নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি
জুন ১৯, ২০২৩, ০৬:২৯ পিএম
নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি
জুন ১৯, ২০২৩, ০৬:২৯ পিএম
গ্রীষ্মকালীন অবকাশ ও পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট চারটি আবাসিক হল ১৭ দিন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রভোস্ট কাউন্সিল।
গতকাল রবিবার (১৮ জুন) বিকেল থেকে এই বন্ধ শুরু হয়। প্রভোস্ট কাউন্সিলের অফিস আদেশে বলা হয়, এ দিন বিকেল ৪ টার মধ্যে আবাসিক হল ত্যাগ করার জন্য।
নির্ধারিত সময়ের আগে অধিকাংশ শিক্ষার্থীরা হল ত্যাগ করে চলে যান। হল ত্যাগ করার শেষ মুহূর্তে বঙ্গবন্ধু হলের অবশিষ্ট ছাত্ররা জড়ো হয়ে বন্ধ কমানোর দাবি জানিয়ে অবস্থান নেয়।ছাত্ররা জানায়, এর আগেও লিখিত ও মৌখিক ভাবে হলের প্রভোস্টকে হল বন্ধের সময়সীমা কমাতে আবেদন জানানো হয়েছিল।
এ সময় হল প্রভোস্টের কাছে সমাধান না পেয়ে অবস্থানরত শিক্ষার্থীরা দাবি নিয়ে প্রশাসনিক ভবনে যান উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখরের কাছে। প্রশাসনিক ভবনে উপাচার্যকে না পেয়ে উপাচার্যের মোবাইলে ফোন কল দিয়ে হলের ছুটি কমাতে অনুরোধ জানাতে থাকেন অবস্থানরত শিক্ষার্থীরা। ছাত্রদেরকে উপাচার্য বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন মেনেই ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। এক পর্যায়ে ছাত্ররা উপাচার্যের সাথে কিছুটা তর্কাতর্কি শুরু করে, উপাচার্যও পালটা জবাব দিতে থাকেন।
শিক্ষার্থীরা মুঠোফোনে উপাচার্যকে জানান, বন্ধের সময় না কমালে হল ত্যাগ করবেন না। তখন উপাচার্যকে বলতে শোনা যায়, "তোমরা যদি থাকো, যারা থাকবে তাদের নাম এনলিস্টেড হবে। এই হলের কোনো কিছু ক্ষতিগ্রস্ত হলে, তোমাদের পরিবারকে জানানো হবে এবং তোমাদেরকে ডেমারেজ দিতে হবে।আইন ভঙ্গের জন্য যা যা করণীয়, আমরা তাই করবো। তুমি যদি থাকতে চাও থাকো।" তখন শিক্ষার্থীদের বলতে শোনা যায়, স্যার আপনি কি আমাদের হুমকি দিচ্ছেন? এই কথার প্রতিউত্তরে উপাচার্যকে বলতে শোনা যায়, "না, কোনো হুমকি না।" উপাচার্যের সাথে শিক্ষার্থীদের কথোপকথনের একটি কল রেকর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক সমিতি প্রচার করে। যা পরবর্তীতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
৯ মিনিট ৪০ সেকেন্ডর কল রেকর্ডেটিতে উপাচার্যকে আরো বলতে শোনা যায়, "বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করতে কর্মকর্তা কর্মচারীর প্রয়োজন, আমার হাতে কোনো কর্মকর্তা কর্মচারী নেই।" কর্মকর্তা-কর্মচারী না থাকাকে শিক্ষার্থীরা প্রশাসনের ব্যার্থতা বলায় রেগে গিয়ে উপাচার্য বলেন, "কোনো ব্যার্থতা নেই। এ ধরনের লম্বা লম্বা কথা বলো না। ব্যর্থতার কোনো বক্তব্য নেই। ব্যার্থতা কি?" তখন শিক্ষার্থীরা উপাচার্যকে জানায়, হল বন্ধ কিন্তু ডরমেটরি খোলা এ কেমন নিয়ম স্যার? হল বন্ধ থাকলে ডরমেটরিও বন্ধ থাকতে হবে। উত্তরে উপাচার্যকে বলতে শোনা যায়, "কবে ছুটি আর কবে খোলা এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ক্যালেন্ডারেই আছে। এখানে কোনো ডরমেটরির বিষয় না, হলের ক্ষেত্রে হল কর্তৃপক্ষ আছে। হল কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তেই তোমাদের চলতে হবে।"
অবস্থানরত শিক্ষার্থী মমিন মিয়া জানান, প্রভোস্ট স্যার চাইলেই পারতেন হল খোলা রাখতে।ভিসি স্যার আর প্রভোস্ট স্যারের জন্যই দ্রুত হল বন্ধ হয়ে গেলো। আমরা যারা টিউশন করাই, অল্প কয়দিনের জন্য মেসে রুম নিতে হচ্ছে।এছাড়া অনেক চাকুরী পরীক্ষার্থীদের পড়াশোনা ক্ষতিগ্রস্ত হলো।
বঙ্গবন্ধু হলের প্রভোস্ট এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, অন্যান্য অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের সাথে এটাস্টেড প্রভোস্টদের একটি ফ্লাটও থাকে। হাউজ টিউটররা চাইলে অনেক সময় যেখানে অবস্থান করতে পারে পুরো হল তদারকির দায়িত্ব নিয়ে। আমাদের এখানে সে ধরনেরর কোনো ব্যবস্থাই নেই। যে বিষয়টা মাথায় আমাদের পরবর্তী দুটি হল তৈরি হচ্ছে।
এ বিষয়ে উপাচার্য গণমাধ্যমকে জানান, আমার ক্যাম্পাসের ৮ হাজার শিক্ষার্থীর মধ্যে ২০/২৫ জন শিক্ষার্থী আসছিল প্রশাসনিক ভবনে হল খোলা রাখার অযৌক্তিক দাবি নিয়ে। যাদের একটা অংশ হলে থাকেও না। ৫ মিনিটের দূরত্বে যাদের বাসা, কারা কারা এটাতে ছিল সেটাও আমি জানি। ক্যাম্পাস এবং হল তার নিজস্ব নিয়ম এবং সিডিউল অনুযায়ী চলবে। একাডেমিক ক্যালেণ্ডার দিয়ে দেওয়া হয়েছে বছরের শুরুতেই। হল বন্ধের ব্যাপারটা পূর্ব নির্ধারিত, উপাচার্য চাইলেও নিয়ম বহির্ভূত হয়ে তার বাইরে কিছু করতে পারবে না। শিক্ষার্থীদের এ রকম অযৌক্তিক দাবি মানার কোনো সুযোগ নেই।
হল বন্ধ হবে ডরমিটরি খোলা কেন মোবাইল ফোনে ছাত্রদের চাওয়া এমন প্রশ্নের জবাবে গণমাধ্যমকে উপাচার্য আরও জানান, ডরমিটরির চাবি শিক্ষকদের দিয়ে দেওয়ার পর তার দায় আর কারোর নেই। একমাত্র সেই শিক্ষক বা কর্মকর্তার। সে চাইলে থাকবে, না থাকলে নেই। তার জবাবদিহিতা প্রশাসন দিবে না। কিন্তু হল খোলা থাকলে বা রাখলে তার প্রত্যেকটি শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে প্রত্যকটি জিনিসের জবাবদিহিতা প্রশাসনকে করতে হবে। দায় রেখে নিয়ম ভঙ্গ করে এত বড় ঝুঁকি প্রশাসন নিতে পারবে না।
আরএস