ঢাকা কলেজ প্রতিনিধি
মার্চ ১৯, ২০২৩, ০৪:০৩ পিএম
ঢাকা কলেজ প্রতিনিধি
মার্চ ১৯, ২০২৩, ০৪:০৩ পিএম
মানব শিশু ভূমিষ্ট হওয়ার পর থেকে হাঁটি-হাঁটি পা-পা করে বেড়ে উঠে । শৈশব থেকে কৈশোরে, কৈশোর থেকে যৌবনে আর যৌবন থেকে বার্ধক্যে প্রেরণ। যেটাকে বলা হয় স্বাভাবিক বৃদ্ধি মানুষের। বৃদ্ধিটা এমনই হয় সবার ক্ষেত্রে । কিন্তু হঠাৎ করেই যদি অঙ্কুরে বিনষ্ট হয়ে যায়! বন্ধ হয়ে যায় এই বৃদ্ধি, যদি দুচোখ বেয়ে অন্ধকার নেমে আসে। কখনো আর দেখতে পাবেন না এই সুন্দর পৃথিবীর অপরূপ প্রাকৃতিক লীলাভূমি। তাহলে কেমন হতো ?
বলছিলাম ঢাকা কলেজের অদম্য মেধাবী শিক্ষার্থী মেহেদী হাসানের কথা। এমনটাই হয়েছে তার সাথে। চোখে দেখতে না পারলেও এসএসসিতে ঢাকা বোর্ডে নবম স্থান অধিকার করেছেন দৃষ্টিজয়ী এই শিক্ষার্থী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আইন বিভাগে পড়াশোনা শেষ করে ভবিষ্যতে ব্যারিষ্টার হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন তিনি।
মেহেদী হাসানের বয়স সবেমাত্র ৭ তখনই হঠাৎ করে দেখা দেয় ডান চোখের ইনফেকশন। চোখের অপারেশনের জন্য ভর্তি করানো হয় পার্শ্ববর্তী উপজেলা উলিপুর মরিয়ম চক্ষু হাসপাতালে । চিকিৎসকরা সেখান থেকে সিরাজগঞ্জ চক্ষু হাসপাতালে রেফার করে ৷ এরপর চিকিৎসার জন্য গেলে অপারেশন করেন তাকে। ভুল চিকিৎসার কারণে বাম চোখেও ইনফেকশন হয়ে যায়। ফলে ২০১২ সালে সম্পূর্ণ দৃষ্টি হারান মেহেদী হাসান।
এরপর ঢাকা চক্ষু হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাকে ভারতের চেন্নাই চক্ষু হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য যেতে বলেন। ২৫ লক্ষ টাকা খরচ করলে আবার দৃষ্টি ফিরে পাবেন বলে আশা দেখিয়েছেন চিকিৎসকরা। গ্রামের হতদরিদ্র পরিবারের সন্তান মেহেদী হাসান। বাবা ট্রাক চালক আর মা গৃহীনি। যেখানে পড়াশোনা করার মতো খরচ বহন করার সক্ষমতা নেই মেহেদী হাসানের সেখানে ২৫ লক্ষ টাকা দিয়ে চিকিৎসা করানো কল্পনা করা যায় না।
ছোট বেলা থেকে তার পড়াশোনার প্রতি অনেক ঝোক তার একমাত্র স্বপ্ন ব্যারিষ্টার হওয়া কিন্তু নানা প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হয় তাকে যা পড়াশোনা বন্ধ হওয়ার উপক্রম প্রায়। । এসএসসি পর্যন্ত ব্রেইল পদ্ধতির বই সরকার ফ্রীতে দিলেও এইচএসসিতে টাকার অভাবে কেনা হচ্ছে না তার বই পুরাতন অডিও বই দিয়েই পড়াশোনা চালিয়ে যান তিনি । ক্লাসের সময় বিভিন্ন বিড়ম্বনার শিকার হতে হয় তাকে। শিক্ষক বোর্ডে লিখে দিলেও চোখে না দেখার কারনে খাতায় ওঠানো সম্ভব হয়ে ওঠে না তার। পরীক্ষার সময় শ্রুতি লেখকও তার অন্যতম বড় সমস্যা হয়ে দাড়িয়াছে। পরীক্ষার শেষে লেখককে সম্মানিও দিতে হয় নিজের পকেট থেকে। যার কারনে ব্যারিষ্টার হওয়ার স্বপ্নটাও এখন অনিশ্চিত প্রায় ।
বর্তমানে মেহেদী হাসান ঢাকা কলেজের মানবিক বিভাগের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী । থাকেন ঢাকা কলেজের আন্তর্জাতিক ছাত্রাবাসের ৩২১ নং কক্ষে। চলতি বছর ঢাকা কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিবেন তিনি। পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করে ঢাবিতে পড়ার স্বপ্ন তার।এরআগে মেহেদী হাসান ঢাকার খিলক্ষেত জানে আলম সরকার উচ্চ বিদ্যালয় থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে এসএসসি পাশ করে। ঢাকা বোর্ডে ট্যালেন্টপুলে বিত্তিসহ নবম স্থান অধিকার করেন।
মেহেদী হাসান জানান, যেহেতু আমি ৮ বছর বয়স পর্যন্ত চোখে দেখেছি আমি আবারো দেখতে চায়। উন্নত চিকিৎসার জন্য ভারতের চেন্নাই চিকিৎসা করাতে চায়। যেখানে আমার প্রয়োজন প্রায় ২৫ লক্ষ টাকা যা আমার মতো পরিবারের পক্ষে বহন করা সম্ভব নয়। জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশনে আমি যোগাযোগ করেছি তারা বলেছে তাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে আমার জন্য । সরকার বা বিত্তবানরা যদি এগিয়ে আসে তাহলে উন্নত চিকিৎসার মাধ্যমে চোখ ভালো হতে পারে। বাকিটা আল্লাহর ইচ্ছে । মেহেদীর মোবাইল নাম্বার: ০১৫২১৭০৫৬৪০।
মেহেদীর বাবা আক্কাস আলী বলেন, আমার ভিটেমাটি ছাড়া আর কোন সম্পদ নেই। মাত্র ৬ শতক জমির ওপরে আমার বাড়ি। আগে গাড়ি চালাতাম কিন্তু বয়স বৃদ্ধি পাওয়ায় এখন আর কেউ গাড়ি চালাতে দেয় না। উপার্জন করতে না পারায় বর্তমানে সংসার চালাতে হিমসিম খেতে হচ্ছে। চিকিৎসকরাও বলছে মেহেদীর চিকিৎসা করাতে ২২ থেকে ২৫ লক্ষ টাকা হলে তার দৃষ্টি ফিরে পেতে পারে। মেহেদীকে সাহায্য করার মতো আমাদের এলাকায় তেমন বিত্তবান মানুষ নেই বললেই চলে।
আরএস