আহমেদ ইউসুফ
নভেম্বর ৬, ২০২২, ১০:৫৯ এএম
আহমেদ ইউসুফ
নভেম্বর ৬, ২০২২, ১০:৫৯ এএম
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমি অধিগ্রহণ এলাকায় প্রভাব বিস্তার করে জমি দখল এবং নিজের স্ত্রীকে শিক্ষক বানাতে উপাচার্যকে চাপ প্রয়োগের অভিযোগ উঠেছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি) শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ইলিয়াস হোসেন সবুজের বিরুদ্ধে।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, অধিগ্রহণ এলাকার ৫৭৯১, ৯২ এবং ৯৩ নং দাগে সর্বমোট ৩৮১ শতাংশ জায়গার বিপরীতে ৬ কোটি ৯৮ লাখ ৭২ হাজার ১০৬ টাকা ক্ষতিপূরণের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা বরাবর আবেদন করেন ইলিয়াস হোসেন সবুজ এবং এইচ এম আল আমিন। তবে উল্লেখিত তিনটি দাগে জমির মালিক কবির হোসেনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় এই দাগে ইলিয়াস হোসেন সবুজ কিংবা এইচ এম আল আমিনের কোনো জমি নেই। তারা জোরপূর্বক নাম অন্তর্ভুক্ত করেছেন।
কবির হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এই জমিগুলো গত ৭০ বছরের বেশি সময় আমার পূর্বপুরষ এবং আমি ভোগদখল করে এসেছি। ২০১৯ সালে যখন ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা এখানে প্রকৃত মালিকদের তথ্য সংগ্রহ করতে এসেছিলেন, তখন ইলিয়াস এবং তার কর্মীরা প্রভাব খাটিয়ে তাদের নাম নথিতে অন্তর্ভুক্ত করেন। এখানে তার কোনো জমি নেই। পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিগ্রহণের সময় ইলিয়াস প্রভাব বিস্তার করে জমির গাছ এবং বাঁশ কেটে নিয়ে যায়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কুমিল্লা জেলা ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের একজন মাঠ কর্মকর্তা জানান, নাম অন্তর্ভুক্তির সময় যিনি কর্মরত ছিলেন তিনি এখন বদলি হয়েছেন। তবে ডিসি অফিস থেকে এখন পর্যন্ত ৯ একরের কিছু বেশি জমির ক্ষতিপূরণের অর্থ হস্তান্তর করা হয়েছে। এখানে হতে পারে ইলিয়াস জোরপূর্বক নাম অন্তর্ভুক্ত করেছেন।
ভূমি অধিগ্রহণের নথি থেকে জানা জায়, ৫৭৮৫ থেকে ৯৬ পর্যন্ত এবং ৬১১৫, ১৭, ১৮ নম্বরসহ বেশ কয়েকটি দাগে দখলদার হিসেবে ইলিয়াস হোসেন সবুজের নাম রয়েছে।
জমির মালিক এবং স্থানীয়দের সাখে কথা বলে জানা যায়, এসকল দাগে ইলিয়াস হোসেন সবুজের কোন জমি নেই। তবে অধিগ্রহণ এলাকার পার্শ্ববর্তী কয়েকটি দাগে তিনি জমি ক্রয়ের কথা বললেও সেগুলোর মালিকদের এখনও কোন অর্থ পরিশোধ করেননি।
দাগগুলোর আরেকজন জমির মালিক বুলু মিয়ার ছেলে কামাল উদ্দিন জানান, আমরা বাপ-দাদার আমল থেকে এ জমির মালিক। আমাদের কাছে আর এস, বিএস সকল নথিপত্র আছে। ইলিয়াসের কোথাও কোন জায়গা নাই। সে জোরপূর্বক নথিতে নাম অন্তর্ভুক্ত করে এখন আমাদের বিভিন্নভাবে হয়রানি করছে। তারসাথে আমাদের এলাকার কিছু মানুষ জড়িত। আমরা এর থেকে নিস্তার চাই।
এদিকে এইচ এম আল-আমীনেরের নাম অন্তর্ভুক্তির কারণ অনুসন্ধানে দেখা যায়, তিনি বর্তমান আওয়ামী যুবলীগের কেন্দ্রীয় সদস্য এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। যার সাথে পূর্ব থেকে ইলিয়াসের সখ্যতা রয়েছে। প্রভাব বিস্তার এবং অর্থের অংশ প্রদানের চুক্তিতে এইচ এম আল-আমীনেরের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। যে অর্থের নির্দিষ্ট অংশ কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের একাধিক নেতারা প্রাপ্ত হবেন।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রয়ি সভাপতি আল-নাহিয়ান খান জয়ের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি কল রিসিভ করেননি।
কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের কর্মসূচি ও পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন বলেন, কোন ব্যক্তি যদি ছাত্রলীগের নাম ব্যবহার করে অনিয়ম দুর্নীতির সাথে যুক্ত হয়, সেক্ষেত্রে তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ শক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করবে৷ তবে অর্থ গ্রহণে চুক্তির বিষয়ে আমি কিছু জানি না। এবিষয়ে আমার কোন মন্তব্য নাই।
জমি জোর দখলের বিষয়ে কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান জানান, ভূমি অধিগ্রহণ এলাকায় জমির প্রকৃত মালিকেরাই ক্ষতিপূরণ পাবে। এক্ষেত্রে দুর্নীতি কিংবা অনিয়মের কোন সুযোগ নেই। তাছাড়া ডিসি অফিস সুষ্ঠু যাচাই-বাছাই করেই অর্থ হস্তান্তর করবে।
এদিকে ইলিয়াস হোসেন সবুজের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, তিনি ছাত্রলীগের সভাপতির পদ ব্যবহার করে তার স্ত্রী এবং বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক আইভি রহমানকে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের প্রভাষক হিসেবে নিয়োগ দিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ. এম. আব্দুল মঈনকে বিভিন্ন সময় চাপ প্রয়োগ করেন। গত ২১ জুন, ১৯ জুলাইসহ বিভিন্ন সময়ে শিক্ষার্থীদের ব্যনারে অনুসারীদেও দিয়ে উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য আন্দোলনও করেন৷
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন শিক্ষক জানান, ইলিয়াসের বর্তমান স্ত্রী শিক্ষার্থী থাকাকালীন পরীক্ষায় বেশি নম্বর পাইয়ে দিতে তখন তিনি বিভিন্ন শিক্ষকদের হুমকি দিতেন। এতে শিক্ষকেরা ভয়ে নাম্বার দিতে বাধ্য হতেন। আবার এখন তাকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পাইয়ে দিতে বিভিন্নভাবে চাপ প্রয়োগ করছেন। একজন শিক্ষক হিসেবে এইরকম ঘটনা লজ্জার।
এসব বিষয়ে কথা বলতে চাইলে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ইলিয়াস হোসেন সবুজ জানান, জমির মালিক আমি বা এইচএম আল আমিন কেউই না। জমির প্রকৃত মালিকরা গরীব। তাদের অর্থ গ্রহণে সহায়তা করতেই আমরা নিজেদের নাম অন্তর্ভুক্ত করেছি। আজ হোক বা কাল হোক, জমির টাকা প্রকৃত মালিকরাই পাবে। আর তারা টাকা পেলে আমাদেরও কিছু টাকা দিবে। এরচেয়ে বেশি কিছু না।
তিনি আরও জানান, আপনারা যেই তথ্যের ভিত্তিতে এসকল অভিযোগ করছেন সেখানে বর্তমান শাখা ছাত্রলীগের সেক্রেটারি রেজাউল ইসলাম মাজেদ এবং সাবেক ছাত্রলীগের নেতা রেজা ইলাহীর নামও আছে। এছাড়াও সদর দক্ষিণ উপজেলার আওয়ামী লীগ, যুবলীগের বিভিন্ন স্তরের নেতারাসহ আরও ১৭ থেকে ১৮ জন ব্যক্তির নাম আছে। এইচ আম আল আমিনের সাথে আমার ব্যক্তিগত সম্পর্কের কারণে উনার নাম দিয়েছি। এটা আরো তিন বছর আগের ঘটনা। এখানে অন্য কোন উদ্দেশ্য নেই।
নিজের স্ত্রীকে নিয়োগের বিষয়ে তিনি বলেন, কারা এই ধরণের অভিযোগ করে আমার জানা নেই। উপাচার্যের সাথে চাকরির বিষয়ে কোন ধরণের কথা হয়নি। আর শিক্ষকদের হুমকি দেওয়া দূরে থাক, উল্টো ওর নম্বর আরো কমিয়ে দিয়েছে।
এসব বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ. এম আব্দুল মঈন জানান, ইলিয়াস আমাকে ইতোপূর্বে বিভিন্নভাবে বল প্রয়োগের চেষ্টা করেছেন। আমি প্রশাসনিক কাজে অনিয়ম কিংবা বিশৃঙ্খলা তৈরী হবে এমন সকল বিষয় কঠোরভাবে প্রতিহত করেছি।
এআই