Amar Sangbad
ঢাকা সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪,

মাইক্রোসফটে চাকরি পেলেন খুবি সাবেক শিক্ষার্থী খালেদ সাইফুল্লাহ

খুবি প্রতিনিধি

খুবি প্রতিনিধি

অক্টোবর ১৯, ২০২২, ১২:২৩ পিএম


মাইক্রোসফটে চাকরি পেলেন খুবি সাবেক শিক্ষার্থী খালেদ সাইফুল্লাহ

বিশ্বের অন্যতম টেক জায়ান্ট প্রতিষ্ঠান মাইক্রোসফটে চাকরি পেয়েছেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী খালেদ সাইফুল্লাহ। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ডিসিপ্লিনের ১১ ব্যাচের শিক্ষার্থী।

বিষয়টা নিশ্চিত করেছেন মাইক্রোসফটে চাকরি পাওয়া সিএম খালেদ সাইফুল্লাহ নিজেই। তিনি ২০১৫ সালে অনার্স শেষ করে কানাডায় মাস্টার্স করেন। এরপর একটা ইউনিভার্সিটি এবং থ্রিএমে জব করার পর ১৭ অক্টোবরে টেক জায়ান্ট প্রতিষ্ঠান মাইক্রোসফটে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং হিসেবে যোগ দান করেছেন।

তার সাফল্যের জন্য ব্যাচমেটদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন। তার কাছে ৫২ জনের ১১ ব্যাচ একটা উইনিক ব্যাচ, যারা একসাথে ৪বছর নিজেদের ভিতরে সহযোগিতা মূলক প্রতিযোগিতা, আন্তর্জাতিক প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ,নতুন কিছু উদ্ভাবন এবং সব সময় চ্যালেঞ্জিং কিছু করার চেষ্টা করেছে।

তবে তিনি বিশেষ করে ধন্যবাদ জানিয়েছেন তাদের সম্মানিত জাহিদ স্যারকে, যিনি প্রতি বৃহস্পতিবার রাতে প্রোগ্রামিং অনুশীলন করাতেন।

মাইক্রোসফটের মতো টেক জায়ান্ট প্রতিষ্ঠানে চাকরি পাওয়ার পর তিনি বলেন, তিনি কখনো ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট ছিলেন না। ক্লাসে ফার্স্ট হওয়া, বৃত্তি পাওয়া বা বড়ো কোনো ধরনের সাফল্য তার নেয়। অনার্সের সিজিপিএ ও খুব ভালো ছিলো না। নিজেকে ব্যাকবেঞ্চার হিসেবে তুলে ধরেছেন তিনি।

তবে সিজিপিএ ভালো না থাকলেও তিনি সবসময় চেষ্টা করতেন নতুন কিছু করার সেটা অবশ্য কম্পিউটার নিয়ে। তবে তাকে সব থেকে সাহায্য করেছে লিডারশীপ কোয়ালিটি এবং মানুষকে বুঝতে পারার ক্ষমতা।

তিনি CLUSTER এর জেনারেল সেক্রেটারি ছিলেন। CLUSTER হলো একটি কম্পিউটার ক্লাব, যারা ২০১৫ সালে খুবিতে প্রথম CSE FEST আয়োজন করে। তারই ধারাবাহিকতায় এ বছর CSE FEST-22 অনুষ্ঠিত হয়েছে। এছাড়া তিনি ২০১৫ সালের র‍্যাগের দায়িত্বে ছিলেন।

এছাড়াও তিনি ছোটখাটো অনুষ্ঠান ডিসিপ্লিনের বিভিন্ন অনুষ্ঠান এবং নিজের ব্যাচের বিভিন্ন দায়িত্ব সামলাতেন, যা তাকে মানুষকে জানতে সাহায্য করেছে।

তিনি বলেন, আমি সুযোগ পেলেই মানুষের সাথে কাজ করেছি। এগুলো আমাকে ইন্টারভিউতে অনেক কাজে দিয়েছে। তিনি মনে করেন একজন স্টুডেন্ট হিসাবে অনেক একটিভ হতে হবে ইনসাইড আউটসাইড স্টাডি ছাড়াও এক্সট্রা কারিকুলাম তৈরি করতে হবে।

তিনি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগঠন নৈয়ায়িক এর সদস্য ছিলেন এবং বাঁধনের সাথে কাজ করেছেন। তিনি মনে করেন নিজেকে প্রেজেন্ট করাটাই সবকিছু। নিজেকে প্রেজেন্ট না করতে পারলে কোনো চাকরি পাওয়া সম্ভব না।

তিনি তার মাইক্রোসফটে চাকরি পাওয়ার জার্নি টা সবার সাথে শেয়ার করেছেন। তিনি বলেছেন, মাইক্রোসফটে আবেদন করার পরে সোসিয়াল প্ল্যাটফর্ম LINKDIN থেকে একজন microsoft-এর রিক্রুটার আমাকে আমাকে নক দেয়।

এরপর শুরু হয় ইন্টারভিউ প্রসেস। এটা মে মাস থেকে শুরু হয়। আর এটাই হলো প্রথম স্টেজ। রিক্রুটার আমাকে কল দেন এবং ইন্টারভিউ নেন তারপর দ্বিতীয় স্টেজে আমাকে অনলাইন অ্যাসেসমেন্ট দেয় যেটাতে একটা লিঙ্ক দেওয়া ছিলো, যাতে ক্লিক করলে দেখা যায় ৩টি প্রোগ্রামিং প্রবলেম দেড় ঘণ্টায় সমাধান করতে হবে। তবে এটা ৭ দিনের ভিতর যে কোনোসময় করা যাবে। এটা সমাধান করি তারপর শুরু হয় অন সাইট।

এটা তৃতীয় স্টেজ। অন সাইট বলতে সকাল ৯ টা থেকে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত ইন্টারভিউ হয়। তবে কোভিডের কারণে এটা বন্ধ হয়ে যায় এবং সবকিছু ভার্চুয়াল হয়ে যায়। তখন আমাকে ভার্চুয়ালি পর পর চারটা ইন্টারভিউ দিতে হয়। যেমন সকাল ৯ টা থেকে শুরু হয়ে ৯ঃ৪৫ পর্যন্ত তারপর ১৫ মিনিট ব্রেক তারপর আবার দশটা থেকে শুরু এভাবে পরপর চারটা ইন্টারভিউ চারজন আলাদা ব্যক্তি নেন।

এতে মার্ক -২ থেকে +২। কোন একজন যদি নেগেটিভ মার্ক দেয় তবে আর চাকরি হবে না। আর শূর্ন দিলে আরেকটা ইন্টারভিউ দিতে হয়। আর সবগুলো পজেটিভ হলে সামনে আগানো যায়। আলহামদুলিল্লাহ এক সপ্তাহ পরে আমাকে জানানো হয় আমার সবগুলো ইন্টারভিউ পজেটিভ। তারপর আমাকে জানানো হয়  Microsoft Azure HPC Team আমাকে সিলেক্ট করেছে। HPC মানে  high-Performance Computer.

তারপরে ওই টিমের ম্যানেজার আমার সাথে কানেক্ট করে কিন্তু করোনার জন্য ওই পোস্ট টা বন্ধ হয়ে যায়।তারপর আমাকে পাঠানো হয় Team Matching Poll এ। এটা মাইক্রোসফটে নতুন। এরপর আমি সেখানে অবস্থান করি। বিভিন্ন ম্যানেজার যাদের সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার লাগবে তারা ওই পোল থেকে যে ক্যান্ডিডেট পায় তাকে নক করে। আমার ৩ জন ম্যানেজারের সাথে কথা হয়।

প্রথম ম্যানেজারের সাথে কথা বলার পর তার পোস্ট টাও বন্ধ হয়ে যায়। তারপর আমি দ্বিতীয় ম্যানেজারের সাথে কথা বলি কিন্তু তিনি আমার থেকে সিনিয়ার কাউকে চাই। এরপর আমি তৃতীয় ম্যানেজারের সাথে কথা বলি এবং তিনি আমাকে পছন্দ করেন। তারপর প্রসেস শুরু হয়।তিনি আমাকে হায়ার করেন এবং স্যালারিও ঠিক হয়।

তারপর আমাকে রিটার্ন অফার দেওয়া হয় এবং আমি তাদের সাইন করার পরে আমার ব্যাকগ্রাউন্ড চেক করা হয়।তারপর স্টার্টিং নিয়ে কথা বলি জুলাই এর  শেষে তাদের থেকে অফার পায় এবং সেপ্টেম্বরের ১০ তারিখে ফিক্সট করি অক্টোবর ১৭ তারিখে যোগদান করবো। আলহামদুলিল্লাহ অবশেষে মাইক্রোসফটে আমার প্রথম দিন অতিবাহিত হল।

যারা মাইক্রোসফট বা বড়ো বড়ো  টেক জায়ান্ট কোম্পানিতে কাজ করতে চায় তাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ইচ্ছাশক্তি টাই সবকিছু। কে কোন ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে আসছে সেটা বড় কথা নয়। একটা প্রতিষ্ঠানে হাজার রকমের পদ থেকে। ব্যাকগ্রাউন্ড যে কোনো কিছুই হলেই হবে।এছাড়া ফরলাম এডুকেশন ও খুব বেশি জরুরি নয়। ফরমাল এডুকেশন  ছাড়া টেক জায়ান্ট কোম্পানি গুলোতে অনেকেই চাকরি করছে।

মাইক্রোসফটে চাকরি পেতে হলে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়েই পড়তে হবে এটা এমনটা নয়। সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং ছাড়াও হাজার পদের চাকরি আছে মাইক্রোসফটে।

তিনি বলেছেন, আমি যদি এই লেভেল থেকে মাইক্রোসফটে যেতে পারি তবে আমি মনে করি আমার মতো যে কারোরই ক্ষমতা আছে মাইক্রোসফট কেন অন্যান্য বড় প্রতিষ্ঠান যেমন গুগল-ফেসবুক অ্যামাজনে চাকরি পাওয়ার। এর জন্য তিনি দুইটা পরামর্শ দিয়েছেন।

প্রথমে স্বপ্ন  দেখতে হবে। দ্বিতীয়ত প্রত্যেকদিন নিজেকে অল্প অল্প করে পরিবর্তন করতে হবে।

তিনি আরো বলেছেন, আপনারা যারাই কিছু করতে চাচ্ছেন না বা মনে হয় দুনিয়া অন্ধকার হয়ে গেছে তাদের জন্য যদি আমি ইন্সপায়ার হতে পারি তাহলে এটাই আমার সফলতা।

এআই

Link copied!