Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০২৪,

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন ইসলামনগরে অবাধে চলছে মাদক সেবন

বিএইচ সজল, খুলনা

বিএইচ সজল, খুলনা

জুন ১৩, ২০২২, ০৬:২৮ পিএম


খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন ইসলামনগরে অবাধে চলছে মাদক সেবন

মাদক সেবন ও অসামাজিক কার্যকলাপের জন্য নিরাপদ আশ্রয়স্থল হয়ে উঠেছে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় (খুবি) সংলগ্ন ইসলামনগর সহ আশপাশের এলাকা। মাদক প্রাপ্তির সহজলভ্যতা এবং প্রশাসনিক ভয় না থাকায় দিনে দিনে বাড়ছে এই এলাকায় মাদকসেবীদের সংখ্যা। স্থানীয়দের অভিযোগ এর বেশিরভাগই কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। আর তাদের ভয়ে মুখ খুলতে সাহস পান না এলাকাবাসী। 

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের গাঁ ঘেঁষা ইসলামনগর এলাকা। এখানে প্রায় দেড়শটি বাড়িতে প্রায় দেড় হাজার শিক্ষার্থী মেস ভাড়া করে থাকে। তাদেরকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে ছোট-বড় দোকানপাট। শিক্ষার্থীদের পদচারণা এই এলাকাকে জমজমাট করে তুলেছে। দেখলে মনে হবে এটি ক্যাম্পাসেরই অংশ। শুধু কাঁটা তারের বেড়া দিয়ে ক্যাম্পাস আর এই এলাকাকে বিভক্ত করা হয়েছে। যাতায়াতের জন্য রয়েছে দুটি গেটের ব্যবস্থা।

একটি গোয়েন্দা সংস্থার তথ্য বলছে, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন ইসলামনগরসহ আশপাশ এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে  খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা মেস ভাড়া নিয়ে থাকছে। এলাকাগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে হওয়ায় বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা একত্রে মাদক সেবন করছে। স্থানীয় বাড়ির মালিকরা এ বিষয়ে প্রতিবাদ করলে, উল্টো বিভিন্ন হুমকি প্রদান করে। 

এমনকি তারা নিয়মিত বাড়ির মালিকদের ভাড়া প্রদান করে না বলে অভিযোগ রয়েছে। আর এসবের নেতৃত্ব দিচ্ছে প্রাক্তন ছাত্ররা। তাদের নামের তালিকা করেছে গোয়েন্দা সংস্থাটি। এদের নেতৃত্বে চলে এসব অপকর্ম। এলাকায় বহিরাগতরা ঘুরতে গেলে মারধরসহ বিভিন্ন ধরনের ব্ল্যাকমেইল করে টাকা আদায় ও মোবাইল ছিনতাইয়েরও অভিযোগ রয়েছে।

অভিযোগ রয়েছে, ইসলামনগর শাহা শিরীন গলির মেস, বঙ্গবন্ধু হলের পকেট গেটের বিপরীত গলির বাড়িগুলোতে নিয়মিত অবাধে মাদক সেবনের স্থানসহ অসামাজিক কার্যকলাপের কেন্দ্র হয়ে উঠেছে। এই জন্য তারা বাড়ির মালিকদের বেশি ভাড়া প্রদান করে। এ কারণে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ভুক্তভোগী হচ্ছে। তারা এই এলাকায় বাসা নিতে পারছে না।

মাদক সরবরাহ কাজে সহায়তা করছে এলাকার কিছু মাদক ব্যবসায়ী। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মাঝেমধ্যে কিছু মাদক ব্যবসায়ীকে পুলিশের হাতে তুলে দিলেও জামিন নিয়ে পুনরায় তারা মাদক সরবারহ করে যাচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইসলামনগর বাড়িওয়ালা সমিতির এক সদস্য বলেন, করোনাকালীন শিক্ষার্থীদের জন্য ৪৫ শতাংশ মেস ভাড়া করা হয়। তবে অনেক মেসে এখনও সেই ৪৫ শতাংশ ভাড়া দিচ্ছে। অনেক সময় ভাড়া চাইতে গেলে খারাপ আচরণ ও চড়-থাপ্পড় খেতে হয়। যাদের বাড়িতে বাড়িওয়ালা থাকে না, তাদের বাড়িতে সন্ধ্যা হলে মাদকের আসর বসে। অনেকে স্বামী-স্ত্রীর পরিচয় দিয়ে গোপনে থাকে। শিক্ষার্থীদের ভয়ে আমাদের এলাকার ছেলেদের দূরে দূরে রাখতে হয়। কোন কথায় গায়ে পড়ে গোলমাল করে ঠিক নেই। 

এই এলাকা সম্পূর্ণ শিক্ষার্থীদের দখলে। পুলিশ প্রশাসন ওদের ভয় পায়। আমরা সরকারের কাছে আবেদন জানাই, আমাদের এলাকা অধিগ্রহণ করে আমাদের অন্যত্র বসবাসের ব্যবস্থা করে দিক। আমরা নিজ জমিতে বাড়ি করেও পরাধীন জীবনযাপন করছি। 

স্থানীয় লোকজন জানান, আগে মাদকপ্রাপ্তি এতো সহজলভ্য ছিলো না। মাদক কেনার জন্য বিভিন্ন জায়গায় যেতে হতো, দূরদূরান্ত থেকে সংগ্রহ করতে হতো। কিন্তু এখন পরিস্থিতি পাল্টে গেছে। একটা ফোন কলেই সহজেই মাদক মিলছে। কোনো জটিলতা ছাড়াই তাই শিক্ষার্থীরা এই এলাকাকে বেছে নিয়েছেন নেশা দ্রব্য গ্রহণের নিরাপদস্থল হিসেবে। সহজেই মাদকপ্রাপ্তির ফলে নবীন শিক্ষার্থীরা কিছু বুঝে উঠার আগেই হয়ে উঠছে মাদকাসক্ত। একের পর এক মাদকের সঙ্গে জড়িয়ে নিজেদের ভবিষ্যতকে অন্ধকারের মধ্যে ঠেলে দিচ্ছে তারা। তবে একের পর এক মাদকের ঘটনা ঘটলেও অজ্ঞাত কারণে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নীরব ভূমিকায় রয়েছেন বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর।

তবে এ ব্যাপারে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বিষয়ক পরিচালক অধ্যাপক শরীফ হাসান লিমন বলেন, সামাজিক অবক্ষয় তো সব জায়গাতেই হয়েছে। এটা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকেও ছুঁয়েছে। আর সেটা পরিবর্তন হওয়া জরুরি বলে আমি মনে করি। আমরা আমাদের শিক্ষার্থীদের ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করি। আর ইসলামনগরে শুধু আমাদের শিক্ষার্থী থাকে না, অন্য আরও কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা থাকে। এখানে যে ঘটনা ঘটেছে কিছু-কিছু আমাদের কানে এসেছে। এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে গিয়ে আমরা তো সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না। আমরা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে প্রতিনিয়ত শিক্ষার্থীদের নিয়ে কথা বলছি। 

আমি মনে করি, অভিভাবকদের নিয়মিত খোঁজখবর রাখা উচিত। তাদের সচেতন হতে হবে। এছাড়া সামাজিক প্রতিরোধ হওয়া দরকার। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী রয়েছে, তারা যদি দেখে আইন ভঙ্গ হচ্ছে তারা ব্যবস্থা নিবে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের উচিত তাদের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে যাওয়া, তারা যেন নিজেদের জায়গা থেকে তাদের বিরত রাখতে পারে। যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সম্পৃক্ত থাকে।

আমারসংবাদ/এআই 

Link copied!