আজিম সাগর, চবি প্রতিনিধি
ডিসেম্বর ২১, ২০২২, ০৬:৫১ পিএম
আজিম সাগর, চবি প্রতিনিধি
ডিসেম্বর ২১, ২০২২, ০৬:৫১ পিএম
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) আইন ১৯৭৩ অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাহী পর্ষদ হিসেবে কাজ করে বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট। সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড, বিষয়াদি ও সম্পত্তির সাধারণ ব্যবস্থাপনা ও তদারকির দায়িত্ব সিন্ডিকেটের। চবির যাবতীয় গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত সিন্ডিকেট সভায় অনুমোদনের মাধ্যমে কার্যকর হয়। কিন্তু, চবি সিন্ডিকেটের ১৭ পদের আট পদই শূন্য। নেই কোনো শিক্ষক প্রতিনিধি। দীর্ঘদিন যাবত করা হয় না নির্বাচন।
শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচন না হওয়ায় ডিন, প্রভোস্ট, অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক, সহকারী অধ্যাপক এবং প্রভাষকসহ ছয়টি পদই শূন্য। এছাড়া সিন্ডিকেটে নেই সিনেট মনোনীত বিশিষ্ট নাগরিক ও শিক্ষাবিদ।
ফলে দেখা যায়, শুধু উপাচার্য ও উপ-উপাচার্য, রাষ্ট্রপতি ও সরকার মনোনীত চার সদস্য, সিনেট থেকে একজন সদস্য, একাডেমিক কাউন্সিলের একজন সদস্য ও রেজিস্ট্রারকে নিয়েই সিন্ডিকেট সভাগুলো হচ্ছে।
এবিষয়টিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের শাসনের পরিপন্থী বলে মনে করছেন বিশিষ্ট শিক্ষকবৃন্দ। সিন্ডিকেটের মতো এতো গুরুত্বপূর্ণ পর্ষদে নির্বাচিত শিক্ষক প্রতিনিধি না থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকের স্বার্থ, সুশাসন ও আইনের শাসনের জন্য হুমকি।
বিশ্ববিদ্যালয় আইন মোতাবেক সিন্ডিকেটে পদাধিকার বলে সভাপতিত্ব করেন উপাচার্য। সদস্য সচিব হিসেবে রেজিস্ট্রার। সদস্য হিসেবে থাকেন উপ-উপাচার্য। সিন্ডিকেটে ডিন, প্রভোস্ট, অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক, সহকারী অধ্যাপক, প্রভাষক– এই ছয়টি ক্যাটাগরিতে ছয়জন শিক্ষক প্রতিনিধি থাকেন, যারা শিক্ষকদের ভোটে নির্বাচিত হন। একাডেমিক কাউন্সিল থেকে মনোনীত একজন শিক্ষক সদস্য হিসেবে থাকেন। তাছাড়া রাষ্ট্রপতি মনোনীত তিনজন সদস্য এবং সরকার মনোনীত একজন সদস্য থাকেন। এর বাইরে সিনেট মনোনীত একজন রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট ও একজন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ এবং একজন বিশিষ্ট নাগরিক সিন্ডিকেট সদস্য হয়ে থাকেন।
সিন্ডিকেট সদস্যরা দুই বছরের জন্য মনোনীত ও নির্বাচিত হন। তবে পরবর্তী নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত তারা বহাল থাকেন।
সিন্ডিকেট নির্বাচন না হওয়ার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ শিক্ষকদের অভিযোগ, সিন্ডিকেটে নিজেদের আধিপত্য ধরে রাখতে নির্বাচন দিচ্ছে না প্রশাসন। নির্বাচন দিলে নিজের পছন্দসই মানুষকে সিন্ডিকেটে বসানো যাবে না। তাই দীর্ঘদিন ধরে সিন্ডিকেট নির্বাচন দেয়া হচ্ছে না।
১০ বছর ধরে সিন্ডিকেটে ডিনদের প্রতিনিধি নির্বাচন হয় না। ২০১২ সালে সর্বশেষ ডিন ক্যাটাগরিতে সিন্ডিকেট সদস্য নির্বাচিত করা হয়। এবছরের ১২ই অক্টোবর সিন্ডিকেট এর শিক্ষক প্রতিনিধি ক্যাটাগরীতে ডিনদের প্রতিনিধি নির্বাচন চেয়ে উপাচার্য বরাবর চিঠি দেয় সকল অনুষদের ডিন।
তাছাড়া সিন্ডিকেট এর শিক্ষক প্রতিনিধির চারটি পদ অধ্যাপক, সহকারী অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক ও প্রভাষক ক্যাটাগরিতে সর্বশেষ ভোট হয়েছিল ২০১৭ সালের ৩ ডিসেম্বর। গত ১৬ই নভেম্বর সিন্ডিকেটে শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার দাবি জানিয়ে উপাচার্য বরাবর চিঠি দেয় বিশ্ববিদ্যালয়ে আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন হলুদ দল। এরপর শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচনের জন্য উপাচার্য বরাবর চিঠি দেয় চবি শিক্ষক সমিতি।
সিন্ডিকেট নির্বাচন নিয়ে ব্যবসায় অনুষদের ডিন হেলাল উদ্দিন নিজামী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন, ছাত্র-শিক্ষকের স্বার্থ প্রতিষ্ঠা করতে উদ্যোগী হবে। প্রশাসন সিন্ডিকেটে শিক্ষক প্রতিনিধিদের পদশূন্য রেখে একপেশে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করছে। বিভিন্ন নিয়োগ নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ বারবার প্রকাশিত হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে সুস্পষ্টভাবে সকল মতের ভিত্তিতে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির মধ্য দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শাসন কাঠামো পরিচালিত হবে। কিন্তু সরকার কর্তৃক মনোনীত সদস্যদের দিয়ে সিন্ডিকেট পরিচালিত হচ্ছে, নেই কোনো শিক্ষক নির্বাচিত প্রতিনিধি। এটি সুশাসনের অন্তরায়, এটি আইনের শাসনের অন্তরায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে এটি কোনো ভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
এসব বিষয়ে চবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীন আখতার বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে পদ শূন্য রয়েছে। আমাদের প্রশাসন শূন্য পদগুলোর নির্বাচন নিয়ে কাজ করছে।
এসএম