাতে পাল্টে যাচ্ছে, শ্রমিক স্বার্থের ধারাগুলো বাদ পড়ছে এবং মালিকপক্ষকেন্দ্রিক রূপ নিচ্ছে। প্রক্রিয়াটি এখন আর স্বচ্ছ নয় এবং এতে শ্রমিকদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি, বর্তমান সরকার আন্তরিক। কিন্তু আন্তরিকতা তখনই ফলপ্রসূ হয়, যখন তা মাঠপর্যায়ে বাস্তবায়িত হয়। এখনই সময় সরকারের সদিচ্ছাকে বাস্তব রূপ দিতে দৃঢ় পদক্ষেপ নেওয়ার।
এ প্রেক্ষাপটে, ইন্ডাস্ট্রিয়াল বাংলাদেশ কাউন্সিল (আইবিসি) সরকারের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক বিষয়ে স্থায়ী সমাধানের লক্ষ্যে উচ্চ পর্যায়ের জোর কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা, ছাঁটাইকৃত শ্রমিকদের তালিকা প্রকাশ করে তাদের পুনর্বাসনের কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া, শ্রমিক ও শ্রমিক নেতাদের ওপর দায়েরকৃত সব মিথ্যা মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহার করা, সব ধরনের বকেয়া মজুরি এবং ইনক্রিমেন্ট অবিলম্বে পরিশোধ নিশ্চিত করা, ট্রেড ইউনিয়ন রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া সহজ, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ করা, শ্রম আইন সংশোধনের খসড়া জনসমক্ষে প্রকাশ করা এবং শ্রমিকদের সুপারিশকে অন্তর্ভুক্ত করে তা চূড়ান্ত করা, অটোমোশন, ন্যায্য রূপান্তর (জাষ্ট ট্রানজিশন) ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় করণীয় নির্ধারণে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে নিয়ে জাতীয় আয়োজন করার আহ্বান জানায়।
এসব দাবি আদায়ে ইন্ডাষ্ট্রিয়াল বাংলাদেশ কাউন্সিল-আইবিসি কর্তৃক ১ মে মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে বলে ঘোষণা দেওয়া হয়।
তারা জোর দিয়ে বলেন, শ্রমিকদের কথা না শুনে, তাদের অধিকার উপেক্ষা করে, কেবল মালিকস্বার্থ কেন্দ্রিক নীতি গ্রহণ করলে শিল্পে স্থিতিশীলতা, উৎপাদন ও রপ্তানি-কোনোটাই টেকসই হবে না। এই মুহূর্তে আমাদের প্রয়োজন এক ন্যায্য, মানবিক ও অংশগ্রহণমূলক নীতি প্রয়োগ।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র সহ-সভাপতি সালাউদ্দিন স্বপন, যুগ্ম সম্পাদক শাহাদাত হোসেন, কোষাধ্যক্ষ কামরুল হাসান, নারী বিষয়ক সম্পাদক চায়না রহমান, যুব বিষয়ক সম্পাদক কায়সারুন্নবী রুবেল এবং কেন্দ্রীয় নেতা, নুরুল ইসলাম, রফিকুল ইসলাম ও রাশেদুল আলম রাজুসহ অনেকে।
আরএস