Amar Sangbad
ঢাকা সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪,

‘আন্দোলনের সোনার হরিণ দেখা না দিলে ক্ষমতার ময়ূর সিংহাসন দেখা দেয় না’

ঢাবি প্রতিনিধি

ঢাবি প্রতিনিধি

আগস্ট ১৮, ২০২২, ০৪:৪২ পিএম


‘আন্দোলনের সোনার হরিণ দেখা না দিলে ক্ষমতার ময়ূর সিংহাসন দেখা দেয় না’

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নাম মেনশন করে বিএনপির উদ্দেশ্য   বলেছেন, আন্দোলনের সোনার হরিণ দেখা না দিলে ক্ষমতার ময়ূর সিংহাসন দেখা দেয় না। রোজার ঈদের পর, কোরবানির ঈদের পর বিএনপির আন্দোলনের সোনার হরিণ দেখা যায় না। বাংলাদেশে আন্দোলনে বিজয় হলেই নির্বাচনে বিজয়ী হওয়া যায়।

বৃহস্পতিবার (১৮ আগস্ট) দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি মিলনায়তনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ কর্তৃক আয়োজিত "পিতার শোক, কন্যার শক্তি, বাংলার অপ্রতিরোধ্য অগ্রগতি" শীর্ষক এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।

আন্দোলন করে শেখ হাসিনা কে ক্ষমতা থেকে  নামানোর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, শেখ হাসিনাকে আল্লাহ তায়ালা ক্ষমতার জন্য‌ সৃষ্টি করেছেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সৃষ্টি করেছেন মুক্তির জন্য। আগামী নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নির্বাচনে বিশাল একটা মনোনয়ন বাণিজ্য আছে। নির্বাচনী মনোনয়ন বাণিজ্যের এই লোভ সামলাতে পারবেন না আপনারা।তাই আপনারা নির্বাচনে আসবেন। তখন কিন্তু নৌকায় করে ভোট চাইতে যাবেন। নৌকা তো আমাদের! বিএনপি কষ্টের দরিয়ায়‌ ভেসে যাচ্ছে। ‌কষ্ট করে শেখ হাসিনা উন্নয়ন করেছেন। সামনে কর্ণফুলী নদীর টানেল সহ মেগা প্রকল্পের উদ্বোধন দেখে বিএনপির নেতাকর্মীদের চোখের পানি এবং নাকের পানি একাকার হয়ে যাবে। তাদের মনের ভেতরে কষ্টের দরিয়া বহমান। তারা কথায় কথায় চলে যায় শ্রীলঙ্কায়। গত ৬ মাসে  বৈশ্বিক আর্থিক পরিস্থিতিতে সরকার কে মূল্য দিতে হচ্ছে। শেখ হাসিনা নিজেই বলেছেন মানুষ কষ্ট পাচ্ছেন। দেশের এই দুর্দিন চলে যাবে। সুদিন আসবে।

বেগম খালেদা জিয়ার জন্মদিন প্রসঙ্গে তিনি বলেন,"দুইদিন আগে দেখলাম ১৫ তারিখে কেক কাটা হলো না। পরদিন দোয়া মাহফিল করলো। দোয়া মাহফিলের উদ্দেশ্য বেগম খালেদা জিয়ার জন্মদিন। একটা মানুষের কয়টা জন্মদিন থাকে? করোনার সময় আমরা খালেদা জিয়ার ৬ষ্ঠ জন্মদিন পেলাম!

পঁচাত্তরের পনেরোই আগস্ট হত্যাকাণ্ড প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেছেন, একাত্তরের পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে পঁচাত্তরের হত্যাকাণ্ড।১৭৫৭ সালের ২৩ জুন পলাশী প্রান্তরে নিশ্চিত বিজয় মীর জাফর আলী খান, রায় দুর্লভের ষড়যন্ত্রের কারণে হাতছাড়া হয়ে যায়। পলাশী যুদ্ধের সাথে পঁচাত্তরের হত্যাকাণ্ড তুলনা করে দেখুন। মীর জাফরের জায়গায় খন্দকার মোশতাক। ১৯৭৪ সালের বন্যায় খাদ্য সংকট কারা তৈরি করেছিল ‌‌‌‌‌।শেখ মুজিবুর রহমানের অপরাধ কিউবার কাছে চটের বস্তা বিক্রি করেছিলেন। তাই খাদ্য সংকট সৃষ্টি করে দুর্ভিক্ষ তৈরি করেছিল ষড়যন্ত্রকারীরা।

জিয়াউর রহমান না থাকলে খুনিরা কখনো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার সাহস পেত না। খুনিদের বিচার বাধাগ্রস্ত করতে মোশতাক ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করেছিলেন। জিয়াউর রহমান তা আইনে পরিণত করলেন। পলাশীর যুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারীদের একজনেরও স্বাভাবিক মৃত্যু হয় নাই। তেমনি পঁচাত্তরের পনেরোই আগস্ট হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের স্বাভাবিক মৃত্যু হয় নাই। মাহাবুব আলম চাষী রাস্তায় মৃত্যু বরণ করেছেন। কয়েকজন খুনিদের ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। একজন খুনি কে আমেরিকা ফেরত দিচ্ছে না।

পঁচাত্তরের পনেরোই আগস্ট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ছাত্রলীগের এই অনুষ্ঠান এসে সেই স্মৃতি পট ভেসে উঠেছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৫ আগস্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার কথা ছিল। কথা ছিল ল্যাবরেটরী স্কুলের ছাত্র শেখ রাসেল আসবে। কিন্তু ১৫ আগস্ট শিশু রাসেল রক্তাক্ত হলো।আবু নাসের রক্তাক্ত হলো। রূপসী বাংলার প্রকৃতি সেদিন  রক্তাক্ত হয়েছিল। কতজন কে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর ফোন করেছে তা অজানা। নিরাপত্তা অফিসার কর্ণেল জামিল সেদিন ছুটে আসে।আর কেউ আসে নাই। কোন রাজনৈতিক দলের নেতারা সেদিন ছুটে আসে নাই। এই ব্যর্থতা আমাদের কে আজীবন বহন করতে হবে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঝাঁঝরা বুক সিঁড়িতে পড়ে ছিল। তাকে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় নিয়ে দাফন ছাড়াই কবর দিতে চেয়েছিল ঘাতকদের দল। স্থানীয় মুসল্লীরা আপত্তি করলে দাফন এবং কাফনের জন্য ১০ মিনিট সময় দেওয়া হয়েছিল। রিলিফের কাপড় এবং ৫৭০ সাবান দিয়ে দাফন করা হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর ঘাতক মেজর ডালিমকে জিয়াউর রহমান বলেছেন, ওয়েল ডান (ভালো করেছ you have done a great job. (তুমি উত্তম কাজ করেছ)।

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার পর বিদেশী গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধিরা আসতে চেয়েছিল। তাদের কে আসতে দেওয়া হলো না। সাদেক হোসেন খোকা দিয়ে ঘটনার সব আলামত মুছে দিলেন (২৩, বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে)। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাসের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনের সঞ্চালনায় আয়োজিত এই আলোচনা সভায় আলোচনা সভার প্রধান আলোচক হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক, গবেষক ও প্রাবন্ধিক অধ্যাপক ডঃ সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, অসমাপ্ত আত্মজীবনীর মতো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পুরো জীবনটাই অসমাপ্ত। জীবনে বেশীরভাগ সময় জেলে আটক ছিলেন। মাত্র সাড়ে তিন বছর ক্ষমতায় ছিলেন। বঙ্গবন্ধু মেধার কদর করতেন। গুণীজনদের কদর করতেন।

বাকশাল প্রতিষ্ঠা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাকশাল একটা বিপ্লব।বাকশাল চারভাগের একভাগ বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশ কোথায় যেত।

ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, তোমরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সৈনিক।
বই, খাতা এবং কলম নিয়ে তোমাদের কে ক্লাসে দেখতে চাই।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় বলেন, পাকিস্তানীরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করার সাহস করে নাই। কিন্তু ঘাতকদের দল তাকে হত্যা করেছে। খুনি জিয়া পাকিস্তানি গুপ্তচর হিসেবে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল তারেক রহমানের ইঙ্গিতে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা হাওয়া ভবনের সম্পৃক্ততায় হয়েছিল। শত শত নেতাকর্মী পঙ্গুত্ব বরণ করেছিল। ২৩ জন নিহত হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকারীদের  আইনী প্রক্রিয়ায় বিচার করে ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর আদর্শের বাংলাদেশ গড়ার জন্য শেখ হাসিনা কাজ করে যাচ্ছে। স্বপ্নের পদ্মা সেতু এখন বাস্তব।

বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য বলেন, সাড়ে তিন বছরের মাথায় তাকে হত্যা করা হয়। ইতিহাস থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কে মুছে ফেলতে পারবেন না। ১৫ আগস্টের পর অল্পদিনের মধ্যেই একটা কলমের খোঁচায় রাজাকার ও আলবদর বাহিনীর সদস্যদের কে জেলখানা মুক্তি দেওয়া হয়েছিল। কর্ণেল তাহের কে দিয়ে ৭ নভেম্বর ক্যু করে কর্ণেল তাহের কে ফাঁসি দিয়ে নিজের ক্ষমতা পাকাপোক্ত করেছিল জিয়া। তিনি পাকিস্তানী ভাবধারায় নিয়ে গিয়েছিল দেশকে।

সভাপতির বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস বলেন, একটি মহল বাকশাল কে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করা অপচেষ্টা করে থাকে। বঙ্গমাতা বেগম শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব জেলখানায় নিয়মিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে দেখা করতেন। পাকিস্তানী গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধিদের চোখ ফাঁকি দিয়ে ম্যাসেজ গুলো আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের কাছে পৌঁছে দিতেন। বঙ্গবন্ধু পরিবারের আত্মত্যাগ ও আত্ম বিসর্জন কে আমরা শ্রদ্ধা ভরে স্মরণ করছি। এখন বাংলাদেশের কোন মানুষ না খেয়ে মারা যায় না। বিএনপির নেতাকর্মীরা বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে মনে করে না।তারা পাকিস্তানের নাগরিক হিসেবে মনে করে।

বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন কে "টিকটক বাচ্চা" হিসেবে আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, ইশরাক নাকি ছাত্রলীগ কে গোণায় ধরে না। আরে ব্যাটা, "ছাত্রলীগ কি জিনিস তোর বাপ সাদেক হোসেন খোকা জানে"। আগস্ট মাসের শোক কে শক্তিতে পরিণত করে আমাদের কে এগিয়ে যেতে হবে।

সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের শ্লোগানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বেঁচে আছেন। কৃষক শ্রমিক জনতার হৃদয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বেঁচে আছেন। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ৪৭ বছর ধরে চোখের পানি ফেলছেন। শেখ হাসিনার চোখের জলের জবাব বাংলার ছাত্রসমাজ দিবে।

কেএস 

Link copied!