Amar Sangbad
ঢাকা রবিবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪,

সাফল্যের পঞ্চাশে মেতেছে চবি ম্যানেজমেন্ট বিভাগ 

চবি প্রতিনিধি 

চবি প্রতিনিধি 

ফেব্রুয়ারি ৪, ২০২৩, ০৫:০৬ পিএম


সাফল্যের পঞ্চাশে মেতেছে চবি ম্যানেজমেন্ট বিভাগ 

শীতের শেষে বসন্তের পূর্বাভাস। শাটল ট্রেনের ঝকঝকা ঝক শব্দে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি)  সকালের সূচনা। রঙিন সাজে সজ্জিত ক্যাম্পাসের ব্যবসায় অনুষদ প্রাঙ্গণ। সাজ সাজ রবে উৎসবমুখর পরিবেশে এক মহামিলনমেলা।  

শনিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে চবির ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সুবর্ণজয়ন্তী উৎসব উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এমন পরিবেশ দেখা যায়। নবীন-প্রবীণের পদচারণায় মুখরিত হয় চবি ম্যানেজমেন্ট বিভাগ তথা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস।

"সাফল্যের উচ্ছাসে ম্যানেজমেন্ট পঞ্চাশে" প্রতিপাদ্যকে ধারণ করে বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা ও বর্ণাঢ্য আয়োজনে ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ৫০ বছর পূর্তি ‘সুবর্ণজয়ন্তী’ উৎসব পালন করা হয়। দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যদিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও চট্টগ্রাম শহরে অনুষ্ঠিত হয় এই সুবর্ণজয়ন্তী উৎসব। 

এদিন সকাল ক্যাম্পাসের স্মরণ চত্বর থেকে বর্ণাঢ্য  শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে নবীন-প্রবীণদের এ মিলনমেলার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। এরপর বেলুন উড়িয়ে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন ঘোষণা করেন চবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীন আখতার।

ম্যানেজমেন্ট বিভাগের নবীন ও প্রবীণ শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে এই অনুষ্ঠান এক মহা মিলনমেলায় পরিণত হয়। হাসি, আনন্দ, গল্প, আড্ডায় সবাই ব্যস্ত। পুরনো বন্ধুদের সাথে দেখা হলেই অতীতের স্মৃতিকথা নিয়ে আলোচনা, কেউ কেউ পুরনো দিনের কথা মনে করিয়ে পরস্পরকে দিচ্ছেন খোঁচা, কেউবা তার প্রিয় বন্ধুকে পেয়ে আবেগ আপ্লূত হয়ে পড়েন। কয়েকজন একত্রিত হলেই ছবি তোলার তোড়জোড় শুরু হয়।     

ক্যাম্পাস জীবনের অতীত স্মৃতি মনে করে ২৪ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী অধ্যাপক ওসমান গনি বলেন, আমি একজন কলেজ অধ্যাপক। অনেক ব্যস্ততার মাঝে এখানে এসেছি। অনেক দিন পর পুরনো বন্ধুদের সাথে দেখা হয়েছে। বন্ধুদের পেয়ে খুবই ভালো লাগছে।

তিনি আরও বলেন, ক্যাম্পাসের পরিবেশ অনেকটা পরিবর্তিত হয়েছে। আমাদের সময়ে বর্তমান বিবিএ অনুষদ ছিলনা। ছিলনা কাটা পাহাড় রাস্তা। এসবগুলো দেখে আমি পুলকিত। 

বিভাগের ৪০ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী রেহানা আক্তার বলেন, আজকের অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করা যাবেনা।এক আনন্দঘন দিন এটা। পুরনো সব স্মৃতি হৃদয়ে নাড়া দিচ্ছে। 

৩৫ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আব্দুল হাকিম বলেন, পুরো ক্যাম্পাস আমি ঘুরে দেখলাম। খুব ভালো লাগলো। আমি একজন শিক্ষার্থী হিসেবে বারবার মনে পড়ছে ক্লাসের দিনগুলো, পুরনো দিনের স্মৃতি আর হাসি আনন্দে কাটানো সময়গুলো। 

সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন কমিটির আহবায়ক দ্যা পূর্বকোণ লিমিটেড এর চেয়ারম্যান জনাব জসিম উদ্দিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন  চবি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সভাপতি প্রফেসর আবু মুহাম্মদ আতিকুর রহমান। অনুষ্ঠান সঞ্চলনা করেন বিভাগটির অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হারিসুর রহমান হাওলাদার ও সহকারী অধ্যাপক জনাব সেতু রঞ্জন বিশ্বাস। 

সুবর্ণজয়ন্তী উৎসব উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন চবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীন আখতার, বিশেষ অতিথি উপ-উপাচার্য অধ্যাপক বেনু কুমার দে, ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ডিন অধ্যাপক হেলাল উদ্দিন নিজামী, সাবেক চবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. আনোয়ারুল আজিম আরিফ, বিজিসি ট্রাস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ও ম্যানেজমেন্ট বিভাগের প্রাক্তন সভাপতি আধ্যপক ড. এ এফ.এম. আওরঙ্গজেব, সাবেক ভিসি অধ্যাপক আবদুল মান্নান, অধ্যাপক ড. মোঃ ফসিউল আলম প্রমুখ। 

প্রধান অতিথি হিসেবে চবি উপাচার্য বলেন,চবি ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ম্যানেজমেন্ট বিভাগ অন্যতম একটি সমৃদ্ধ বিভাগ। এ বিভাগটি ৫০ বছর অতিক্রম করে আজ সুবর্ণজয়ন্তী উৎসব উদযাপন করছে। দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় এ বিভাগের শিক্ষকবৃন্দ জ্ঞান বিতরণের মাধ্যমে বিগত দিনে দেশে আলোকিত মানবসম্পদ উৎপাদনের পাশাপাশি উদ্যোক্তা সৃষ্টি এবং এক্সিকিউটিভ তৈরিতে অসামান্য ভূমিকা রেখে চলেছেন। বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এ বিভাগের শিক্ষার্থীরা মেধা, প্রজ্ঞা ও অভিজ্ঞতা দিয়ে অত্যন্ত সুনামের সাথে স্ব স্ব দায়িত্ব পালন করে দেশের সার্বিক উন্নয়নে কাজ করে চলেছেন। যা ম্যানেজমেন্ট বিভাগ তথা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য অত্যন্ত আনন্দের ও গৌরবের।

চবি উপাচার্য আরও বলেন, আধুনিক বিশ্বের সাথে সামঞ্জস্য রেখে কারিকুলাম উন্নয়ন, প্রশিক্ষণ কার্যক্রম এবং মৌলিক ও প্রায়োগিক গবেষণার মাধ্যমে এ বিভাগ প্রতিনিয়ত শিক্ষার উৎকর্ষ সাধনের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছে। এ ধারা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে বলে আমি মনে করি। আজকের এ মহামিলনমেলায় নবীন-প্রবীণের মাঝে যে সেতুবন্ধন তৈরি হয়েছে তা অভূতপূর্ব। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক উন্নয়নে কার্যকর ভূমিকা রাখার আহবান জানাচ্ছি। 

অনুষ্ঠানে ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আবদুল্লাহ মামুন বলেন, ১৯৭২ সালে এই বিভাগ যাত্রা শুরু করে। আমি দীর্ঘদিন এই বিভাগে অধ্যাপনা করেছি। দেশ বিদেশে এই বিভাগের শিক্ষার্থীরা অনেক অবদান রাখছে। আমরা এই বিভাগের শিক্ষার্থীদের সফলতা কামনা করছি। 

ইউজিসি এর সদস্য ও প্রাক্তন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আবু তাহের বলেন, এই বিভাগের ঋণ আমি কখনো ভুলবো না। বর্তমান শিক্ষার্থীদের প্রতি অনুরোধ, আপনাদের সততা ও নৈতিকতাকে প্রাধান্য দিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।  ভোগবাদী জীবনের চিন্তা করা যাবে না।

বিজিসি ট্রাস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ও ম্যানেজমেন্ট বিভাগের প্রাক্তন সভাপতি আধ্যপক ড. এ এফ.এম. আওরঙ্গজেব বলেন, ২৮ বছর আমি এই বিভাগে অধ্যাপনা করেছি। এই বিভাগের শিক্ষার্থীরা দেশ বিদেশে আজ প্রতিষ্ঠিত। এই বিভাগের শিক্ষার্থীরা বেকার থাকে না। আমরা এই বিভাগ থেকে নেতা ও নেতৃত্ব তৈরি করি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আনোয়ারুল আজিম আরিফ বলেন, ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থীরা দেশের বড় বড় প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। এই বিভাগ সূচনা থেকে তার প্রতিটি কার্যক্রমে সফল।   এই বিভাগের আরো উন্নতির জন্য প্রাক্তনদের বেশি বেশি কাজ করতে হবে। যাতে দেশ ও জাতির উন্নয়নে আরও অবদান রাখতে পারে। 

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন, রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. সেলিনা আখতার, ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অধ্যাপক ড. জাহেদ হোছাইন সিকদার, সাবেক অধ্যাপক এ এন আর এম বোরহান উদ্দিন, অধ্যাপক ড. আব্দুল আউয়াল খান, অধ্যাপক ড. ফয়সাল উদ্দিন, সাবেক ভিসি অধ্যাপক আবদুল মান্নান, ব্যবসায় অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. হেলাল উদ্দিন নিজামী।

আরএস

Link copied!