Amar Sangbad
ঢাকা সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪,

বিশুদ্ধ পানির অভাবে সীমাহীন কষ্টে ঢাকা আলিয়ায় শিক্ষার্থীরা

মো. মাসুম বিল্লাহ

সেপ্টেম্বর ৬, ২০২২, ০৫:০০ পিএম


বিশুদ্ধ পানির অভাবে সীমাহীন কষ্টে ঢাকা আলিয়ায় শিক্ষার্থীরা

পুরান ঢাকার বকশীবাজার অবস্থিত বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সরকারি মাদ্রাসা-ই-আলিয়া। এই ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আল্লামা কাশগরী ও শহীদ ইব্রাহিম নামে দুটি হল রয়েছে।এ দুই হলে প্রায় ৭০০ ছাত্র অবস্থান করে। কিন্তু এই হলগুলোর একটিতেও নেই সুপেয় পানির কোন ব্যবস্থা। ওয়াসা থেকে পানির ব্যবস্থা থাকলেও অধিকাংশ সময় হল গুলোতে পানি থাকে না।

বিশুদ্ধ খাবার পানি না থাকায় সীমাহীন কষ্টে দিন পার করছে আলিয়া মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা। ক্যাম্পাস ও আবাসিক হলে নিজস্ব পানির পাম্প বা নলকূপ না থাকায় খাবার পানির চরম সংকটে পড়েছেন তারা। একমাত্র ভরসা ওয়াসার সরবরাহ করা পানিতেও মিলছে না স্বস্তি। অধিকাংশ সময়ই পানি থাকে না।অন্যদিকে লাইনের পানি আসলেও পানিতে ময়লা, পুরনো লোহার পাইপের মরিচার গুঁড়ার উপস্থিতি পাওয়া যায়। এতে করে শিক্ষার্থীদের  ভোগান্তি বেড়েছে দ্বিগুণ।

সরেজমিনে দেখা যায়, আলিয়া মাদ্রাসার দুটি হলে কোনোটিতেই নেই নিজস্ব কোনো পাম্প বা নলকূপ। একই সঙ্গে রিজার্ভ ট্যাংকির পানি সরবরাহের পাইপের অধিকাংশই ভাঙা। আর রিজার্ভ টাংকির ঢাকনাও দেওয়া হয়েছে টিন এবং পলিথিন  দিয়ে। এসব টাংকির পানি কোনো ধরনের ফিল্টার বা বিশুদ্ধকরণ ছাড়াই পুরো হলজুড়ে সরবরাহ হচ্ছে । শুধু আল্লামা কাশগরী হলের ডাইনিংয়ে একটি মাত্র বিশুদ্ধকরণ ফিল্টার রয়েছে। তাও শিক্ষার্থীদের চাহিদার তুলনায় এর কার্যক্ষমতা অনেক কম।তাই অধিকাংশ সময়ই এক গ্লাসের বেশি পানি পাওয়া যায় না।

শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে বলেন, আবাসিক শিক্ষার্থীদের জন্য মাদ্রাসা ও হল প্রশাসনের কোনো উন্নয়নমূলক কার্যক্রম নেই। হলগুলোর রিজার্ভ ট্যাংকি দীর্ঘদিনেও পরিষ্কার করা হয় না। সেখানে কয়েক স্তরের ময়লা জমেছে। আর এ নোংরা ও ময়লা মিশ্রিত পানিতেই চলছে হলের ডাইনিংয়ে রান্নার কাজ। সাধারণ শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন এসব খাবার খেয়ে অসুস্থ হচ্ছেন। অনেকে নিজেদের খরচে বাইরে থেকে পানি কিনে পান করলেও অসচ্ছল শিক্ষার্থীরা নিরুপায় হয়ে এ ময়লা পানিই পান করছেন। ফলে সম্প্রতি পানিবাহিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্তের হারও অনেকটাই বেড়েছে। শিক্ষার্থীদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হল প্রশাসন বেশ কিছু পানি বিশুদ্ধকরণ ফিল্টার স্থাপন করলেও বর্তমানে তার সবগুলোই অকেজো এবং নষ্ট হয়ে আছে। এ বিষয়টি বারবার সংশ্লিষ্ট হল প্রভোস্টকে জানানোর পরও কোন প্রতিকার পাওয়া যায়নি।

রাকিব নামে ফাজিল ৩য় বর্ষের এক আবাসিক শিক্ষার্থী জানায়, অধিকাংশ সময়ই পানি পাওয়া যায় না। অনেক সময় সারাদিনও হলে পানি থাকে না। গোসল করার সময় পানিতে দুর্গন্ধ ও বালি পাওয়া যায়। মাঝে মধ্যে কালো পানিও আসে। আশেপাশে গোসলের কোন ব্যবস্থা না থাকায় আমরা বাধ্য হয়েই ময়লা পানি দিয়ে গোসল করি। ফলে চুলকানিসহ চর্মরোগে আক্রান্ত হতে হচ্ছে।

সাকিব নামে অনার্স প্রথম বর্ষের আর এক শিক্ষার্থী বলেন, পানির অভাবে আমাদের অবস্থা খুবই নাজুক।ওয়াশরুমে গেলে অনেক সময় পানি থাকে না।এর কারনে আমাদের হলের বাহিরে গিয়ে ওয়াশরুম ব্যবহার করতে হয়।এটা আমাদের জন্য খুব কষ্টকর বিষয়। আমরা এর প্রতিকার চাই। তাড়াতাড়ি যাতে আমাদের হলে সাবমারসিবল পাম্প স্থাপন করা হয় এটাই আমাদের দাবি।

মাদ্রাসার কামিলের শিক্ষার্থী জুনায়েদ বলেন, আমরা হলে পানির কষ্টে খুব অসহায় জীবন যাপন করছি।কর্তৃপক্ষকে বারবার বলার পরও তারা কোনো সমাধান করেনি। যেন দেখ আমাদের দেখার কেউই নেই। আমরা তাড়াতাড়ি আমাদের এ সমস্যার সমাধান চাই। মাদ্রাসা প্রশাসন তাড়াতাড়ি যেন আমাদের পানির সমস্যা দূরীকরণে ব্যবস্থা গ্রহণ করে এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

এমন অবস্থায় দ্রুত পানির সংকট নিরসন এবং আবাসিক হলগুলোতে বিশুদ্ধ খাবার পানি ও সাবমারসিবল পাম্প স্থাপনের দাবী জানিয়ে সোমবার (৫ সেপ্টেম্বর) মাদ্রাসার অধ্যক্ষ বরাবর একটি আবেদন করেছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

পানি সমস্যা নিয়ে আল্লামা কাশগরি হলের প্রভোস্ট জাহাঙ্গীর আলম খান বলেন, ছাত্ররা পানির সমস্যা নিয়ে আমার কাছে এসেছে। আমি বিষয়টি নিয়ে অধ্যক্ষ স্যারের সাথে কথা বলেছি। খুব তাড়াতাড়ি পানির সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করবো এবং ফিল্টার গুলো ঠিক করবো।

এ বিষয়ে সরকারি মাদ্রাসা-ই-আলিয়ার অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) মাওলানা প্রফেসর  আবদুর রশীদ বলেন, পানি সমস্যার বিষয়টি আমি অবগত রয়েছি। যতটুকু জানি এটি অনেক দিনের সমস্যা। ছাত্ররাও আমাকে বিষয়টি জানিয়েছে এবং তারা একটা দরখাস্ত দিয়েছে। আমি দায়িত্ব নিয়েছি অল্প কিছুদিন হলো, তারপরও অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে বিষয়টি সমাধানের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করব।

এবি

Link copied!